ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সংস্করণ হলো টেস্ট। একটা সময় ছিল যখন সাদা পোশাকের ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকতেন খেলোয়াড়রা। তবে সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে এ ফরম্যাটটি জৌলুস হারাতে বসেছে। আধুনিক সময়ে ক্রিকেটের নতুন নতুন সংস্করণের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে লাল বলের ক্রিকেটের সৌন্দর্য্য।
১৮৭৭ সালের ১৩ মার্চ, মেলবোর্নে লাল বলের ক্রিকেট খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। যেটি ছিল টেস্ট ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এ ম্যাচে ৪৫ রানে জয় পায় অজিরা।
সে গল্প যাই হোক, ভালো কিছুর স্বপ্ন থাকলেও ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা সবাই রাঙাতে পারে না। তবে বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক খেলোয়াড় রয়েছেন যারা নিজের অভিষেকটা রাঙিয়েছেন আপন রঙে, সূচনা করেছেন নতুন গল্পের।
ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য আজকের আয়োজনে সাদা পোশাকের (টেস্ট) খেলায় অভিষেকেই ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ানো ক্রিকেটারদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন আশরাফুল ইসলাম আকাশ।
লরেন্স রো: ১৯৭১ সালে উইন্ডিজে সফর করে নিউজিল্যান্ড। এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি কিংস্টনে চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হয় কিউইরা। এ ম্যাচে ক্যারিবীয়দের মূল একাদশে সুযোগ পান লরেন্স রো।
টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই নিজের জাত চেনান লরেন্স। কিউইদের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি। তবে ডাবল টনের ইনিংসটি লম্বা করতে পারেননি। ২১৪ রানে সাজঘরে ফেরেন এ ক্রিকেটার। অবশ্য একই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও অপরাজিত শতরান করেন এ ক্যারিবীয় ব্যাটার।
টিপ ফস্টার: উনিশ শতকের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়াতে যায় ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ড। ১৯০৩ সালের ১১ ডিসেম্বর সিডনিতে মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। এ ম্যাচে ইংলিশ শিবিরে অভিষেক হয় টিপ ফস্টারের।
স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ে নেমেই ঝোড়ো শুরু করেন টিপ ফস্টার। এ ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই ২৮৭ রান করেন তিনি। এতে ২৯২ রানের বিশাল লিড পায় সফরকারী ইংল্যান্ড।
ইয়াসির হামিদ: ২০০৩ সালে সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় বাংলাদেশ। এ সিরিজে দ্য গ্রিন ম্যানদের ডেরায় অভিষেক হয় ইয়াসির হামিদের। জাতীয় দলের জার্সিতে সুযোগ পেয়েই অভিষেক রাঙান এ ডানহাতি ব্যাটার।
টাইগারদের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ২৫৩ বলে ৬৭.১৯ স্ট্রাইক রেটে ১৭০ রান করেন ইয়াসির। এরপর ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেও আরেকটি শতক তুলে নেন তিনি। এ ম্যাচে ২৮২ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন হামিদ।
কাইল মেয়ার্স: ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা পায় উইন্ডিজ। পরে অবশ্য সাদা পোশাকের খেলায় পাল্টা প্রতিশোধ নেয় ক্যারিবীয়রা। ওয়ানডেতে শোচনীয়ভাবে হারলেও টেস্টে ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায় ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের দল।
বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে উইন্ডিজ শিবিরে অভিষেক হয় কাইল মেয়ার্সের। এ ম্যাচে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪০ রানেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে খোলস থেকে বেরিয়ে অপরাজিত ২১০ রান করে ক্যারিবীয়দের জয় এনে দেন তিনি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচের দুই ইনিংসেই যথাক্রমে ৫ ও ৬ রানে আউট হয়ে যান মেয়ার্স।
ডেভন কনওয়ে: জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায় হলেও নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন ডেভন কনওয়ে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ইংল্যান্ড সফরে কিউইদের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। এরপরের ঘটনা সবারই জানা।
২০২১ সালের ২ জুন, ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কিউইদের হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে টম ল্যাথামের সঙ্গী হয়ে বাইশ গজে আসেন অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ে। এ ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে কিউইরা। কিন্তু ব্যাটিংয়ের হাল ধরে শেষ উইকেটে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। এরপর রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কনওয়ে। পরের ইনিংসে মাত্র ২৩ রান করেই আউট হন এ বাঁহাতি ব্যাটার।
তবে কিউইদের জয়ের দিনে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন কনওয়েই।