সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দেবে ইইউ

সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দেবে ইইউ

জাতীয় স্লাইড

জুলাই ১০, ২০২৩ ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বিভিন্ন দেশ। কিন্তু কোনো কোনো দেশ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে তা বলতে চায় না। সরকারের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে গোপনে তাদের অভিপ্রায় জানাতে চায়। আবার অনেক দেশ তা প্রকাশ্যে বলার পক্ষপাতী। প্রকাশ্যে যারা বলতে চান, তাদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

রোববার ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সফররত ইইউ নির্বাচনি অনুসন্ধানী মিশন প্রথম দিনে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত বৈঠকের আয়োজন করেন। অত্যন্ত গোপনীয় এ বৈঠকে ইইউভুক্ত দেশগুলো এবং তার বাইরের সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান সংবলিত একটি বিবৃতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ঢাকায় ইইউ-এর পক্ষ থেকে আগেও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রতিনিধিদল আসার আগেও ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ ১২ জন রাষ্ট্রদূতকে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সূত্রটি আরও জানায়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করে সব দেশই। কিন্তু কোনো কোনো দেশ এ বিষয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যৌথভাবে বিবৃতি দিতে নারাজ। ওইসব দেশ সরকারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় নিজেদের অভিপ্রায় প্রকাশ করতে চায়। তারা মনে করে, প্রকাশ্যে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচন কামনা করে বিবৃতি দিলে সরকার এটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বিবেচনা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে দেশগুলোর নিবিড় সম্পর্ক থাকলেও তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। তারা কোনো বিবৃতি দিয়ে তাদের বিদ্যমান সহযোগিতার ওপর নেতিবাচক ছায়া ফেলতে চান না। তবে কোনো কোনো দেশ এ ব্যাপারে বিবৃতিতে সই করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। ফলে ইইউ অনুসন্ধানী দলের সফর শেষে এমন বিবৃতি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের অবস্থা সরেজমিন যাচাই করার লক্ষ্যে ইইউ নির্বাচনি অনুসন্ধানী মিশন রোববার কাজ শুরু করেছে। দুই সপ্তাহের জন্য আসা ছয় সদস্য প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ইতালির নাগরিক সেলেরি রিকোর্ডো। নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে আসা প্রতিনিধিদলটি সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবে। তারা প্রধানত দুটি বিষয়ে অধিক মনোযোগ দেবেন-এক. রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, দুই. নির্বাচনি কাঠামো পর্যালোচনা। ২৩ জুলাই তারা ঢাকা ত্যাগ করবেন। তাদের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে ইইউ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস সুবিধাপ্রাপ্তি সুগম হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশ ইইউ মার্কেটে অস্ত্র ছাড়া অবশিষ্ট সব পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। ফলে গ্রেস পিরিয়ড হিসাবে ২০২৯ সালে শুল্কমুক্ত সুবিধা শেষ হয়ে গেলে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা করেছে। তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এ লক্ষ্যে ১২ জুলাই সরকার পতনের একদফার আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি। অপরদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে যেতে নারাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দেবেন। বিএনপির আন্দোলন রাজপথে মোকাবিলা করতেও বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ। এই পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করা যায় কি না জানতে চাইলে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, রাজনৈতিক দল যে কোনো সময় তাদের অবস্থান পালটাতে পারে। এছাড়াও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছে। বাংলাদেশের নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। প্রতিনিধিদলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির এশিয়া ব্যুরোর ডিপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলি কৌর রয়েছেন। প্রতিনিধিদলটি বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *