সত্য গল্প, ডেটিং অ্যাপে প্রেমের করুণ পরিণতি

সত্য গল্প, ডেটিং অ্যাপে প্রেমের করুণ পরিণতি

ফিচার স্পেশাল

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

যেকোন মানুষ অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে একটি সম্পর্ক শুরু করে। এই মেয়েটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। মেয়েটির নাম মালা (ছদ্মনাম)। জানা যাক তার জীবনের সেই গল্প।

মালা বলেন, ‘২০১৯ সালে আমি একজনের প্রেমে পড়ি। ডেটিং অ্যাপে আমাদের আলাপ হয়। ও কুকুর ভালোবাসত খুব। সেই জন্যই আমার ওকে ভালো লাগে। আমারও কুকুর ভালো লাগে। আমার বাড়িতে পোষ্য আছে। প্রথম প্রথম খুব অল্প বিষয়েই আমাদের কথা হত। পোষ্যদের নিয়েই কথা হতো বেশি। ওকে আমার সৎ মনে হয়েছিল। ওর ছবি দেখে ভালো লেগেছিল আমার। তারপর যা হল, তা আজ লিখে পাঠালাম। কারণ, আমার গল্প পড়ে অনেকেই সতর্ক হতে পারেন বলে আমার মনে হয়। এরপর আমাদের মধ্যে কথা বাড়তে থাকে। প্রতিদিন কথা হতে শুরু করে। একবার একটি পেট ইভেন্টে যাই আমরা একসঙ্গে। আমার পোষ্যের সঙ্গে ওর খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ওর সঙ্গে আমার পোষ্য কুকুরটি খুব আনন্দে সময় কাটিয়েছিল। দুই সপ্তাহ পর আমরা আবার দেখা করার পরিকল্পনা করি। ওকে দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছিল। কারণ, ও সুপুরুষ ছিল। ব্যক্তিত্বও আমায় খুব আকর্ষণ করেছিল। আমরা অনেক কথা বলেছিলাম সেদিন। এরপর আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়। প্রায়ই দেখা করতে শুরু করি। ওকে না দেখলে আমার মন খারাপ করত। কিছুই যেন ভালো লাগত না। আমার এরপর প্রায় প্রতিদিনই দেখা করতে শুরু করি। আমাদের মধ্যে অনেক মিল ছিল। আমরা একে অপরের সঙ্গ খুব পছন্দ করতাম। আমি বুঝতে পারছিলাম যে, আমি ওর প্রেমে পড়ছি। সেও আমায় পছন্দ করত বলেই মনে হয়েছিল। এক মাস, দুই মাস কেটে গেল। আমরা ডেটেও যেতাম। এরপর আমাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও গাঢ় হতে শুরু করে। ওকে প্রথমবার চুমু খাওয়ার স্মৃতি এখনো আমার মনে আছে। খুব জাদুময় ছিল সেই মুহূর্তটি। আমরা আমাদের পরিবার নিয়েও কথা বলতাম। সব কিছুই ঠিক চলছিল। আমার জীবনটা কয়েকদিনেই যেন বদলে গিয়েছিল। রপকথার মতো মনে হত সব কিছু। ও ভালো চাকরি করত। আমিও চাকরিজীবনে খুশি ছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার এতদিনের দেখা স্বপ্নটাই সত্যি হয়েছে। মাঝেমধ্যে নিজেকে চিমটি কেটে দেখতাম। আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি না তো!

এভাবেই এক বছর কেটে যায়। ২০২০ সালে আমি এমন জিনিস দেখি, আমার পায়ের তলায় মাটি যেন দুই ভাগ হয়ে যায়। হঠাৎ করেই ওর ফোনে একটা নোটিফিকেশন আমার চোখে পড়ে। একজন নারীর থেকে সেই মেসেজটি এসেছিল।

লেখাছিল, ‘আমি পরের সপ্তাহের জন্য টিকিট কাটছি। আমি তোমায় দেখতে চাই। বাচ্চারাও তোমায় খুব মিস করছে।’আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

আমি ওর ফোন নামিয়ে রাখি। অফিসে চলে যাই। ঐ নারীর নাম সোশ্যাল মিডিয়ায় সার্চ করি। ওর ছবি দেখি। তিনি যে আমার প্রেমিকের স্ত্রী, তা বুঝতে বাকি ছিল না। ছবি দেখে সব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আসলে আমার প্রেমিক আমাদের দুজনকেই ঠকাচ্ছিল। আমাকেও আর নিজের স্ত্রীকেও।

আমার আর কিছু ভালো লাগছিল না। আমি তাড়াতাড়ি করে বাড়ি ফিরে আসি। চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। আমার পোষ্য লিজি খুব অবাক হয়ে আমায় দেখছিল। আমার পাশে চুপ করে এসে বসল। আমার নিজের উপরেও খুব রাগ হল। কয়েকদিন আমি একদম চুপ করে অপেক্ষা করলাম। সে আমাকে জানাল, ও বাবা-মায়ের কাছে যাচ্ছে পরের সপ্তাহে। আমি শান্ত ছিলাম। আমি জানতাম, ও ওর স্ত্রী এবং সন্তানরা দেখা করতে আসছেন। ওর স্ত্রী আসার পরেই আমি ওর বাড়ি গেলাম। ওর চোখে-মুখে ভয় দেখলাম। ওর স্ত্রীও খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আমাদের দিকে। হঠাৎ কাঁদতে শুরু করে। আমি চুপচাপ সেখান থেকে চলে আসি। কোনো খারাপ ব্যবহার করিনি। কাউকে অসম্মান করিনি। নিজেও অসম্মানিত হইনি।’

সূত্র: এই সময়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *