শুধু মানুষই নয়, যে গ্রামের পশুপাখিও অন্ধ

শুধু মানুষই নয়, যে গ্রামের পশুপাখিও অন্ধ

ফিচার স্পেশাল

জুলাই ১৮, ২০২৩ ১২:০৮ অপরাহ্ণ

গ্রামের নাম ‘টিলটেপেক’। মেক্সিকোর খুবই প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই গ্রামকে বিশ্ববাসী চেনে একটি রহস্যময় কারণে। এ গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে গবাদি পশু, বন্য প্রাণী অর্থাৎ, এই গ্রামে বসবাসকারী প্রতিটি জীবন্ত প্রাণী চোখে দেখতে পায় না। তাই তো মেক্সিকোর এই গ্রামের অপর নাম ‘ভিলেজ অফ ব্লাইন্ড’ বা ‘অন্ধদের গ্রাম’।

মেক্সিকোর গভীর অরণ্যে থাকা ছোট্ট এই গ্রামে ‘জাপোটেক’ প্রজাতির বাস। ৩০০ এর বেশি জাপোটেক পরিবার এই গ্রামে বাস করেন। সভ্যতা ও উন্নয়ন থেকে বহু ক্রোশ দূরে। টিলটেপেকের কোনো মানুষই দেখতে পান না। এমনকি গবাদি পশু, বন্য প্রাণীরাও অন্ধ!

টিলটেপেক গ্রামে প্রায় ৭০টি কুঁড়েঘর রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনো ঘরেই দরজা-জানালা নেই। এই এলাকার বাসিন্দাদের মতে, এই গ্রামে পাখি উড়ে না। তাদের দাবি, এই গ্রামের উপর দিয়ে ওড়ার সময় তারা অন্ধ হয়ে যায় এবং বড় বড় গাছে গিয়ে ধাক্কা মেরে সেখানেই মারা যায়।

গ্রামের বাসিন্দাদের বিশ্বাস, একটি অভিশপ্ত গাছের কারণেই এই গ্রামের সব প্রাণী অন্ধ। এই গ্রামে জন্ম নেওয়া সব শিশুই প্রাথমিক ভাবে আর পাঁচটা শিশুর মতো সুস্থ ও সবল হয়। কিন্তু কালের নিয়মে অদ্ভুত ভাবে এক সপ্তাহের মধ্যেই তারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে।

স্থানীয়দের মতে, টিলটেপেকের বাসিন্দাদের অন্ধ হওয়ার কারণ ‘লাভজুয়েলা’ নামের একটি গাছ। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত এই গাছের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। তবে স্থানীয়দের দাবি, ওই গাছ গ্রামের মধ্যেই রয়েছে। সেই গাছের অভিশাপেই নাকি গ্রামবাসীদের এই অবস্থা।

টিলটেপেক গ্রামের বাসিন্দাদের অন্ধ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’ নামের এক বিষাক্ত মাছি

টিলটেপেক গ্রামের বাসিন্দাদের অন্ধ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’ নামের এক বিষাক্ত মাছি

এই গ্রামের অবস্থা কেন এমন তা নিয়ে শুরু গবেষণা শুরু করেছিল মেক্সিকোর স্থানীয় প্রশাসন এবং বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা, টিলটেপেক গ্রামের বাসিন্দাদের অন্ধ হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে ‘ব্ল্যাক ফ্লাই’ নামের এক বিষাক্ত মাছি। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, মেক্সিকোর ওই ঘন জঙ্গলে প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক ফ্লাই মাছি রয়েছে। যা প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায় টিলটেপেক গ্রামেও। এই বিষাক্ত মাছির কামড়ে সারা শরীরে জীবাণু ছড়ায়। জীবাণুর অভিঘাত এতটাই বেশি যে, এর সরাসরি প্রভাব পড়ে চোখের স্নায়ুর ওপর। তবে এর বিপক্ষ মতও রয়েছে। আর সেই কারণেই এই গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ এবং পশুপাখি ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকে।

মেক্সিকোর সরকার যখন প্রথম টিলটেপেকের সম্পর্কে জানতে পারে, তখন এই গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রামবাসীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে যান। বেশ কয়েক জন মারাও যান। এরপর তাদের আবার টিলটেপেকে ফিরিয়ে দিয়ে আসা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *