দেশের দরিদ্রের প্রকৃত তথ্য মিলবে মার্চে

দেশের দরিদ্রের প্রকৃত তথ্য মিলবে মার্চে

জাতীয় স্লাইড

ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে মিলছে দারিদ্র্য হারের প্রকৃত চিত্রসহ দেশের আর্থ-সামাজিক খাতের অনেক হালনাগাদ তথ্য। দীর্ঘ ৬ বছর পর আগামী মার্চ মাসের শেষদিকে মিলবে ‘খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০২২’-এর কি ফাইন্ডিং। এছাড়া এপ্রিলে দেওয়া হবে প্রাথমিক প্রতিবেদন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশ পাবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন।

এই জরিপের মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হচ্ছে আজ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এবারের তথ্য সংগ্রহের কাজে আনা হয়েছে ব্যাপক সংস্কার। যুক্ত করা হয়েছে নতুন নতুন পদ্ধতি। এতে মাঠের তথ্য আর বাস্তবতার মধ্যে খুব বেশি ফারাক থাকবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন বৃহস্পতিবার মাঠের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম দেখতে গিয়ে এসব বিষয় জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, আমরা আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি এবার যেসব তথ্য উঠে আসবে সেগুলো অনেক বেশি সঠিক ও বাস্তবতার কাছাকাছি থাকবে। তিনি জানান, আগামী মার্চের মধ্যেই বেশ কিছু হালনাগাদ তথ্য দিতে পারব।

এই তথ্যগুলো খুবই জরুরি। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর দেশের দরিদ্র পরিস্থিতি কী অবস্থায় আছে সেটি উঠে আসবে এই জরিপে। সঙ্গে থাকবে নানা তথ্যও। সরেজিমন নরায়াণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বীরহাটাব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তথ্য সংগ্রহকারীরা তথ্য সংগ্রহ করছেন।

এ সময় কথা হয় সংগ্রহকারী সাইফুল ইসলাম, ডালিয়া, এনামুল হক ও ফাতেমার সঙ্গে। তারা জানান, পূর্বনির্ধারিত একেকটি বাড়ি তারা বছরে ২০ দিন করে এসেছেন তথ্য সংগ্রহের জন্য।

১২৫ পৃষ্ঠার একটি প্রশ্নপত্রে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন। যেসব সেকশনে তারা তথ্য নিয়েছেন সেগুলো হলো, খানার বা পরিবারের তথ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং বেতন ও মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানের অবস্থা। আরও আছে অকৃষি প্রতিষ্ঠান, গৃহসংক্রান্ত তথ্য, কৃষি, অন্য সম্পদ ও আয়, ভোগকৃত খাদ্যদ্রব্য, খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য ও সেবা।

এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য। তথ্যদাতা মোহাম্মদ আলী বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীরা একদিন পরপর আমার বাড়িতে এসেছেন। আমি যেসব তথ্য দিতে পারিনি তারা সেজন্য আমার ছেলে ও মেয়ের (যারা ঢাকায় থাকেন) মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তথ্য নিয়েছেন।

সার্ভে পরিচালনাকারী হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে-২০২০-২১ প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, জরিপের গুণগত মান বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গত ২০১৬ সালে পরিচালিত জরিপে ক্যাফে বা কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড ফিল্ড ইন্টারি পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছিল। এবার সেটি পরিবর্তন করে ক্যাপি বা কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইন্টারভিউয়িং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

এতে সরাসরি তথ্য সংগ্রহকারীদের তথ্য ল্যাপটপের মাধ্যমে এন্ট্রি করা হয়েছে। মানুষ যেসব খাদ্য খায় তার ওজন সঠিকভাবে নিতে প্রথমবারের মতো তথ্য সংগ্রহকারীদের ওয়েট স্কেল বা ওজন মাপার মেশিন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবারের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য এবং সেবার তালিকা সঠিকভাবে লিখে রাখতে প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি করে ডায়েরি দেওয়া হয়েছে। ভোগ করা খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য এবং সেবার তালিকা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে।

পাশাপাশি ২০১৬ সালের জরিপে হিসাব নেওয়া খাদ্যদ্রব্যের সংখ্যা ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ২৬৫টি করা হয়েছে। খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্য ও সবার সংখ্যা ২১৬ থেকে বাড়িয়ে ৪৪১টি করা হয়েছে। এসডিজির প্রয়োজনে স্বাস্থ্য, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ও ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর টিকার তথ্য এবং পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা সংবলিত নতুন সেকশন যোগ করা হয়েছে প্রশ্নপত্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *