ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান শুরুর পর থেকেই পুতিনের ভবিষ্যত নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে তুমুল আলোচনা চলছে। এরমধ্যে সেই আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে পুতিনের অসুস্থতার খবর। মে মাসের শেষ দিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের বিস্তৃত পর্যবেক্ষণে জানায়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তিনি গুরুতর অসুস্থ। খবর নিউজ উইক।
যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি পৃথক গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকা নিয়ে পুতিনের ‘উন্মত্ততা’ ক্রমাগত বাড়ছে। তার ক্ষমতালিপ্সার মনোভাব ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে জটিল ও অনিশ্চিত দিকে নিয়ে যেতে পারে।
সরাসরি প্রতিবেদনটি পড়ার সুযোগ পাওয়া এক সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, ক্ষমতায় পুতিনের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী। কিন্তু এখন আর ‘একচেটিয়া’ না। অনেকেই মনে করছে, পুতিনের দিন ‘ঘনিয়ে এসেছে’। তার প্রবল ক্ষমতা সমাপ্তির খুব সন্নিকটে।
ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যা জানি তা ভাসা ভাসা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের সেরা গোয়েন্দা সূত্র খুব কাজে লাগছে না। বিদেশি নেতাদের সঙ্গে পুতিন খুব কম বৈঠক করেছেন। তার বিচ্ছিন্নতার কারণে বিভিন্ন জল্পনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্হাগুলোর সংকলিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রুশ প্রেসিডেন্ট ভীষণ অসুস্হ। তার অসুস্থতার গুঞ্জন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে বেশ কয়েক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘গুরুতর অসুস্থ’ বলে দাবি করেছেন সাবেক এক ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তবে এ দাবির পক্ষে শক্ত কোনো প্রমাণ দেননি তিনি। সাবেক এ গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম ক্রিস্টোফার স্টিলি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার তথাকথিত হস্তক্ষেপ নিয়ে নথি লিখেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি স্কাই নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টোফার স্টিলি বলেন, এটি নিশ্চিত না তার আসলে কী রোগ হয়েছে। এটা কি আরোগ্য যোগ্য অথবা গুরুতর নাকি অন্য কিছু। স্টিলি আরও বলেন, রাশিয়া ও অন্যান্য সূত্র থেকে আমরা যা শুনছি তাতে এটা নিশ্চিত যে পুতিন বেশ ভালো মতোই অসুস্থ।
এদিকে পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে ওই ধনকুবেরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পুতিন গুরুতর অসুস্থ।
মার্কিন ম্যাগাজিন নিউজ লাইনস জানিয়েছে, সেই অডিওতে একজন পশ্চিমা ব্যবসায়ীর কাছে রুশ ধনকুবের বলেন, বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার আগ মুহূর্তে পুতিনের ব্লাড ক্যানসারের একটি অপারেশন হয়েছে।
সেই ধনকুবেরকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমি পুতিনের মরণ প্রত্যাশা করি। যে রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। ইউক্রেনের অর্থনীতি ও অন্য অর্থনীতি সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। সমস্যা হলো তার মাথা নিয়ে। একজন উন্মাদ পুরো বিশ্বকে টালমাটাল করে দিতে পারে।’
এর আগে সম্প্রতি নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, পুতিন সম্ভবত ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করতে যাচ্ছেন। এ জন্য সাময়িকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এমনকি এটাও দাবি করা হয়, নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই প্যাটরুশেভের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন পুতিন।
ভ্লাদিমির পুতিনের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে ক্রমবর্ধমান জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই এমন খবর প্রকাশ পেল। যদিও রোববার (২৯ মে) রুশ প্রেসিডেন্টের অসুস্থ হওয়ার খবর অস্বীকার করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। পুতিন পুরোপুরি সুস্থ আছেন বলে দাবি তার।
তবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সব ‘গুজব’ অস্বীকার করে বলেছেন, আমি মনে করি না যে বিবেকবান কোনো ব্যক্তি এসব খবর বিশ্বাস করবেন। আগামী অক্টোবরে ৭০ বছরে পা রাখা পুতিন ‘প্রতিদিন’ জনসমক্ষে উপস্থিত হন, গুরুতর কোনো অসুস্থতা থাকলে যা কোনোভাবেই সম্ভব না।