পতনের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য

পতনের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য

আন্তর্জাতিক

মে ৯, ২০২৪ ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে অবস্থিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে সম্প্রতি একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করে জান্তার শতাধিক সৈনিককে আটক করেছে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

গত নভেম্বরে তিন বিদ্রোহী বাহিনীর হামলা শুরুর পর থেকে রাখাইনে সংঘর্ষের মুখে পড়ছে নিরাপত্তা বাহিনী। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জান্তা বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে আরাকান আর্মির সঙ্গে তাদের যুদ্ধবিরতি ছিল। কিন্তু নভেম্বর থেকে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়।

সামরিক বাহিনী এখনও রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ের দখলে আছে। তবে এএ যোদ্ধারা ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে ঘাঁটিসহ আশেপাশের জেলার নানা অঞ্চল দখল করেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গোষ্ঠীটি সিত্তওয়ের প্রায় ৯০ কিলোমিটার উত্তরে বুথিডাং শহরের কাছে ‘মিলিটারি অপারেশন কমান্ড ১৫’ দখল করেছে আরাকান আর্মি।

তবে কখন ও কীভাবে এটি দখলে এলো তা বিস্তারিত জানানো হয়নি।

স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, কয়েক দিন ধরে সেখানে লড়াই চলছিল। সেখানে চূড়ান্ত হামলা শুরুর পর জান্তা সেনারা পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।

এর আগে সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে দেশটির সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিপির একটি বড় ঘাঁটি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। শুক্রবার মংডু শহরতলিতে বিজিপির সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। শহরটিতেও ঢুকে পড়েছেন আরাকান আর্মির সদস্যরা।

আরাকান আর্মির সদস্যরা বৃহস্পতিবার বিজিপির কিয়ে কান পিন বর্ডার গার্ড পুলিশ সদর দপ্তরে আক্রমণ করেন। মিয়ানমার সরকারের পুলিশ ও সেনাসদস্যরা তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। কিন্তু হামলার মুখে টিকতে না পেরে একপর্যায়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

কিয়ে কান পিন গ্রামটি মংডুর ১২ কিলোমিটার উত্তরে। সেখানকার ঘাঁটিটি আরাকান আর্মির হাতে পতন হওয়ার আগে জান্তা সরকার হেলিকপ্টারে করে কমান্ডারদের উদ্ধার করে। অবশ্য মংডু শহরের পূর্ব দিকের দুটি তল্লাশিচৌকি এখনো জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

রাখাইনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অন্তত ৫০ সেনা আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের অল্প সময়ের মধ্যেই মিয়ানমারের জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে সে সময় থেকেই গড়ে উঠতে থাকে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।

দশকের পর দশক ধরে সামরিক বাহিনীর জবর-দখলের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে আরকান আর্মিসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে তাদের এই লড়াই নতুন গতি পেয়েছে ২০২২-২৩ সাল থেকে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো হলো- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এভাবে যুদ্ধ চললে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাখাইন রাজ্যের পতাকা চলে যাবে আরাকান বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *