সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার

সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার

জাতীয় স্লাইড

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩ ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মোটরসাইকেল। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বেশি। সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

খসড়া নীতিমালায়, ঢাকাসহ শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। মহাসড়কে ১২৫ এর কম সিসির (ইঞ্জিনক্ষমতা) মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। পাশাপাশি পেছনে আরোহী নিয়ে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। আর রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেলের চালকের পোশাক ও হেলমেটের রং নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে এ নীতিমালায়। সংশি্লষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের ৯ সদস্যের একটি কমিটি। এ কমিটির প্রধান হচ্ছেন এ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আনিসুর রহমান। কমিটিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকেৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমরা একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছি। ওই নীতিমালা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক হবে। যেহেতু এটি নীতি-নির্ধারণী কিছু বিষয় রয়েছে তাই তাদের মতামত নিয়ে মন্ত্রণালয় তা চূড়ান্ত করবে।

নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে করেন বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সহকারি অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ। একইসঙ্গে নীতিমালা বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে প্রণীত ১১১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নে নিয়োজিত টাস্কফোর্সের সভায় এ নীতিমালা করার বিষয়ে আলোচনা হয়। নীতিমালা হচ্ছে এটা ভালো দিক। তবে প্রয়োগও হতে হবে।

তিনি বলেন, শহরে একটি মোটরসাইকেলের গতি ৩০ কিলোমিটার রয়েছে কী না- তা পরীক্ষা করতে হলে পুলিশের হাতে স্পিডগান থাকতে হবে। মহাসড়কে নিয়মিত চেক দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ি, বিদায়ী ২০২২ সালে দেশে ছয় হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত ও ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছে। ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং প্রাণহানি ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ২৮.৫৯ শতাংশের সঙ্গে মোটরসাইকেল সম্পৃক্ত। বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ি, দেশে নিবন্ধিত যানবাহন ৫৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৫৮টি, যার মধ্যে মোটরসাইকেল ৪০ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৯টি।

জানা গেছে, সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে মোটরসাইকেল চলাচলে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া এ নীতিমালায়। বিদ্যমান কয়েকটি আইন, বিধি ও নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রস্তাব করা হয়েছে, ঈদ বা দুর্গাপূজার মতো উত্সব বা পার্বণকালীন সময়ে ১০ দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলতে পারবে না।

যেকোনো সড়কে গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোটরসাইকেলের আরোহী হিসেবে নেওয়া যাবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কোনো ব্যক্তির কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আর নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার আগে ক্রেতার কাছে মোটরসাইকেল হস্তান্তর করা যাবে না। অর্থাৎ, ক্রেতার হাতে মোটরসাইকেল যাওয়ার আগেই লাইসেন্স নিশ্চিত করতে হবে।

মোটরসাইকেলের পরিবেশক, আমদানিকারক, উত্পাদনকারী ও প্রতিনিধিদের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে নিবন্ধন করে ক্রেতার কাছে মোটরসাইকেল হস্তান্তরের সময় বিএসটিআই অনুমোদিত মানের দুটি হেলমেট সরবরাহ করতে হবে। এছাড়া লাইসেন্সধারী ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির নামে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন প্রদান ও মালিকানা বদল করা যাবে না।
নীতিমালায় দুর্ঘটনাপ্রবণ মোটরসাইকেল চলাচল ও বিক্রিতে নিরুত্সাহিত করা হয়েছে।

মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা কমাতে উত্পাদনকারী, সংযোজনকারী, আমিদানিকারকসহ সংশি্লষ্ট ব্যক্তিদের কিছু দায়দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে খসড়া নীতিমালায়। যেমন বিক্রির আগে মোটরসাইকেল চালানো ও প্রাথমিক চিকিত্সা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *