নিজ হাতে কুরআন শরীফ লিখছেন কুবির এই ক্যালিওগ্রাফার

ধর্ম

অক্টোবর ১৯, ২০২৩ ১০:১৪ অপরাহ্ণ

কুবি প্রতিনিধি,

লিখা নিয়ে মানুষের আগ্রহ আদি কাল থেকেই। মানুষ প্রথম যখন বলতে শিখেছিলো, তখন থেকেই তার মনের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য গুহায় কিংবা গাছের পাতায় সংকেত আকারে লিখে রাখতো। এসব সংকেত পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হরফে রূপ নেয়। মানুষও এই অক্ষরগুলো দিয়ে নিজের মনের ভাষা লিখতে শুরু করে।

বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে অক্ষরকে হয়তো টাইপরাইটারে বন্দী করা গেছে। কিন্তু একদল মানুষ আছেন, যারা কলমের ছোঁয়ার একেকটি অক্ষরকে জীবন্ত করে তুলতে পারেন। বলছিলাম ক্যালিওগ্রাফির কথা। একে লিভিং আর্ট বা জীবন্ত শিল্পকলা হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়।
আজকের যে ক্যালিওগ্রাফি তার সূত্রপাত ও বিকাশ লাভ করে আরবি লিপির হাত ধরে। পরবর্তীতে নবী মুহাম্মদের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর আরব-অনারব সব মুসলমানের কাছেই আরবি ক্যালিওগ্রাফি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাদের কাছে এই শিল্প ইসলামী ক্যালিওগ্রাফি নামেই পরিচিত। কোরআনের লিপিগুলোর অদ্ভুত এক প্রলেপন হয়ে আছে এ শিল্পে।

আরবি ক্যালিওগ্রাফির নান্দনিকতার সঙ্গে বাঙালী মুসলমানদের সখ্যও অনেক পুরনো। মুঘল আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে আরবি ক্যালিওগ্রাফির অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তা স্থবির হয়ে পড়েলেও, ইদানীং বেশ কিছু তরুণ তরুণী আরবি ক্যালিওগ্রাফির সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। ক্যালিওগ্রাফির পাশাপাশি নিজ হাতে কুরআন শরীফও লিখছেন অনেকেই। তাদের একজন হলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত রশিদ।

তার ক্যালিওগ্রাফির বয়স এক বছর হলেও, এর শুরু হয় মক্তবের আরবি শিক্ষকের হাত ধরে। তখনও তিনি জানাতেন না তিনি একজন ক্যালিওগ্রাফার। তখন তার লিখালিখি কেবল বিভিন্ন ঢংয়ে হরফ লিখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময়ের পর হঠাৎ করেই ২০২১ সালে তিনি কোরআন শরিফ লিখার কথা ভাবেন। তখন থেকেই তার আরবি লিপির নিয়ে কাজ করা শুরু হয়। এ নিয়ে নুসরাত বলেন,
” করোনার সময়ে যখন ঘরবন্দী ছিলাম তখন সময় পেলেই কোরআন শরিফের বিভিন্ন সূরা লিখতাম। এরপর মনে হলো যে কোরআন শরিফের প্রথম থেকেই লিখা শুরু করি। সেই থেকে শুরু। ফেসবুকে দেখতাম কেউ কেউ হাতে পুরো কোরআন শরিফ লিখছে। সেই থেকে ভাবলাম যে আমি তো আরবি লেখা পারি,তাহলে আমিও শুরু করি।”

নুসরাতের ক্যালিওগ্রাফির সূচনাও এখান থেকেই। আরবিতে একের পর এর হরফ সাজিয়ে আর্ট তৈরি করার বিষয়টি তিনি কুরআন শরীফ লিখতে যাওয়ার পর বুঝতে পারেন। তখন থেকেই তিনি ইউটিউব এ বিভিন্ন ভিডিও দেখে ক্যালিওগ্রাফি লিখতে শুরু করেন। ২০২৩ সাল ছিলো তার ক্যালিওগ্রাফির বসন্ত কাল। এই বছর তিনি ১৫ টির বেশি ক্যালিওগ্রাফি তৈরি করেছেন।
এ নিয়ে তিনি বলেন,
“ক্যালিওগ্রাফি নিয়ে আমার ভালো কিছু করার স্বপ্ন আছে, এটা আমি আরো ভালো ভাবে শিখবো। ভবিষ্যতে আমার এই গুণটি কাজে লাগাতে চাই।”

নিজের ইচ্ছার পাশাপাশি পরিবার থেকেও সাপোর্ট পাচ্ছেন তিনি। তার এই কাজের প্রতি পরিবার ও আশেপাশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তা জানতে চাইলে নুসরাত বলেন, “অন্যরা আমার এই কাজটিকে ভালোভাবেই দেখে। সবাই প্রসংসা করে, উৎসাহ দেয়। আমার পরিবারের কাছ থেকেও এই ব্যাপারে আমি অনেক উৎসাহ পেয়েছি।”

নিজ হাতে কুরআন লিখতে পেরেও আনন্দিত তিনি। এ পর্যন্ত লিখে তিনি দুই পাড়া লিখে শেষ করেছেন। ভবিষ্যতেও এটা নিয়ে তিনি কাজ করবেন। পড়াশোনা এবং চাকরি জীবনের পাশাপাশি ক্যালিওগ্রাফার সত্তাটাকেও তিনি লালন করতে চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *