ছাত্রলীগ নেত্রীকে নিয়োগ না দেয়ায় জাবি উপাচার্যকে অবরোধ ও বোর্ড স্থগিত

দেশজুড়ে

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ ৯:০৮ অপরাহ্ণ

জাবি প্রতিনিধি,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রত্যাশী এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমকে অবরোধ করেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং এন্ড জিআইএস এর নিয়োগ বোর্ডে ছাত্রলীগের বাধা দেয়ার ঘটনায় বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় উপাচার্য অফিসের সামনে শতাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা উপাচার্যকে অবরোধ করে রাখেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিমোট সেন্সিং এন্ড জিআইএস ইনস্টিটিউটের একজন প্রভাষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ড শুরু হওয়ার কথা ছিলো রোববার সকাল দশটায়। নিয়োগ প্রত্যাশী প্রার্থীরা যথাসময়ে এসে উপস্থিত হন। তবে এ সময় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রার্থীদের ‘বোর্ড হবে না, সবাই চলে যান’ বলে উপাচার্য অফিসের অপেক্ষমাণ কক্ষ থেকে বের করে দেন এবং উপাচার্য অফিসের সামনে কলাপসিবল গেইট বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান নেন। পরে দুপুর ১২ টায় উপাচার্যের সচিব গৌতম কুমার বিশ্বাস এসে প্রার্থীদের জানান, অনিবার্য কারণবশত বোর্ড স্থগিত। পরবর্তীতে চিঠির মাধ্যমে প্রার্থীদের এ ব্যাপারে জানানো হবে।
প্রার্থীদের বের করে দিয়ে গেইট আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে উপস্থিত অধিকাংশ নেতাকর্মী সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে কয়েকজন নেতা জানান, ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শিক্ষার্থীদেরকে যেন শতভাগ নিয়োগ দেওয়া হয় সেই দাবিতে তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেছেন। উপাচার্যের সাথে এ ব্যাপারে ডিল করে গেইট ছেড়ে দেওয়া হবে।’
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগের তিন প্রভাষককে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নবনিযুক্ত প্রভাষকরা ইতোমধ্যে চাকুরিতে যোগদান করেছেন। তবে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে নিয়োগ না দেয়ায় উপাচার্য অফিস অবরোধ করেছে নেতাকর্মীরা।
নাম ও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে উপস্থিত একজন নেতা জানান, ‘ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বারবার বলার পরেও পাপড়িকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। উপাচার্য বলছেন, কিছু কারণে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু ঠিক কি কারণ উপাচার্য তা প্রকাশ করছেন না। তাই অন্য সব প্রশাসনিক কাজ চললেও আমরা কোন নিয়োগ হতে দিবো না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নবনিযুক্ত তিনজন প্রভাষক ৩৯ ব্যাচ, ৪২ ব্যাচ ও ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা প্রত্যেকেই নিজ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। তবে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পাপড়ি স্নাতকে পঞ্চম ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত ও প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা গেছে। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের বেলায় কোন প্রকার স্বজনপ্রীতি ও স্বাধীনতাবিরোধী কাউকে আমরা চাকরিতে দেখতে চাই না। স্বাধীনতার পক্ষের যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ পাবেন এটাই আমরা চাই।’
এদিকে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা প্রার্থীরা। প্রায় দুই ঘন্টা অপেক্ষার পর পরীক্ষা না দিয়েই ফিরে গেছেন তারা। রাজধানীর খিলগাঁও থেকে পরীক্ষা দিতে আসা সুজন নামের এক প্রার্থী জানান, ‘অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি। লম্বা সময় অপেক্ষা করার পর শুনলাম, ভাইভা হবে না। এটা কোনভাবেই কাম্য নয়।’
ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং এর পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ইনস্টিটিউটের জন্য শিক্ষক নিয়োগ খুবই জরুরি ছিল। মাত্র দুইজন শিক্ষক দিয়ে আমাদের ইনস্টিটিউট চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটি শুন্য পদের বিপরীতে ২৩ জন ক্যান্ডিডেট ছিল। এভাবে বোর্ড স্থগিত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, ‘ছাত্রলীগের দাবির সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুরোপুরি একমত। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বিভাগের সবোর্চ্চ ফলাফলধারীকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অন্তত ৪০ জন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এক্ষেত্রে স্বাধীনতার বিপক্ষের কেউ নিয়োগ পায়নি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *