চলচ্চিত্র শিল্পে সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

বিনোদন

মে ৩, ২০২৪ ৮:২৯ অপরাহ্ণ

সুদীপ দেবনাথ(রিমন সূর্য)

চলচ্চিত্র সমাজের দর্পণ। দেশ, সমাজ ও মানুষের চিন্তাভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, আচার-আচরণ তুলে ধরা হয় চলচ্চিত্রে। দীর্ঘদিন ধরেই সেই চলচ্চিত্রে নানা সংকট। বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে ‘চলচ্চিত্র শিল্পে সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক সাংবাদিকদের ৫৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি ( বাচসাস)। বৃহস্পতিবার (২ মে) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে বাচসাস সভাপতি রাজু আলীমের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি গোলটেবিল ছিলেন-ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, বিশেষ অতিথি ভার্সেটাইল মিডিয়ার কর্ণধার প্রযোজক আরশাদ আদনান দেন বাচসাস সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ। গোলটেবিল বৈঠকে ‘চলচ্চিত্র শিল্পে সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ প্রবন্ধ উপস্থাপনা সদস্য ও বাংলাদেশ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন। ফোমের আহবায় এ সময় ঢাকা ১০ আসনের সংসদ চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ সদস্য ও বলেন, চলচ্চিত্র শুরু থেকে শিল্পীদের সঙ্গে সাংবাদিকেরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাংবাদিক বন্ধুরা ছাড়া আমরা সম্পন্ন না। ৫৬ বছর আপনারা যেভাবে সম্মান দিয়েছেন আগামীতেও দিবেন আশা করি। বর্তমানে অল্প কিছু সিনেমা হলে সিনেমা মুক্তি পায়। সেখানে একজন প্রযোজক সিনেমা থেকে খুবই সামান্য টাকা পায়।এ অবস্থায় আমরা যদি ট্যাক্সের টাকাটা কমানোর জন্য সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদে তুলে ধরতে পারি তাহলে আমাদের এই শিল্পের জন্য বড় সমস্যার সমাধান হবে। আমাদের এই শিল্পের অনেক সমস্যা রয়েছে, এগুলোর সমাধানও আছে। এই সমস্যার সমাধানে নিজেদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ভালো ভালো সিনেমা বানাতে হবে। জাতির পিতার হাতে গড়া এই এফডিসির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রচণ্ড ভালোবাসা রয়েছে। আমরা এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে সংসদে এই শিল্পের উন্নয়নে করণীয় নিয়ে কথা বলব। ভার্সেটাইল মিডিয়ার কর্নধার আরশাদ আদনান বলেন, এই সাবজেক্ট নিয়ে আমরাও কাজ করতে হবে সমস্যাগুলো বের করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। সেন্সরে বোর্ডে দায়িত্ব থাকাকারণে অনেক সিনেমা দেখতে হয়। এমন কিছুসিনেমা আছে যেগুলো হলের উপযোগী না।সেগুলোও হলে মুক্তি পায়। এসব সিনেমা তাদের গুরুত্ব দিতে হবে।,সূচনা বক্তব্য করেন চলচ্চিত্র দাঁড়াবে।তার প্রমাণ ‘প্রিয়তমা’।ধন্যবাদ জানাই বাচসাসকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য।বিষয়টি আমরা কাজ করব।বাচসাসকে সঙ্গে নিয়েই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। অনেক দিন ধরেই প্রযোজক সমিতি প্রশাসকের হাতে। প্রযোজক সমিতির সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করব। প্রযোজক বাঁচলে চলচ্চিত্র বাঁচবে।আশা করছি, অচিরেই এ সংসট নিরসন হবে।চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিইও আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, চলচ্চিত্রের জন্য সিঙ্গেল স্ক্রিনের বিকল্প নেই। যে হলগুলো আছে তা আধুনিক করতে হবে। চলচ্চিত্র সম্পর্কে যাদের জানা শোনা আছে অনুদানে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, হল মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচাতে ভূমিকা রাখছে। ঈদের সিনেমা ছাড়া বছরজুড়ে হল মালিকদের লোকসান গুনতে হয়। তারপরও তারা শিল্পটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সিনেমা হলগুলো আধুনিক করার চেষ্টা চলছে। ভালো সিনেমা নির্মাণ হলে পুনরায় এ শিল্প ঘুরে এসময় শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি ও চিত্রনায়ক ডিএ তায়েব বলেন, সরকারি অনুদান সঠিক মানুষদের দিতে হবে। বাণিজ্যিক সিনেমার নির্মাতাদের অনুদান দিলে চলচ্চিত্র আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল বলেন, অনুদান চলচ্চিত্র ধ্বংসের জন্য দায়ী। এটা দ্রুত বন্ধ করা উচিত। কারণ, সঠিক লোক অনুদান পায় না। তাছাড়া অনুদানের টাকা দিয়ে অনেকেই গাড়ি কিনে। অনুদানের টাকা দিয়ে সিনেমা না বানিয়ে বিয়ে করেছে এমনও প্রমাণ রয়েছে। অনুদানের টাকা কখনো যথাযথ ব্যবহার হয় না। তাই অনুদান বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য-চিত্রনায়িকা রোজিনা বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পে সমস্যা ও উত্তরণের উপায় নিয়ে বার বার বৈঠক দর্শকদের হলবিমুখ করে। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।বাণিজ্যিক সিনেমার নির্মাতাদের অনুদানে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই আমাদের এ শিল্প আরও এগিয়ে যাবে।বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে তার বক্তব্যে বাণিজ্যিক ধারার ভালো সিনেমা নির্মাণে অন্তত দুশো কোটি টাকা অনুদানের দাবি তোলেন।বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাস বলেন, সরকার যে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রণোদনা দিয়েছেন ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার কারণে সেগুলো এখনো প্রকৃত হল মালিক ও নতুন উদ্যোক্তরা পায়নি।এক হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা এখন কাগজেই সীমাবন্ধ।এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এসময় আরও উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন-বাচসাস সাবেক সভাপতি রেজানুর রহমান, শিল্পী সমিতির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজেন্ডার বো, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, চুন্নু, নানা শাহ, শাহনুর, চিত্র সম্পাদক আবু মুসা দেবু, ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান সাগর, চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমান, মুক্তি, চলচ্চিত্রা পরিচালক এস এ হক অলিক, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অরুণ চৌধুরী, সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড, গাজী মাহবুব, চয়নিকা চৌধুরী, বুলবুল বিশ্বাস, মাসুমা তানি ও উপদেষ্টা সদস্য ইউনুস রুবেল প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন বাচসাস’র সহ-সভাপতি অনজন রহমান ও রাশেদ রাইন, অর্থ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম মিলন, সমাজ কল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পী, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক ইরানি বিশ্বাস, দপ্তর সম্পাদক আহমেদ তেপান্তর, নির্বাহী সদস্য লিটন রহমান, রুহুল আমিন ভূঁইয়া, আনিসুল হক রাশেদ, রুহুল সাখাওয়াত প্রমুখ। উপস্থিত সবাই সিনেপ্লেক্স ও সিনেমা হল বাড়ানোর জোর দাবি জানায়। তারা মনে করেন সিনেমা হল বাড়লে সংকট অনেকটা নিরসন হবে।সেই সঙ্গে ভালো গল্পের দিকেও নজর দেয়ার অনুরোধ করেন।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সৈয়দা ফারজানা জামান রুম্পা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *