ক্যাকটাসের বিরল সংগ্রহশালা

ক্যাকটাসের বিরল সংগ্রহশালা

ফিচার স্পেশাল

জুন ২৪, ২০২৩ ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদে ভরপুর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বোটানিক্যাল গার্ডেন। এ গার্ডেনেই রয়েছে এমন একটি সংগ্রহশালা, যার সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের অবাক করে দেয়। এটি হলো ক্যাকটাস-সাকুলেন্ট হাউজে স্থাপিত ক্যাকটাস গ্যালারী। গ্যালারীতে রাখা হয়েছে ১৪০ এর অধিক প্রজাতির ক্যাকটাস ও স্যাকুলেন্ট। মূলত ক্যাকটাস-স্যাকুলেন্টের প্রজাতি হারিয়ে যাওয়া রোধ করতেই এই সংগ্রহশালাটি গড়ে তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ক্যাকটাস-সাকুল্যান্টের প্রজাতির সংখ্যা বিবেচনায় এটিই দেশের সবচেয়ে বড় সংগ্রহশালা। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে দুষ্পাপ্য ও মূল্যবান এই ক্যাকটাসগুলোকে একটি গ্রিন হাউজের মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে গ্রিন হাউজের জানালা দিয়ে দর্শনার্থী যে কেউই এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে নির্মিত হয় এই ক্যাকটাস হাউজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের ব্রহ্মপুত্র নদ ঘেঁষা পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এর অবস্থান। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় ১৪০ এর অধিক প্রজাতির ক্যাকটাস নিয়ে সাজানো হয়েছে এই হাউসটি। প্রজাতির সংখ্যা আরো বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

উদ্ভিদে ভরপুর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

উদ্ভিদে ভরপুর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন।

গ্যালারিতে রাখা উল্লেখযোগ্য প্রজাতির মধ্যে এখানে রয়েছে গোল্ডেন ব্যারেল, ক্রিসমাস স্টেফিলায়া, নিপল ক্যাকটাস, লেডিস ফিঙ্গার, হলুদ বানিয়া, সাদা বানিয়া, লাল বানিয়া, এস্টার জিমনো, লেমন বল, ওল্ড মেন, ওল্ড লেডি, সেরেয়াস, ফেয়ারি ক্যাসেল, রেবুসিয়া, মেলো, ফেরো, ইউফোরবিয়াম, সেরেয়াস প্যাকাইনোডিয়াম, ফণীমনসাসহ প্রভৃতি জাতের ক্যাকটাস।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও গবেষকরা বলছেন, ক্যাকটাস এক ধরনের ফণীমণসা জাতীয় উদ্ভিদ। এদের পর্ণকাণ্ড রূপান্তরিত হয়ে পাতা ও কাণ্ডে পানি সঞ্চয় করে। ক্যাকটাসের পুরো দেহ থাকে কাঁটায় আচ্ছাদিত। দেখতে অনেকটা পশমের কুশনের মতো। সালোকসংশ্লেষের জন্যে এরা ক্যাম (ক্রাসুলেসিয়ান অ্যাসিড মেটাবোলিজম) বিপাক পথ ব্যবহার করে। ক্যাকটাস ঘরের ভেতর টবে লাগানো যায়। মরুভূমির প্রচুর উত্তপ্ত আবহাওয়াতেও ক্যাকটাস পানি সংরক্ষণ করতে পারে বলে এটি প্রায় দেড়-দুইশ বছরের মতো দীর্ঘ সময় বাঁচতে পারে। বেশকিছু প্রজাতির ক্যাকটাসের ফল এবং রসাল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ কাণ্ড বিভিন্ন দেশে খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাকটাস হাউজের সার্বক্ষণিক পরিচর্যা ও দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে শহিদুল ইসলাম সাইদুল নামের একজন মালী। পরিচর্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ক্যাকটাসের পরিচর্যা সহজ। খুব বেশি পানির প্রয়োজনও হয় না। ক্যাকটাস লাগানোর পর শুরুর দিকে একদিন অন্তর পানি দেওয়াই ভালো। বর্ষাকালে আদ্রতা বেশি থাকলে ও টবের মাটি ভিজে থাকলে পানি না দেওয়ায় ভালো। ক্যাকটাসের রোগ-বালাইও কম। তবে ছত্রাকের আক্রমণে মারা যেতে পারে ক্যাকটাস, সেদিকে লক্ষ রাখার তাগিদ দেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছিফা মেহজাবিন সেঁজুতী বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির সমাহারে গড়ে তোলা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এই ক্যাকটাস হাউজ আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এখানে রাখা ক্যাকটাসের এক একটি প্রজাতি দেখতে একেক রকম। সৌন্দর্যতায় ক্যাকটাস যে সবার সেরা, তা এখানে আসলেই বোঝা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকরা অত্যন্ত সুন্দরভাবে ক্যাকটাসের বিরল এই হাউজ গড়ে তুলেছেন এবং এগুলোর পরিচর্যা করে যাচ্ছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনন্য কাজ বলে আমি মনে করি। এ গ্যালারির সৌন্দর্য সবার কাছে পৌঁছে যাক এটিই কামনা করি।

অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ক্যাকটাস একটি চাহিদাসম্পন্ন সৌখিন উদ্ভিদ। অলংকরণ, সাজসজ্জা, ওষুধ ও খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় ক্যাকটাস। এ কারণে দেশি-বিদেশি বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে এই উদ্ভিদের ব্যাপক চাহিদা এবং এর অনিয়ন্ত্রিত বাজারজাতকরণের কারণে প্রজাতিগুলো হুমকির মুখে পড়ছে। আর সে কারণেই দেশ-বিদেশ থেকে এখন পর্যন্ত ১৪০ এর অধিক প্রজাতির ক্যাকটাস সংগ্রহ করে আমরা এই গ্যালারিতে রেখেছি, পরিচর্যা করছি ও বংশবৃদ্ধি করছি। এখানে রাখা কোনো কোনো ক্যাকটাসের মূল্য অনেক। ভবিষ্যতে এটিকে নিয়ে আরো পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *