হজ বা আরাফার রোজার সওয়াব ও উপকারিতা

হজ বা আরাফার রোজার সওয়াব ও উপকারিতা

ধর্ম

জুন ২৪, ২০২৩ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

আরাফার মাঠে উপস্থিত হওয়াই হজ। নবীজি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আরাফায় অবস্থান করাই হলো হজ’। (নাসাঈ ৩০৪৪)

মক্কা থেকে ১৫ মাইল পূর্বে তায়েফের পথে অবস্থিত এক মরু ময়দানের নাম আরাফা। ময়দানের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত জাবালে রহমত। আরাফাহ শব্দের অর্থ হলো পরিচিতি। আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে বের হওয়ার পর পৃথিবীতে পরস্পর পরস্পরকে খুঁজতে খুঁজতে আরাফার ময়দানে এসে মিলিত হয়েছেন। আর এ কারণে ওই স্থানের নাম হলো আরাফাত।

এ দিনটিতেই ইসলাম পরিপূর্ণতা পায়। এ বিষয়ে আরাফার দিনে অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনুল কারিমের সর্বশেষ আয়াত- اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا

অর্থ: ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।…’ (সূরা: মায়েদা, আয়াত: ৩)

আগামী ২৭ জুন (মঙ্গলবার) আরাফাতের ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ। এ দিনের রোজা পালনের সওয়াব ও উপকারিতা অনেক বেশি। এ সম্পর্কে হাদিসে অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আবার এ দিনের আমলের মর্যাদার কথাও বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।

উল্লেখ্য, যারা হজের বা আরাফার দিন রোজা রাখবেন, তাদের জন্য ২৬ জুন (সোমবার) দিবাগত রাতেই খেতে হবে সেহরি।

হাদিসের বর্ণনায় হজ বা আরাফার দিনে রোজা রাখার সওয়াব ও উপকারিতা-

১. হজরত আবু কাতাদার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরাফার (হজের দিনের) রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আরাফার দিনের (হজের দিনের) রোজা পেছনে এক বছর এবং সামনের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে। আর তাকে আশুরার রোজার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

২. হজরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আরাফাহ তথা হজের দিনের রোজা। আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি যে তিনি পেছনের এক বছরের গুনাহ এবং সামনের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন’। (মুসলিম)

৩. হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন রোজা রাখে তার একাধারে দুই বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়’। (আবু ইয়ালা, আত-তারগিব)

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, হজের দিনের তথা আরাফার দিনের রোজা পালনের গুরুত্ব ও মর্যাদা কত বেশি। হজের দিন এমন একটি দিন, যে দিন আল্লাহ তাআলা বান্দার খুব কাছাকাছি হয়ে যান। বান্দার চাহিদা সম্পর্কে ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন? আর সবচেয়ে বেশি বান্দাকে ক্ষমা করেন। হাদিসে এসেছে-

৪. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বছরের মধ্যে এমন কোনো দিন নেই যে, আল্লাহ তাআলা আরাফার দিন অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় তার বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন। আর আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা বান্দার অধিক কাছাকাছি থাকেন। অতপর ফেরেশতাদের কাছে গৌরব প্রকাশ করে জানতে চান- আমার এ বান্দাগণ কী চায়? (মুসলিম)

হজের দিন বা আরাফার দিন রোজা পালন, ইবাদত-বন্দেগি করা মুমিন মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ দিনে আল্লাহর মেহমানরা আরাফাতের ময়দানে মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ ও নানান আবেদন নিয়ে রোনাজারি করে থাকেন। মহান আল্লাহ এ দিনটিতে আবেদনকারীর সব আবেদন পূরণ করে নেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হজের মাসের অন্যতম দিন হজের দিন রোজা পালন করা। এ বছর হজ অনুষ্ঠিত হবে ৯ জিলহজ মোতাবেক ২৭ জুন তথা মঙ্গলবার। তাই এ দিন রোজা পালন করে পেছনের ও সামনে এক বছরের গুনাহ মাফসহ নিজেদের সারা জীবনের গুনাহ থেকে মুক্তির আশায় রোজা পালন করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আরাফার বা হজের দিন রোজা রাখার পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *