কেটে ফেলা হবে ভিসি চত্বরের শতবর্ষী কড়ই গাছ

দেশজুড়ে

অক্টোবর ২০, ২০২২ ৭:৫৯ অপরাহ্ণ

মতিউর রহমান সরকার দুখু(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভিসি চত্বরের কেন্দ্রে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী একটি কড়ই গাছ। কয়েকমাস ধরে গাছটির কয়েকটি মোটা ডাল শুকিয়ে পাতাহীন হয়ে পড়েছে। গাছটির নিচ দিয়ে টিএসসি-নীলক্ষেত সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষার্থী ও পথচারী যাতায়াত করে। যেকোনো সময় শুকিয়ে যাওয়া ডালগুলো রাস্তায় ভেঙে পড়তে পারে। এতে করে দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। তাই দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গাছটির শুকিয়ে যাওয়া ডালগুলো কেটে ফেলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্বোরিকালচারের  পরিচালক ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা। তিনি বলেন, “আমরা নোটিশড হয়েছি এবং প্রসেসে আছি,এটা(কড়ই গাছ) কাটার ব্যবস্থা করব। এটাতো আমরা নিজেরা কাটতে পারিনা,কাটার জন্য লোক হায়ার (ভাড়া) করতে হয়। আমরা একটা নোট ইস্যু করেছি,এটা সেন্টারের(কেন্দ্রের) গাছ, একটা অনুমোদন লাগে কর্তৃপক্ষের , এটা হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।”

কড়ই গাছটি উপাচার্য বাংলো,স্মৃতি চিরন্তন ও ফুলার রোডের সংযোগস্থলে হওয়ায় সহজেই নজর কাড়ে। গাছটি একদিকে যেমন শীতল ছায়া দিচ্ছে অন্যদিকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে গাছটির ডাল শুকিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। গাছটি সম্পর্কে  দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ওমর ফারুক বলেন, “আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরের যে বিশাল একটা রেইনট্রি গাছ  এ গাছের একটা ‌ডাল মরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যেটা আমাদের জন্যেও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে আমরা অনেক স্টুডেন্ট বসে আড্ডা দেই, পড়ালেখা করি। কখন এটা ভেঙে পড়ে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন যদি এটার প্রতি সুদৃষ্টি দেয় তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে।”

গাছটির ছায়ায় বসে থাকা বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিফুল ইসলাম অনন্ত বলেন, “এ মুহূর্তে ভিসি চত্বরে বসে আছি এবং ভিসি চত্বরে প্রকান্ড একটি গাছ আছে আমরা সবাই জানি।তো ভিসি চত্বরের গাছটির অনেকগুলো ডাল ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে অর্থাৎ  ডালগুলো মরে গেছে এবং যেকোনো সময় ডালগুলো ভেঙে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমি প্রসাশনের কিছু নজরদারি দেখি তারা (বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন) মাঝে ‌মাঝে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট নিয়ে এসে ডাল ভাঙার ব্যবস্থা করেন কিন্তু সেটা আসলে অনেক দিন পর পর হয়ে থাকে। তো আমি চাই যে শুধুমাত্র ভিসি চত্বর না ভিসি চত্বরসহ ক্যাম্পাসের যে সমস্ত এলাকায় এরকম ঝুঁকিপূর্ণ গাছ বা জিনিসগুলো আছে সে  জিনিসগুলো বা সেরকম  গাছের ডালগুলো ভেঙে ফেলা হয়, এতে করে শিক্ষার্থীরা আরও সুরক্ষিত থাকবে বলে আমার মনে হয়।”

কড়ই গাছ বা রেইনট্রি গাছটির প্রকৃত বয়স কত এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনেকে বলছেন গাছটির বয়স ১৫০ বছরের মতো হবে। এ গাছটির বয়স ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স থেকে বেশি এ ব্যাপারে অনেকেই মত পোষণ করেছেন। ইতিমধ্যে গাছটি ১৯২১ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা,১৯৪৭’র দেশভাগ,৫২’র ভাষা আন্দোলন,৬৬’র ছয় দফা,৬৯’র গণ অভ্যুত্থান,৭০’র নির্বাচন,৭১’র ৭ই মার্চের ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধসহ ঐতিহাসিক অনেক ঘটনার সাক্ষী। গাছটি কে রোপণ করেছে এ ব্যাপারে প্রচলিত আছে, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এক পরিবারের কর্তা গাছটি রোপণ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক গাছটি রোপণ করেছিলেন।

উপাচার্য বাংলোর সামনে অবস্থিত এ গাছটির নিচে বসে শিক্ষার্থীরা  আড্ডা দেয়,ক্লাস শেষে বাসের জন্য অপেক্ষা করে কিংবা কেউ কেউ প্রেমিকার সঙ্গে বাদাম খায়। অনেক পথচারী গাছের শীতল ছায়ায় বসে ক্লান্তি দূর করে। গাছটির নিচে আইসক্রিম,বাদাম,ওয়ান টাইম গ্লাসে চা, সিগারেট ও ফুল বিক্রি করে অনেকের সংসার চলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বসার সুবিধার্থে গাছটির চারপাশে দৃষ্টিনন্দন ইট দিয়ে শান বেঁধে দিয়েছে। শান বাঁধানো এ গাছটির নিচে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় মুখরিত হয় ভিসি চত্বর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *