বঙ্গবন্ধু টানেলে থাকছে বিশ্বমানের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা

দেশজুড়ে স্লাইড

আগস্ট ২৮, ২০২২ ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

পদ্মাসেতুর পর বাস্তবায়নের পথে আরো একটি স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের নাম ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেলের দু’প্রান্তে স্থাপন করা হবে দুটি ফায়ার স্টেশন। স্টেশনগুলোতে থাকবে বিশ্বমানের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। এছাড়া টানেল এলাকায় উন্মুক্ত থাকবে এ সংক্রান্ত নানা তথ্য।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, স্টেশন দুটি থেকে পুরো টানেলের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। কোনো কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে মুহূর্তেই দুই স্টেশনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাবেন। অগ্নিনির্বাপণে স্টেশন দুটিতে থাকবে বিশেষ ধরনের যন্ত্রাংশ।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, টানেলের দু’প্রান্তে দুটি অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই টানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হবে। আমাদের দেওয়া নকশা বা টানেল কর্তৃপক্ষের নকশা অনুযায়ী আলোচনার মাধ্যমে স্টেশন স্থাপন হবে। স্টেশন দুটিতে বিশ্বমানের ইকুইপমেন্ট থাকবে।

তিনি আরো বলেন, দু’পাশে অগ্নিপ্রতিরোধ শুধু টানেল সংশ্লিষ্ট দুটি ফায়ার স্টেশন থেকে নয়, নগর ও উপজেলার স্টেশনগুলোও এ কাজে যুক্ত থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সবকটি ফায়ার স্টেশন একযোগে কাজ করবে। টানেলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মুহূর্তেই অগ্নিনির্বাপণের গাড়ি ও ফায়ার ফাইটাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। স্টেশনগুলোতে এমন কিছু অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট থাকবে, যা দিয়ে খুব সহজেই অগ্নিপ্রতিরোধ-নির্বাপণ করা যাবে। এক্ষেত্রে টানেলে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি স্থাপন নিশ্চিত করা হবে।

দ্রুতগতিতে চলছে টানেলের কাজ

দ্রুতগতিতে চলছে টানেলের কাজ

নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন এ টানেলের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার হলেও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এটিই বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ, যা নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। যার প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৪৫ কিলোমিটার ও ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। প্রতিটি টিউবে দুটি করে থাকবে মোট চারটি লেন। লেনগুলো দিয়ে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলবে গাড়ি।

চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নগরের পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পরে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী সুড়ঙ্গ বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেলটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প ঋণ হিসেবে পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এছাড়া বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি)।

টানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হবে

টানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হবে

টানেলটি নির্মিত হলে ত্বরান্বিত হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন। পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গেও স্থাপিত হবে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কমে যাবে ভ্রমণের সময় ও খরচ।

এছাড়া পূর্বপ্রান্তের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও প্রস্তুত করা মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দরসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের ফলে বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প।

টানেলের নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চায় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরে টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে টানেলের একটি টিউব ও ডিসেম্বরে দ্বিতীয় টিউবটি খুলে দেওয়া হবে।

টানেলের কাজ খুব সহজেই বাস্তবায়ন করা গেছে উল্লেখ করে এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এত বড় একটা প্রজেক্ট নির্ধারিত সময়ে যে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তা দেশের জন্য বড় সাফল্য। এ টানেল বাংলাদেশের জন্য মডেল হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *