আরাফার রোজার দিন-তারিখ

আরাফার রোজার দিন-তারিখ

ধর্ম স্লাইড

জুন ২৫, ২০২৩ ১২:৫৩ অপরাহ্ণ

সৌদিতে এ বছর ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। পরের দিন ২৮ জুন সৌদি আরবে ঈদুল আজহা। আর বাংলাদেশে ঈদুল আজহা ২৯ জুন। এবার বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশের ২০ লাখের অধিক মানুষ পবিত্র হজ পালন করবেন বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ডা. তৌফিক আল রাবিয়া।

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পবিত্র আরাফাতের দিন। এবারের হজে সৌদি আরবে অবস্থানকারীদের জন্য সেই দিনটি হলো ২৭ জুন, মঙ্গলবার। হজের সময় আরাফাতের মাঠে অবস্থান করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘আরাফাতে অবস্থান করাই হলো হজ।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩০৪৪ )

আরাফার দিনে অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনে কারিমের সর্বশেষ আয়াত, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলাম তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়েদা: ০৩)

এদিন বান্দার দিকে মহান প্রভুর রহমতের জোয়ার প্রবলবেগে উৎসারিত হয়। অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮)

দেশে আরাফার রোজার দিন-তারিখ

আরাফার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো রোজা। এদিন একটি রোজা রাখলে বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহর রাসূল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

আরাফার দিন নির্দিষ্ট করা নিয়ে দুইটি মত লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি হলো- স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে তারিখ নির্ধারণ করা; দ্বিতীয়টি হলো- সৌদি আরবের তারিখের অনুসরণ করা।

যারা সৌদি আরবের তারিখের অনুসরণ করতে বলেন, তাদের যুক্তি হলো- আরাফার রোজার ফজিলত সংক্রান্ত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (স.) কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি, বরং নির্দিষ্ট একটি বিশেষ দিনের উল্লেখ করেছেন; আর সেই দিনটি হলো হজের দিন, যে দিন হাজিগণ আরাফা ময়দানে অবস্থান করেন। সুতরাং ৮ বা ৯ তারিখ নয় বরং হজের দিনই রোজা রাখতে হবে। হজ যেহেতু পৃথিবীতে শুধু এক জায়গায় মক্কা শরিফেই অনুষ্ঠিত হয়, তাই সারা পৃথিবীতে সেই হজের দিনই আরাফার রোজা প্রতিপালিত হবে। কারণ এই রোজাটি তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং স্থান ও কর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আর তা হলো মক্কা ও হজ।

কিন্তু প্রথম মতের প্রবক্তারা বলেন, সৌদি আরবের অনুসরণ নয়, বরং পৃথিবীর যেখানে যখন জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হবে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য সেদিনই আরাফার দিন অর্থাৎ ইয়াওমুল আরাফা। যেমন- জিলহজ মাসের ৮ তারিখকে ইয়াওমুত তারবিয়াহ এবং ১০ তারিখকে ইয়াওমুন নাহার (কোরবানির দিন) বলা হয়। অনুরূপভাবে ৯ তারিখ হলো ইয়াওমুল আরাফা বা আরাফার দিন। তাছাড়া মুসলিম শরিফের হাদিসে আরাফার দিনের রোজা বলতে ৯ জিলহজের কথা বলা হয়েছে, তারিখের কথাটি অন্য হাদিসেও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। রাসূলুল্লাহ (স.)-এর জনৈকা স্ত্রী বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সা.) ৯ জিলহজ তারিখে রোজা রাখতেন’। (আবু দাউদ: ২৪৩৭, নাসায়ি: ২৩৭২)

তাদের মতে, যুক্তিও একই কথাই বলে। যেমন- পৃথিবীর অনেক দেশে আরবের একদিন আগেও চাঁদ দেখা যায়। সেক্ষেত্রে যেদিন আরবের ৯ তারিখ, ওই দিন সেসব দেশে ১০ জিলহজ তথা ঈদুল আজহা। তাদের আরবের সঙ্গে আরাফার রোজা রাখতে হলে ঈদের দিন রোজা রাখতে হবে। অথচ হাদিসে ঈদের দিন রোজা হারাম করা হয়েছে। এছাড়াও যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইসলাম শুধু একবিংশ শতাব্দীর যোগাযোগমাধ্যমের সহজলভ্যতার ধর্মই নয়, বরং সর্বযুগের সব মানুষের ধর্ম। সেক্ষেত্রে যারা কোনো কারণে যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে, তারা কীভাবে আরবের আরাফার দিন জানতে পারবে? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।

তাই সৌদি আরবে আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে সব দেশে আরাফার রোজা রাখা ভুল। এমনকি সব দেশে সেটি সম্ভবও নয়। তাই সঠিক হলো- নিজ নিজ দেশের তারিখ অনুসারে মুসলমানরা ৯ জিলহজ তারিখে আরাফার রোজা রাখবে।

ইমামদের যুক্তিতর্কে না গিয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে সাধারণ মুসলমানদের টানা দুইদিন রোজা রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক আলেম। তারা বলেন, নিজ দেশের তারিখ অনুযায়ী মক্কার আরাফার দিন মিলিয়ে দুটি রোজা রাখা উত্তম। এতে আরাফার রোজা আদায় হবে, আবার দুই রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে। তাই এটিই নিরাপদ। আবার যারা একটিমাত্র আরাফার রোজা রাখতে চান, তারা ইখলাস ও তাকওয়ার সঙ্গে নিজ দেশের হিসাব অনুযায়ী ৯ জিলহজ রোজা রাখলে পূর্ণ সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ! বাংলাদেশের হিসেবে তা হলো বুধবার তথা ২৮ জুন। তাই বাংলাদেশে যারা বসবাস করেন, তারা মঙ্গলবার শেষরাতে সেহরি খেয়ে বুধবার রোজা রাখবেন।

তবে সবচেয়ে ভালো আমল তারাই করছেন- যারা জিলহজ মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখবেন। এতে আরাফার রোজা তো পাওয়া যাবেই, একইসঙ্গে তারা অনেক সওয়াব ও ফজিলত লাভ করবেন। কেননা হাদিসে এসেছে, জিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখ প্রতিদিনের রোজা ১ বছরের রোজার সওয়াব এবং প্রতিরাতের ইবাদত ১ বছরের ইবাদতের সমান সওয়াব। (তিরমিজি, খণ্ড:১, পৃষ্ঠা-১৫৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজ সম্পর্কিত বিধানসহ দ্বীনের সব বিধি সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *