আগুন থেকে ৩ বাচ্চাকে বের করে দিয়ে মারা গেলেন মা

দেশজুড়ে

মার্চ ১, ২০২৪ ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টেুরেন্টে কাচ্চি খেতে এসেছিলেন লিজা (৩৪) নামে এক নারী। সঙ্গে ছিলেন ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাইয়ের দুই সন্তান এবং নিজের এক সন্তান। ভবনটিতে আগুন লাগলে দ্রুত ভাইয়ের স্ত্রী ও বাচ্চাদের বের করে দেন লিজা। তার বের হবার মুহূর্তেই বিকট বিস্ফোরণ ঘটে, তারপর আর জীবিত বের হতে পারেননি তিনি। বের হয়েছেন লাশ হয়ে।

বৃহস্পতিবার দিনগত আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এসব কথা জানাচ্ছিলেন নিহতের আরেক বোন। এসময় স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর।

নিহতের বোন গণমাধ্যমকে জানান, তার বোন চাকরি করতেন। অফিস শেষে ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাইয়ের দুই সন্তান এবং নিজের এক সন্তান নিয়ে কাচ্চি ভাইয়ে যায়। হঠাৎ বিকট শব্দে ভবনটিতে আগুন লাগলে দ্রুত ওদেরকে বের করে দেয়। নিজে বের হওয়ার সময় আরেকটা বিস্ফোরণ ঘটলে আমার বোন আর বের হতে পারেনি।

তিনি আরও জানান, আমার বোনের শরীরে হাতে সামান্য পুড়েছে। তাছাড়া শরীরের আরও কোথাও কোনো সমস্যা নাই। মনে হয় প্রচণ্ড শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে।

শুধু লিজাই নন দুই সন্তান নিয়ে কাচ্ছি খেতে এসেছিলেন পপি রায়। আগুনে মেয়ে আদিতা রায় এবং ছেলে সান রায়সহ তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনও বেশিরভাগ মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট ভবনের দ্বিতীয় তলায় কাপড়ের দোকান ছিল। আমাদের দেখা মতে ভবনের অন্যান্য ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট ছিল। যেগুলোতে আমরা গ্যাস সিলিন্ডার দেখেছি। যে কারণে আগুনটা দ্রুত ছড়িয়েছে এবং দাউদাউ করে জ্বলেছে। আগুনে দগ্ধ হওয়ার চেয়ে বেশিরভাগ মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে।

জানা গেছে, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটি সাততলা। এর নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত পুরোটাই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে নিচতলায় একাধিক কাপড়ের দোকান ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্যের যন্ত্রাংশ বিক্রি হয়। দ্বিতীয় তলা থেকে শুরু করে ওপরের দিকে কাচ্চিভাই, কেএফসি ও পিজ্জা ইনসহ বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিচতলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, আটকে পড়াদের অনেকে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। তারাই মূলত সেখানে আটকা পড়েন। এই অবস্থায় ভবনের তিনতলা এবং সাততলায় আটকে পড়ারা উদ্ধারের আকুতি জানাতে থাকেন।

এদিকে, রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল একটি ভবনে আগুনের ঘটনায় অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্তলাল সেন ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান। আর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক সাংবাদিকদের জানান, এই অগ্নিকাণ্ডে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আরও একজন মারা গেছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি সংবাদ পেয়ে আমি দ্রুত চলে এসেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দ্রুত আসতে বললেন। এখানে এসে যা দেখলাম তা ভয়াবহ অবস্থা। বার্ণ ইন্সটিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। অপর দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন। তাদের বেশির ভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক। যারা বেঁচে আছে তাদের বাঁচি রাখার চেষ্টা। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ণ ইউনিটে ভর্তি আছেন। বাইরে কেউ আছে কি না এখনো তথ্য পাওয়া যায় নি। ঢামেক ১৪ জন ও বার্ণে আহতের সংখ্যা ৮ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে গুরুত্ব আছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবাইকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল থেকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয় ৪২ জনকে। তাদের মধ্যে চার শিশু ও ২১ নারী ছিলেন। বাকিরা পুরুষ। এ ছাড়া জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওই ভবনটি সাত তলা। উপরের তলাগুলোতেও রেস্তোরাঁ এবং তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা উপরের তলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন উপরের দিকে উঠে যায়। এ সময় ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *