সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

দেশজুড়ে

জানুয়ারি ২১, ২০২৪ ৬:৪৭ অপরাহ্ণ

একই স্টেশনে ৭ বছর

মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা।।

নিজ সরকারি পদকে কাজে লাগিয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে লুটপাটের আখড়া বানিয়েছেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান। নিয়ম বহির্ভুতভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন স্ত্রী জেসমিন নাহারের সাতক্ষীরা সিটি কলেজের চাকুরি।

অভিযোগ একই স্টেশনে সাত বছর থাকার সুবাদে তিনি হাতিয়েছেন ১০ কোটিরও বেশি টাকা। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শিক্ষকরা। একাধিকবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্ত হলেও এক অদৃশ্য খুটির জোরে তিনি বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছেন আছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে শিক্ষক কর্মচারি নিয়োগে অনিয়ম, দূর্ণীতি ও জালিয়াতির কারণে দুদকের দায়েরকৃত মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাঈদসহ পাঁচজন শিক্ষক। শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে আরো একজন শিক্ষক অস্থায়ী জামিনে আছেন। নাশকতার মামলায় জেল হাজতে যাওয়া সিটি কলেজের জামায়ত নেতা জাহাঙ্গীর আলম ২০০২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্যাটার্ন বহির্ভুত দর্শন বিভাগ অনার্সের চতুর্থ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তথ্য জালিয়াতি করে দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে ২০১৫ সালের পহেলা নভেম্বর তার এমপিওভুক্ত করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শণ ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ২০১২ ও ২০১৭ সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ২১জন শিক্ষক যে অবৈধভাবে ও জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হন তদন্তে তা প্রমাণিত হয়। এমপিওভুক্তির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর সাতক্ষীরা সিটি কলেজে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা শেষে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীর আলমসহ ২১ জন শিক্ষকের এমপিও বিধিসম্মত নয় বলে উল্লেখ করে তাদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এছাড়া দুদকের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক হারুন অর রশিদ সিটি কলেজের ২১ জন শিক্ষককে অবৈধ এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, এর দায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান তার দায় এড়াতে পারেন না।

২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলমসহ ২১ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও ৬৩ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের ফাইল ছাড় করান জাহিদুর রহমান। একই সময়ে প্রভাষক পদে পদোন্নতি পাওয়া ১৫ জন সহকারি অধ্যাপকের কাছ থেকে তিনি ঘুষ নিয়েছিলেন সাড়ে সাত লাখ টাকা। টাকা আর ক্ষমতার জোরে অধ্যক্ষ এমদাদ হোসেন ও সভাপতি জামায়ত নেতা প্রয়াত খালেক মণ্ডলকে ম্যানেজ করে ২০০৫ সালের ১৯ এপ্রিল জাহিদুর রহমান অবৈধভাবে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে নিজের স্ত্রী জেসমিন নাহারকে একই দিনে নিয়োগবোর্ড, একই দিনে নিয়োগ ও যোগদান করান। কারণ ২০০৫ সালের ২০ এপ্রিল শিক্ষক নিবন্ধন ও কর্তৃপক্ষ আইন চালু হলে জেসমিন নাহার আর নিয়োগ পেতেন না।

সাতক্ষীরা সিটি কলেজর এক সময়কার হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক বিধান চন্দ্র দাস জানান, সিটি কলেজে ও শ্যামনগরের হিঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে কাজ করা রুনা লায়লাকে বিধি বহির্ভুতভাবে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে তা না নিয়ে চরম অপমান করা হয়। এছাড়া সরকারি পরিষেবা পেতে জাহিদুর রহমানকে প্রত্যেক খাতে খাতে ঘুষ দিতে হয়। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বই পেতে তাকে দিতে হয় স্কুল প্রতি চার থেকে পাঁচশত টাকা।

সদর উপজেলার ১০২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো পাঠ্যপুস্তকের পরিবহন ব্যয় বাবদ সরকারি ৯৮ হাজার টাকা পকেটস্ত করার অভিযোগ রয়েছে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগের সময় মাউশির প্রতিনিধি হিসেবে কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা তাকে বাধ্যতামূলক ঘুষ দিতে হয়।

এছাড়া নতুন এমপিওকরণের জন্য তাকে শিক্ষকপিছু ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ করায় ধুলিহর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি রবিউল ইসলাম মন্টুকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

রবিউল ইসলাম মন্টু জানান, প্রতিবেদন পক্ষে দেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন জাহিদুর রহমান।

জানতে চাইলে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি বিগত দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় তাকে নিয়ে কুৎসা রটানো হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহম্মেদ বলেন, একই স্টেশনে কোন কর্মকর্তার সাত বছর থাকার সুযোগ বা নিয়ম নেই। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়ালে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাহিদুর রহমানের মত কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় মাউশি নেবে না।

সাতক্ষীরা সদর আসনের সাংসদ আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, তার সময়ে জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে সুপারিশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *