শাহনূর শাহীন : উন্নয়নের স্বার্থে দলমত ও বিভাজন ভুলে শেরপুর জেলার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক, অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান।
ড. গোলাম রহমান বলেন, শেরপুর জেলার অধিবাসী সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা—কর্মচারী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ও নাগরিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত সকলকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। উন্নয়নের স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
শুক্রবার বিকেল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেসক্লাবের জহুর আহমেদ চৌধুরী কনফারেন্স হলে ‘স্মার্ট শেরপুর বিনির্মাণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. গোলাম রহমান আরো বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আক্রমণ করতে চাই না। কিন্তু উন্নয়নের এই যে দাবি—দাওয়া এগুলো তো রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানিফেস্টো। এজন্যই তো তারা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তারপরও কেন উন্নয়ন হচ্ছে না। এমন না যে তারা কেউ হঠাৎ করে নেতা হয়েছেন। তারা কিন্তু যুগযুগ ধরেই আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুতরাং ব্যক্তিগত আক্রমণ না করলেও আমাদের আত্মসমালোচনার জায়গা আছে। হয়তো আমাদের নেতারা ডেলিভারি দিতে পারেনি। কেন পারেননি বা করেননি সেটা আমাদেরকে ভাবতে হবে।
সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব জনাব দিলদার আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি জনাব মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ড. রিয়াজুল হাসান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও প্রবন্ধপাঠ করেন জাতীয় সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর এর সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির) এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়কারী মো. হাফিজুল করিম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও শেরপুর সদর উপজেলা সমিতির সভাপতি দিলদার আহমেদ বলেন, যেকোনো কাজ ছোটো থেকেই শুরু হয়। তারপর আস্তে আস্তে সবার সাথে সমন্বয় করেই সম্পন্ন হয়। যেকোনো উন্নয়নের প্রথম উপাদান মানুষ। মানুষ যদি শিক্ষা সচেতনতায় উন্নত না হয় অন্যান্য উন্নয়ন কাজে আসে না। সুতরাং মানুষকে সচেতন করতে হবে। শিক্ষা, চিন্তা, চেতনা ও সচেতনায় মানুষকে উন্নত করতে হবে।
প্রখ্যাত সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নাগরিক আন্দোলন স্থানীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণ বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমার বন্ধুরা আমাকে প্রায়ই বলে ভাই তুমি নালিতাবাড়ী থেকে এতদূর আসলা ক্যামনে? আমি বলি আমার তো পেছনে যাওয়ার জায়গা নাই। পেছনে গেলে মেঘালয়, ভারত। সেখানে তো যেতে পারবো না। আমাকে সামনের দিকেই যেতে হবে। সুতরাং উন্নয়নের স্বার্থে শেরপুরবাসীকে সামনের দিকেই এগিয়ে যেতে হবে। সেজন্য রাজনৈতিক দলমত ভুলে উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
এসময় শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকবোর্ডের সদস্য প্রফেসর ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এগুলো একেবারেই যৌক্তিক দাবি। সবগুলো দাবিই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী দপ্তরে নিয়ে যেতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে এগুলো অপমার জনসাধারণের জনগুরুত্বপূর্ণ দাবি। সেভাবেই কৌশল নির্ধারণ করে আমাদের কাজ করতে হবে।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সফিক খান, ঢাকাস্থ ঝিনাইগাতি যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ বিন রাজ্জাক, পুষ্পাধারা প্রপার্টিজ লিমিটেডের অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজার মাওলানা জহুরুল হক, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র অফিসার সুলতান মাসুদুজ্জামান, ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোতালেব সিরাজ ও রোকন মণ্ডল, রক্তসৈনিক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল আমিন রাজ, ঢাকা কলেজস্থ শেরপুর জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু তালেব, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শেরপুর জেলার উন্নয়নে ৮ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এসময় ঢাকাস্থ এবং ঢাকার বাইরের শেরপুর জেলার বিশিষ্টজন শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, অধ্যাপক, প্রকৌশলী, সরকারী কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
/এসএস/শীখ/