কমছে চাল উৎপাদন, বাড়তে পারে আমদানি

জাতীয় স্পেশাল স্লাইড

সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ ৩:১৮ অপরাহ্ণ

শাহনূর শাহীন

বিগত ২০২১-২২ অর্থ বছরের তুলনায় চালের উৎপাদন কমতে পারে চলতি মৌসুমে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) গত মার্চে তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ বিপণনবর্ষে তিন মৌসুম মিলিয়ে ৩ কোটি ৭১ লাখ টন চাল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ পূর্বাভাসে তা কমিয়ে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টন ধরা হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট শস্যবিষয়ক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএসডিএ।

অর্থাৎ আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ৭ লাখ টন কম চাল উৎপাদন হতে হতে পারে চলতি মৌসুমে। যা বিগত ২০২১-২২ মৌসুমের তুলনায় ১৬ লাখ টন কম। এর ফলে বাংলাদেশকে গত বছরের তুলনায় এবার ৩ লাখ টন চাল বাড়তি আমদানি করতে হবে। চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় গত মৌসুমে আমদানি কমে ৭ লাখ টনে নেমেছিল। যেটা আগে ১০ লাখ টনেরও বেশি চিল।

পূর্বাভাসে বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে ধরার কারণ হিসেবে বলা হয়, এবার আউশের ভরা মৌসুমে বাংলাদেশে টানা তাপপ্রবাহ ছিল। বৃষ্টিও কম হয়েছে। গত জুলাই মাসে আমনের শুরুতে একই ধরনের আবহাওয়া ছিল। পরে আগস্টে ভারী বৃষ্টি হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বরাত দিয়ে ইউএসডিএ বলেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধান আবাদের জমি কমেছে। এটাই উৎপাদন কমার কারণ হতে পারে। আবার কৃষকদের উৎপাদন খরচও বাড়বে।

বাংলাদেশে তিনটি মৌসুমে চাল উৎপাদিত হয়। সবচেয়ে বড় মৌসুম বোরো। এ মৌসুমে ধান আবাদ করা হয় ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে। চাল ওঠে এপ্রিল ও মে মাসে। বোরোর পরই আউশের আবাদ হয়। আর আমনের আবাদ হয় ভরা বর্ষায়। আউশ ও আমন বৃষ্টিনির্ভর, আর বোরো সেচনির্ভর।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। তবে পরবর্তী অর্থবছর (২০২২-২৩) শেষ হলেও উৎপাদনের হিসাব এখনো প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

এদিকে, ইউএসডিএ’র পূর্বাভাসে আউশে আবাদি জমির পরিমাণ পূর্বাভাসে ৫ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ১০ লাখ হেক্টর ধরা হয়েছে। তারা বলছে, এ মৌসুমে চালের উৎপাদন ৪ শতাংশ কমে ২৪ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। আমনে আবাদ হওয়া জমির পরিমাণ তাদের আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ৩ শতাংশ কমে সাড়ে ৫৭ লাখ হেক্টর এবং চালের উৎপাদন ১ কোটি ৪০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করে ইউএসডিএ।

এর আগে গত বোরোতে ২ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করেছিল ইউএসডিএ। তারা বলছে, তাদের পূর্বাভাস ছিল বাংলাদেশকে ৭ লাখ টন চাল আমদানি করতে হবে। নতুন পূর্বাভাসে সেটা বাড়িয়ে ১০ লাখ টন করা হয়েছে।

অন্যদিকে ভারতের রপ্তানিতে বাড়তি শুল্ক, মিয়ানমারের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা ও বিশ্ববাজারে চড়া দামের কারণে চাল আমদানি নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যথেষ্ট মার্কিন ডলার না থাকায় আমদানি ব্যয় মেটানোও কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিভাগের দেওয়া তথ্য বলছে দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়। তাদের হিসাব বলছে, মাথাপিছু ১৫২ কেজি চালের প্রয়োজনীয়তা ধরে বর্তমানে দেশে ১৭ কোটি মানুষের বার্ষিক খাদ্যচাহিদা দাঁড়ায় ২ কোটি ৫৮ লাখ মেট্রিক টন চাল। এর সঙ্গে বীজ ও অপচয় এবং পশুখাদ্য বাবদ ১৫ শতাংশ যোগ করে মোট চালের প্রয়োজন দাঁড়ায় ২ কোটি ৯৬ লাখ টন বা প্রায় ৩ কোটি টন। দৈনিক চালের চাহিদা আরো বেশি বিবেচনায় নিয়ে মাথাপিছু দৈনিক আধা কেজি বা বার্ষিক জনপ্রতি ১৮২.৫০ কেজি হিসেবে চালের চাহিদা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। বীজ, অপচয় ও পশুখাদ্য হিসেবে আরো ১৫ শতাংশ যোগ করা হলে মোট চাহিদা দাঁড়ায় ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। বিপরীতে চলতি মৌসুমে কম হওয়া সত্ত্বেও চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ মেট্রিক টন।

/এসএস/শীখ/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *