পৃথিবীর যেসব স্থানে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ

পৃথিবীর যেসব স্থানে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ

ফিচার স্পেশাল

সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ ২:৫১ অপরাহ্ণ

সহজাতভাবেই মানুষ কৌতুহলী। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ নতুন নতুন জিনিস দেখতে ও আবিষ্কার করতে ভালোবাসে। আর এই কৌতুহল মেটাতে তারা প্রতিনিয়তই ছুটে চলছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। এমনকি এই ঘোরার নেশায় মানুষ পৌঁছে গেছে চাঁদেও। কিন্তু চাঁদে পৌঁছালেও বিশ্বের বেশ কিছু স্থানে এখনো প্রবেশ করতে পারেনি মানুষ।

ব্রাজিলের স্নেক দ্বীপে প্রায় চার হাজার মারত্মক বিষধর সাপ রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাজিলের স্নেক দ্বীপে প্রায় চার হাজার মারত্মক বিষধর সাপ রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের এমন কিছু স্থান রয়েছে যেসব স্থান মানুষের জন্য নিষিদ্ধ। চলুন জেনে নেয়া যাক মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ এমন ৮টি স্থানের নাম:

১. লাসকাক্স গুহা, ফ্রান্স

প্রত্নতত্ত্বের ভান্ডার এই গুহা। গুহা কমপ্লেক্সে ১৭ হাজার ৩০০ বছর পুরনো প্রাক-ঐতিহাসিক চিত্রকর্ম রয়েছে। গুহার দেয়ালের প্যালিওলিথিক পেইন্টিংগুলোকে জীবন্ত মনে হয়। এতে বিভিন্ন গবাদি পশু, হরিণ, বাইসনসহ আরও অনেক প্রাণীর চিত্র রয়েছে। তবে ১৯৬৩ সাল থেকে গুহাটি সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কারণ প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করেন, মানুষের উপস্থিতি প্রাচীন শিল্পকর্মকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

২.সার্টসে দ্বীপ, আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলের একটি দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত ছোট দ্বীপ সার্টসে। এই দ্বীপটি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। বিশ্বের সবচেয়ে নতুন দ্বীপেরও তকমা রয়েছে সার্টসে দ্বীপের। বর্তমানে দ্বীপটি শুধুমাত্র কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং ভূতাত্ত্বিকদের জন্য উন্মুক্ত।

শুধুমাত্র কয়েকজন বিজ্ঞানী ও ভূতাত্ত্বিকদের জন্য ‍উন্মুক্ত আইসল্যান্ডের সার্টসে দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

৩. উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ, ভারত

আন্দামান চেইনের উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপটি বিশ্বের নিষিদ্ধ দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি। দ্বীপটিতে সেন্টিনেলিজ উপজাতির বসবাস। দ্বীপের বাসিন্দারা প্রায়ই তাদের বিচ্ছিন্নতা রক্ষার জন্য হিংস্র হয়ে ওঠেন। সেন্টিনেলিজ উপজাতি ভারত সরকারের সুরক্ষায় ৫০ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দ্বীপে বসবাস করে আসছে। এই অঞ্চলটি যেকোনো দর্শনার্থীদের জন্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

 ৪. হার্ড আইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া

হার্ড আইল্যান্ড এন্টার্কটিকা এবং মাদাগাস্কারের মধ্যে অবস্থিত। রাজনৈতিকভাবে এই দ্বীপটি অস্ট্রেলিয়ার একটি অংশ। হার্ড দ্বীপে দুটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে এবং এটি সম্পূর্ণ অনুর্বর। পুরো দ্বীপটি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সংঘটিত ধ্বংসাবশেষ এবং চুনাপাথর দিয়ে গঠিত। ভঙ্গুর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার এই দ্বীপে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার হার্ড আইল্যান্ডে দুটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

৫. স্নেক আইল্যান্ড, ব্রাজিল

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এটি এমন একটি দ্বীপ যেখানে হাজারো মারাত্মক বিষধর সাপ রয়েছে। কোরো মানুষ এই স্নেক দ্বীপে পদচারণা করার সাহস করে না। এটি বিশ্বের এবং ব্রাজিলের সবচেয়ে নিষিদ্ধ স্থান হিসাবে বিবেচিত। প্রকৃতপক্ষে, দ্বীপটি এতটাই বিপজ্জনক যে সরকার এই দ্বীপে প্রবেশকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। ধারণা করা হয়,  দ্বীপটিতে প্রায় ৪ হাজার মারাত্মক গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপ রয়েছে।

৬. কিন শি হুয়াং এর সমাধি, চীন

চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের সমাধিটি ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে পিরামিডের নিচে সমাহিত রয়েছে। ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কারগুলোর মধ্যে এটি একটি। কিন্তু ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য এটি এখনো রহস্য। সমাধির অন্যান্য উপাদানগুলো বেশিরভাগই সিল করা এবং অনাবিষ্কৃত। বলা হয়, সমাধি কমপ্লেক্সে বিভিন্ন জিনিস রয়েছে, যা কিন শি হুয়াং-এর পরবর্তী জীবনে প্রয়োজন হবে। প্রাচীন স্থানটির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, চীনা সরকার কিন শি হুয়াং-এর সমাধি খনন নিষিদ্ধ করেছে এবং এটি বিশ্বের অন্যতম নিষিদ্ধ স্থান।

চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের ২ হাজার বছর পুরোনো সমাধি। ছবি: সংগৃহীত

৮. ডুমসডে ভল্ট, নরওয়ে

ডুমসডে ভল্ট আর্কটিক স্বালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি বীজ ব্যংক। এই ব্যংকে বিভিন্ন ধরনের বীজ নিরাপদে সংরক্ষিত থাকে। বৈশ্বিক সংকট এড়াতে এখানে বীজগুলো সংরক্ষণ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ডুমসডে ভল্টে বীজ পাঠানো হয়। তবে এখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। শুধুমাত্র বিশেষ দিনে বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য এই ভল্ট বা ব্যাংকটি খোলা হয়।

৮. ডুলস বেস, যুক্তরাষ্ট্র

ডুলস নিউ মেক্সিকোর কলোরাডো সীমান্তের কাছে অবস্থিত একটি অদ্ভুত শহর। ২৬০০ আমেরিকানের এই শহরটিতে একটি ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাগার রয়েছে যেখানে অবিশ্বাস্য সব পরীক্ষা করা হয় ৷ বলা হয়, ডুলস বেস একটি বিশাল লুকানো পরীক্ষাগার; যেখানে উন্নত প্রযুক্তি এবং মানব-প্রাণীর হাইব্রিড রয়েছে। এই বেস বা ঘাঁটিতে অত্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা রয়েছে এবং এই স্থানটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ নিষিদ্ধ স্থানগুলোর মধ্যে একটি।

সূত্র: হলিডেফি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *