স্মার্ট ভূমি সেবায় এজেন্ট নিয়োগ দেবে সরকার

স্মার্ট ভূমি সেবায় এজেন্ট নিয়োগ দেবে সরকার

জাতীয় স্লাইড

অক্টোবর ১৫, ২০২৩ ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

ভূমি পরিষেবায় সরকার স্মার্ট এজেন্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউনিয়ন, পৌরসভা, মহানগরী এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় এদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

স্থানীয় বিকাশ ও নগদ, রকেট এজেন্টদের মধ্যে কেউ কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষ হলে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে কর্মরতদের এর আওতায় আনা হবে।

এজেন্টরা ভূমি মালিকদের মধ্যে আগ্রহীদের ই-নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর, ই-পর্চা, ই-মৌজা ম্যাপসহ সব ধরনের ডিজিটাল ভূমি পরিষেবা পেতে সহয়তা দেবে।

এছাড়া অন্যান্য ভূমি পরিষেবার ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করবে। তবে মূল কাজ করবে ভূমি অফিস। কোনো আবেদন নিষ্পত্তি অথবা খারিজে এজেন্টদের কোনো ভূমিকা থাকবে না। সরকার নির্ধারিত এজেন্টের বাইরে কারও কাছ থেকে ডিজিটাল বা স্মার্ট ভূমি সেবা নেওয়া যাবে না। তালিকার বাহিরে কারও কাছ থেকে ভূমি পরিষেবা গ্রহণ করা যাবে না।

তালিকাভুক্ত কোনো এজেন্ট অনিয়ম করলে বা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চেষ্টা করলে তার জামানত বাজেয়াপ্তসহ লাইসেন্স বাতিলের মতো শাস্তির বিধান থাকছে এ সংক্রান্ত নীতিমালায়। এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত।

এ বিষয়ে ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, ভূমি মালিকদের সহজে সেবা প্রদান এবং দালালদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি দিতে এজেন্ট নিয়োগের এ সিদ্ধান্ত। এতে বিপুলসংখ্যক বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। ফিরে আসবে শৃঙ্খলা। তিনি বলেন, ভূমি পরিষেবা আগের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমি মালিকরা এখন অনেক সচেতন। কিন্তু ভূমি মালিকরা ডিজিটাল সিস্টেমে সেবার জন্য আবেদন ও নিষ্পত্তির বিষয়ে এখনও দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। তাই এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সেবার বিপরীতে এজেন্টরা সরকার নির্ধারিত কমিশন পাবেন। ভূমি মালিকরা সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধে ভূমি অফিসের সহযোগী হিসাবে তাদের কাছ থেকে সহায়তা পাবেন। তবে তারা সরকারি কর্মচারী নন। কখনও তারা সরকারি কর্মচারী দাবি করতে পারবেন না।

তাদের এক বছরের জন্য নিয়োগ দেবে সরকার। তাদের এনআইডি, জন্মনিবন্ধন, মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ঠিকানা, দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র যাচাই করে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এদের নিয়োগ দেবেন।

কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শিতা আছে শুধু তারাই আবেদন করতে পারবেন। তবে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার, কম্পিউটার বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্সধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

আধুনিকায়ন করায় কেউ চাইলে অফিসে না গিয়ে ভূমিসেবা নিতে পারেন। তবে এজন্য তাকে এ বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেবা ডিজিটাইজেশন হলেও এ বিষয়ে দেশের সিংহভাগ মানুষের স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই।

সেবা পেতে কিভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আবেদন করবে, ফি জমা দেবে তা অধিকাংশ ভূমি মালিক জানেন না। ফলে তারা দ্বারস্থ হন ভূমি অফিসের চারপাশের কম্পিউটারের দোকানে। দোকানিরা ভূমি মালিকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ভূমি মালিকদের পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারছে না।

আবার ডিজিটাল ভূমি পরিষেবাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক শ্রেণির দালাল গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তারা ডিজিটাল ভূমি পরিষেবার নামে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়তি টাকা। অনেক সময় অসাধুরা কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান না করে প্রতারণার আশ্রয়ও নিচ্ছেন। কিন্তু কোনো ধরনের কাঠামো না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না সরকার।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ভূমি পরিষেবা প্রদানের কাজে লাগাতে চায় সরকার। সে ক্ষেত্রে সরকার ডিজিটাল মাধ্যমে ভূমি অফিসের যাবতীয় সেবার জন্য আবেদন করতে এবং রাজস্ব আদায়ে সহায়তা করতে পারে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাইজেশন নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরম্যান্স (ডিকেএমপি) অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাহিদ হোসেন পনির বলেন, ডিজিটাল ভূমিসেবার আওতায় গ্রাহকদের সহজে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে ভূমির অধিকাংশ সেবা ডিজিটাল করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধে এজেন্ট ভিত্তিক পরিষেবার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসংক্রান্ত একটি নীতিমালা বা নির্দেশিকার খসড়া প্রায় চূড়ান্ত।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আহাদ নামের একজনের প্রোফাইলে ভূমিসেবাসংক্রান্ত একটি গ্রুপে একজন লিখেছেন, নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান ও দলিলসংক্রান্ত সমস্যায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সঠিক সমাধান দিতে পারবে।

এ প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ই-নামজারির কাজে সরকারি ফির বাইরে তিনি ৪০০ টাকা এবং কাজ শেষ হওয়ার পর আরও ৫০০ টাকা দাবি করেন।

শাহ আলম নামের একজনের সঙ্গে এসএ পর্চা ম্যাপের জন্য যোগাযোগ করলে তিনি ১ হাজার ২০০ টাকা দাবি করেন। অতিরিক্ত টাকা কেন লাগবে জানতে চাইলে তারা বলেন, নিজেদের মেধা ও সময় ব্যয় করে কাজ করতে হবে। বাড়তি খরচ না দিলে কিভাবে চলব।

বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে প্রতিদিন ৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করছে ভূমি অফিসগুলো। সেই হিসাবে প্রতি মাসে রাজস্ব আয় হচ্ছে ১৮০ কোটি টাকা এবং প্রতিবছর রাজস্ব আহরণ হচ্ছে প্রায় ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। ভূমি পরিষেবাগুলো ডিজিটাইজেশন হওয়ার আগে বছরে ৩০০ কোটি টাকার কম ভূমি রাজস্ব আদায় হতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *