শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে বিশ্বের নজর কেড়েছে বাংলাদেশ: দ্য ইকোনমিস্ট

শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে বিশ্বের নজর কেড়েছে বাংলাদেশ: দ্য ইকোনমিস্ট

জাতীয় স্লাইড

মার্চ ৫, ২০২৩ ১১:১০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়নের মডেল। পাশাপাশি দেশটি এ অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে বিশ্বের নজর কেড়েছে। ১৯৭১ সালে ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার পর বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ছিল চমকপ্রদ। লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে।

নারীদের শিক্ষার হার এখন ৭৩ শতাংশ। স্বাধীনতার সময় যেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৪ শতাংশ ছিল, তা এখন বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এর পেছনে বাংলাদেশের ক্রমেই এগিয়ে চলায় পোশাক খাত সব থেকে বড় ভূমিকা রাখছে।

কোভিড-১৯ আঘাত হানার আগের এক দশকে বাংলাদেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ৭ শতাংশ। শুধু চীনের থেকেই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ, যদিও ব্যবধান ছিল একেবারেই সামান্য।

নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২৫০০ ডলার, যা ভারতের থেকে বেশি। ২০২৬ সালেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। এরপর ২০৩১ সালের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে চায় বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের এই উন্নয়নের গতিপথ এখন পরীক্ষার মুখে। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।

এতে বলা হয়, আগামী বছরের শুরুতেই বাংলাদেশে আয়োজিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। এর ফলাফল কী হবে তা নিয়ে বড় কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমান সরকার বিরোধীদের দুর্বল করতে যা যা করা সম্ভব করেছে। তারপরও অনেকেই মনে করছেন, রাজনীতিতে ‘জিরো-সাম’ কৌশল নির্বাচনকালীন ব্যাপক সহিংসতার জন্ম দেবে। চাপে থাকলেও এখনো টিকে থাকা বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতারা রাজপথে সক্রিয় আছেন।

এদিকে ঢাকার দুর্নীতির গন্ধ শহরটির দূষিত বাতাসকেও হার মানিয়েছে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে ছুটে চলা বাংলাদেশ যেন পথ হারিয়ে ফেলেছে। যদিও ঢাকা ও এর বাইরে থাকা শপিংমল-কারখানাগুলোতে এখনো বাংলাদেশিদের সক্রিয় থাকতে দেখা যাচ্ছে। এই সক্রিয়তাই বাংলাদেশের অপ্রত্যাশিত সফলতার মূল চালিকাশক্তি।

নিবন্ধে বলা হয়, শোচনীয় শাসন ব্যবস্থা দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করে, এমনকি বিদেশি বিষয়গুলোতেও। বাংলাদেশের ধনী ও দুর্নীতিবাজরা দেশটিকে টাকা পাচারে বিশ্বে প্রথমদিকে নিয়ে এসেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কানাডার টরেন্টোসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি বসবাসকারী এলাকাকে ‘বেগমপাড়া’ বলে কটাক্ষ করা হচ্ছে। যদি মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বিশ্বের অন্যত্র কর্মরত দরিদ্র বাংলাদেশিরা যদি দেশে রেমিট্যান্স না পাঠাত তাহলে দেশের অর্থনীতি আরও বড় সংকটে পড়ত।

এতে বলা হয়, ব্যবসা আর রাজনীতি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। ঋণখেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য দায়ী ব্যাংকগুলোর রাজনৈতিক দিক থেকে ক্ষমতাধরদের ঋণ প্রদানে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া। কিন্তু এই ব্যক্তিরা ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দেন না। সরকারি কোনো টেন্ডার থেকে শুরু করে কোস্টগার্ডের চাকরি কিংবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্যও চলছে টাকার খেলা। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর কর্মীদের যেভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন তা করা হচ্ছে না। উলটো তাদের ইমিগ্রেশনে হেনস্তার শিকার হতে হয়। যদিও সরকারের দাবি- দুর্নীতি দমন করা হয়েছে।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, আসলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কোনো স্বাধীন প্রতিষ্ঠান মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। ভিন্নমতাবলম্বীদের স্থান হয়েছে কারাগারে, কয়েকজনকে হত্যাও করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতেও নিজেদের ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে আওয়ামী লীগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *