‘মিয়া ভাই’য়ের যত কালজয়ী সিনেমা

‘মিয়া ভাই’য়ের যত কালজয়ী সিনেমা

বিনোদন স্পেশাল

মে ১৬, ২০২৩ ৯:১০ পূর্বাহ্ণ

না ফেরার দেশে চলে গেলেন ঢালিউডের মিয়াভাই খ্যাত অভিনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (১৫ মে) সকাল ৮টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে শরত।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধা চলাকালিন সময়ে ঢালিউডের সিনেমা পাড়ায় নাম লেখান এই কিংবদন্তি অভিনেতা। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’তে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। ‘জলছবি’তে এই অভিনেতার বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। এর পরে ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল নামক দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রের পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

তবে ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুজন সখী’ সিনেমাটি ফারুককে দর্শকদের কাছে নিয়ে যায়। এরপর থেকে একটার পর একটা দারুণ সিনেমা উপহার দিয়ে গেছেন আমাদের। এই অভিনেতার স্মরণে তারই কালজয়ী সিনেমার কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরলেন শব্দনীল।

 সুজন সখী

সুজন সখী

সুজন সখী 
১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রোমান্টিক চলচ্চিত্র। গ্রামীন পটভূমির সিনেমায় দেখা যায় পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে আলাদা হয়ে যায় দুই ভাই সুলেমান ও লোকমান। সুলেমান যাওয়ার সময় তার সব সম্পত্তি তার ভাতিজা লোকমানের ছেলে সুজনকে দিয়ে যায়। সুলেমানের স্ত্রী কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে মারা যায়। সুলেমানের মেয়ে সখী তার দাদীর আদরে-যত্নে বড় হতে থাকে। একদিন সুজনের সাথে তার পরিচয় হয়। কিন্তু তারা দুজনের কেউ কারো আসল পরিচয় জানে না। সখী একদিন তার দাদীর সাথে সুজনের পরিচয় করিয়ে দিলে তারা তাদের আসল সম্পর্ক জানতে পারে। এখন তারা কি পারবে দুই ভাইয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে!

গ্রামীন পটভূমির এই গল্পটি নিজের অভিনয়গুণে আজও দর্শকদের মন জয় করে আছেন ফারুখ। ঢালিউডের ৫৫ বছর বয়সেও এমন অভিনেতা এখনো পায়নি বাংলাদেশ।  তিনি গ্রামীন চরিত্রগুলো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে অভিনয় করতে পারতে। বাংলাদেশের পাঁচটি কালজয়ী প্রেমের সিনেমার ভেতর অন্যতম ‘নয়নমনি’।

এই সিনেমায় ফারুক-ববিতার প্রেম সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। এ সিনেমার পর এক জনপ্রিয় জুটিতে পরিণত হন তারা দু’জন। আমজাদ হোসেন রচিত নিরক্ষর স্বর্গে উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছেন তিনি নিজেই।

নয়নমনি
নইমুদ্দির ঘরে ছেলে সন্তান জন্মানোর পর তার ঘরে আগুন লাগে। এতে করে গ্রামের মানুষ বলাবলি শুরু করে সেই সন্তান অলক্ষুণে। নইমুদ্দি তাই এমন সন্তানের মুখ দর্শন করতে চায় না ও আতুর ঘরে আগুন জ্বালিয়ে সব পুরিয়ে দিতে চায়। অবশেষে সে শান্ত হয়। ছেলের নাম রাখা হয় ‘নয়ন’। কিছু দিন পর তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। মোড়লের হস্তক্ষেপে সে জেল থেকে বের হয়ে সন্তানসহ বউকে তালাক দেয়। বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় সে আশ্রয় নেয় গ্রামের এক গায়েনের বাড়িতে। সেই গায়েনের বাড়িতে বড় হতে থাকে নয়ন। শুরু হয় তার দুরন্তপনা। একদিন তার খেলার সাথী মনিকে গুলতি মারার অপরাধে তাকে গ্রাম ছেড়ে যেতে হয়। বেশ কিছু বছর পর গ্রামে ফিরে এসে দেখে গ্রামে মোড়লের অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ। তাছাড়া মোড়ল জোর করে মনিকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু নয়নের জন্য মোড়ল তা পারে না। সে গোলাপ আলীসহ গ্রামের যুবকদের নিয়ে দল গঠন করে মোড়লকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য।

১৯৭৫ সালে আর একটি সিনেমা লাঠিয়াল মুক্তি পায়। সিনেমাটি পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা। এই সিনেমার জন্য ফারুখ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

লাঠিয়াল
কাদের লাঠিয়াল গ্রামের মাতবরের হয়ে কাজ করে। তার ভাই দুখু মিয়া গ্রামে গ্রামে ঘুরে গান করে। কাদের তার ভাইকে খুব ভালোবাসে। কাদের স্ত্রীও দুখুকে অনেক স্নেহ করে। দুখু তার গ্রামেরই বানুকে পছন্দ করে। মাতবরের ছেলে মকবুল বানুকে উত্ত্যক্ত করলে দুখু তাকে মারধোর করে। মাতবর কাদেরের কাছে তার ছেলের গায়ে হাত তোলার অভি্যোগ করে তাকে ও তার ভাইকে শাসায়। কাদের রাগান্বিত হয়ে বাড়িতে এসে দুখুকে মারধোর করে। এতে দুখু রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। নদী তীরে মোড়লের সাথে তার পরিচয় হয়। মোড়ল তার গানের গলায় অভিভূত হয়ে তাকে তাদের দলের একজন করে নেয়। দুখুর নতুন কর্মজীবন শুরু হয়।

অন্যদিকে বানু তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এক রাতে দুখু বানুর সাথে দেখা করে যায়। ইতোমধ্যে, মাতবর বানুকে তার ছেলের বৌ হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বানুর পিতার নিকট প্রস্তাব পাঠায়। দুখুর ভাবী দুখুকে এই খবর পাঠায়, কিন্তু দুখু একটি চর দখল করতে চলে যায়। মাতবরও তার ছেলের বিয়ের দিন সেই নতুন চরের খবর পায়। সে কাদেরকে তার লাঠিয়ালসহ সেই চর দখল করতে পাঠায়। বানু ও কাদের স্ত্রীও এই বিয়ে বন্ধ করার জন্য নতুন চরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

দুখু ও কাদের মধ্যে চরের দখল নিয়ে মারপিঠ শুরু হয়। দুজনেই চরের দখল ছাড়তে নারাজ। তাদের মাঝে কাদের স্ত্রী চলে এলে কাদের লাঠির আঘাত তার মাথায় লাগে। তারা মারপিঠ বন্ধ করে। কিন্তু মাতবর সেখানে এসে কাদেরকে শাসায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কাদের তার লাঠির আঘাতে মাতবরকে খুন করে। ফলে সাধারণ জনগণ এই চরের মালিকানা লাভ করে।

১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আমজাদ হোসেন। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা, ফারুক, আনোয়ার হোসেন, রোজী সামাদ, আনোয়ারা, রওশন জামিল, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ। মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে এই ছবির প্রদর্শনী হয়। সেসময় ছবিটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন মৃণাল সেনের মতো নির্মাতারাও।

গোলাপী এখন ট্রেনে

গোলাপী এখন ট্রেনে

গোলাপী এখন ট্রেনে 
গাঁয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি মণ্ডল। তার ছেলে মিলন পছন্দ করে দরিদ্র গায়েনের মেয়ে গোলাপীকে। একদিন মণ্ডলই গোলাপীর বিয়ের জন্য খোঁজ দেয় এক পাত্রের। কিন্তু বিয়েতে সাইকেল দিতে হবে। নিজের মনকে বশ করে গোপনে সাইকেলের টাকাটা দেয় মিলন। তবে শেষ পর্যন্ত ভেঙে যায় বিয়েটা। এ কারণে আত্মহত্যা করে গোলাপীর বাবা। দারুণ অভাবের মধ্যে পড়ে সংসার। এর হাল ধরতেই ট্রেনে চড়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করে গোলাপী। গাঁয়ের মোড়লরা ভালো চোখে দেখে না গোলাপীর এ কাজ। যারা ট্রেনে কাজ করে গ্রাম থেকে তাদের বের করে দেওয়ার জন্য সালিস বসে।

এছাড়াও তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো, ‘সারেং বৌ’, ‘মিয়া ভাই’, ‘সাহেব’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘সখী তুমি কার’, ‘কথা দিলাম’, ‘সূর্য গ্রহণ’ ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *