ভারত-শ্রীলংকার ঐতিহাসক আদাম সেতু

স্পেশাল

অক্টোবর ২৬, ২০২৩ ১২:৫৫ অপরাহ্ণ

শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের শ্রীপাড়া প্রদেশে অবস্থিত একটি পর্বতে ১.৮ মিটার বা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের একটি পায়ের ছাপ রয়েছে। মুসলিম ও খ্রিস্টানদের কাছে এটি পৃথিবীর আদি মানব হযরত আদম (আ) এর পায়ের ছাপ, সনাতনদের কাছে এটি তাদের দেবতা শিবের পায়ের ছাপ আর গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপ হিসেবে বিশ্বাস করেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা। ৭,৩৫৯ ফুট উচ্চতার এই ‘শ্রীপদ’ বা এডাম’স পিক নামে পরিচিত পর্বতের পাদদেশ থেকে ভারতের তামিলনাড়ুর দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে রামেশ্বরম দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত একটি প্রাচীন সেতু রয়েছে। সেতুটি সমুদ্রের মধ্যে এক রহস্যময় উপায়ে ভাসমান। কোনো প্রযুক্তি বা কৃত্রিম ইট-কাঠ-পাথরে নয়, সেতুটি নির্মিত প্রাকৃতিক- পাথর আর বালু দিয়ে। একাধিক নাম একাধিক কাহিনী আর সমুদ্রে ভেসে থাকার একাধিক রহস্যে ঘেরা এই সেতুটির গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।

সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা অগভীর চুনাপাথরে নির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩০ মাইল বা ৪৮ কিলোমিটার। ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এটি একসময় ভারত আর শ্রীলঙ্কাকে যোগ করে রেখেছিল স্থলপথে। এখন এই সেতু দিয়ে চলাচল করা না গেলেও, পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত একদম পায়ে হেঁটে যাবার অবস্থাই ছিল, মানুষ যেতে পারত। পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত মন্দিরের নথি অনুযায়ী, ১৪৮০ সালে এক ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, যার ফলে এই সেতু ভেঙে যায়। বিভিন্ন ঝড়ের ফলেও তলিয়ে যায় সেতুটি।

যদিও কোনো প্রমাণিত হাদিস বা কোরআনের আয়াতে এর উল্লেখ নেই, তবুও কথিত আছে, দীর্ঘদেহী হযরত আদম (আ) যখন দুনিয়াতে আসেন, তখন তিনি শ্রীলঙ্কায় পতিত হন। তিনি অনুতপ্ত হয়ে এই পর্বতচূড়ায় টানা এক হাজার বছর প্রার্থনা করেন এক পায়ে দাঁড়িয়ে। সেই পায়ের ছাপই এটি। আবার এরকমও বর্ণিত আছে, তিনি পতিত হবার সময় যে প্রচণ্ড বল নিয়ে ভূমিতে প্রথম পায়ে আঘাত করেন, সেটির কারণেই এই পায়ের ছাপ সৃষ্টি হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, তিনি এই চূড়া থেকে নেমে স্থলপথে এ সেতু অতিক্রম করে চলে যান ভারতে এবং একসময় আরাফাতের ময়দানে পৌঁছান, যেখানে জেদ্দায় পতিত বিবি হাওয়ার সাথে পুনর্মিলিত হন তিনি। অন্য একটি মতবাদ অনুযায়ী, তিনি ভারত থেকে এই সেতু পেরিয়ে এই পর্বতের চূড়ায় অনুতাপ করতে গিয়েছিলেন। তবে এ কাহিনীগুলোর প্রামাণ্য বা কোনো রেফারেন্সের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *