বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২০২৩ অনুষ্ঠিত

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২০২৩ অনুষ্ঠিত

দেশজুড়ে

জানুয়ারি ২৩, ২০২৩ ৭:০২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২১ জানুয়ারি, শনিবার ঢাকার নিউ ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে বিকাল ৩টায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের (জিএমসিসি) ভাইস চেয়ারম্যান ড. খোন্দকার শওকত হোসেনের সভাপতিত্বে তিন পর্বের এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক। ২য় পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ।

অনুষ্ঠানে ৭২ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে ক্রেস্ট প্রদান ও চাদর পরিয়ে দেয়া হয়। ৩য় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ কবিতার মধ্য দিয়ে স্বাগত বক্তব্য শুরু করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের (জিএমসিসি) ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আবদুস সামাদ ফারুক, সিনিয়র সচিব (অব.) ও চেয়ারম্যান, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যে অবদান রেখেছেন তাদের এ আত্মত্যাগকে আমরা সালাম ও অভিবাদন জানাই। তাদের এ ঋণ আমরা কোনোদিন পরিশোধ করতে পারবো না।

পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে দেশপ্রেমিক হিসেবে তৈরি করেছেন। আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছি ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের লক্ষ্যে। তিনি দেশকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। কিন্তু ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে হত্যা হওয়ায়, তিনি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দেওয়ার সময় পাননি। এখন সেই কাজটি তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন।

তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের হাতে আছে আগ্নেয়াস্ত্র, ডাকাতের হাতেও আছে পিস্তল। পার্থক্য শুধু আমাদের আছে দেশপ্রেম আর ডাকাতের মধ্যে নেই দেশপ্রেম।

গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক আরও বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নের সরকার। এ সরকারের আমলে দেশের প্রতিটি খাতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সরকার জনগণের কল্যাণে উন্নয়ন করে যাচ্ছে। দেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি। স্বাধীনতার জন্য শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রত্যেকের কাছে একটি যুদ্ধের ইতিহাস আছে। আপনাদের সে ইতিহাস আপনারা আপনাদের পরিবারকে বলবেন, স্কুলে গিয়ে বলবেন, জাতিকে বলবেন। আপনার ঢোল আপনাকেই বাজাতে হবে, কেউ বাজিয়ে দেবে না। আমরা দেশকে ভালবাসি, বাংলাদেশকে ভালবাসি তাই আপনারা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে কিভাবে ক্ষমতায় রাখা যায় সে চেষ্টা করুন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে বৃহত্তর ময়মনসিংহের গুণীজনরা উপস্থিত হয়েছেন এটা সত্যি গর্বের বিষয়। উপস্থিত গুণীজনদের প্রত্যেকে একেকটি রত্ন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদসহ ময়মনসিংহের আরও যেসব সংগঠন রয়েছে তারা ময়মনসিংহের অগ্রগতির জন্য কাজ করছে। ময়মনসিংহ একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল। ধান, পাট ও রবিশস্য এখানে উৎপাদিত হয়। কৃষি থেকে তরুণদের উন্নত আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়াটাই এখন একটা চ্যালেঞ্জ।

তিনি সবাইকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকারকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমরা মাত্র কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে সম্মাননা তুলে দিতে পেরেছি, সামনে এ সংখ্যা আরো কমে যাবে। আমরা দিন দিন মুক্তিযোদ্ধাদের হারাচ্ছি। আমরা তাদের হারানোর আগে যেন তাদের যথাযথ সম্মান দিতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

জিএমসিসি’র চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কোন বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় গ্রামের অনেক পরিবারে জামা ছিল না, খাবার ছিল না। কিন্তু এখন এমন কোন পরিবার নেই যে পরিবারে জামা নেই। এটাই তো স্বাধীনতা।

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জিএমসিসি’র ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ম. হামিদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমি তাদের বলব, তারা শ্রেষ্ঠ থেকেও শ্রেষ্ঠ।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়ানোর জন্য বন্দুকের সামনে পাকিস্তানী মেজর ও ক্যাপ্টেনের সামনে একটি বদ্ধ রুমে বসে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি এবং শেষে পাকিস্তানি পতাকা নামাতে সক্ষম হয়েছি।

খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে বক্তব্য রাখেন কামালপুর সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধা মিজানুর রহমান খান। তিনি বলেন, আমি নিজেই ১২টা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা কর্নেল তাহেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভারত নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আমাদের হত্যা করতে নানা পরিকল্পনা ও কৌশল অবলম্বন করেছে কিন্তু সফল হতে পারেনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যাদের কল্যাণে আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের আজকের আয়োজন দেখে আমি অভিভূত। তাদের এ আয়োজনকে আমি সাধুবাদ জানাই।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব প্রকৌশলী রাশেদুল হাসান শেলী বলেন, ২০০০ সালের ১২ অক্টোবর বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ ২২ বছরের পদযাত্রায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।

এছাড়া তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের যেসব গুণীজন পরলোকগমন করেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের যারা এত সুন্দর একটি আয়োজন করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের ২০২৩—২৫ কার্যবর্ষের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মোঃ আবুল কালাম আজাদ ও মহাসচিব হিসেবে প্রকৌশলী রাশেদুল হাসান শেলীকে মনোনীত করা হয়।

অনুষ্ঠানে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের বিগত এক বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব পাঠ করেন সংগঠনের অর্থ সচিব এম. আবদুল হাকিম। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন শাহাজাদী আনজুমান আরা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান যথাক্রমে উজ্জল বিকাশ দত্ত, ড. মো: জাফর উদ্দিন, ড. মো: মনিরুস সালেহীন, মো: কামরুল হাসান এনডিসি, মো: তাফাজ্জল হোসেন, ড. এমদাদুল হক, মসয়ুদ মান্নান, প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সি টিপু, আবদুর রহিম বিপিএম, ড. মো: সিরাজুল ইসলাম, গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) শফিকুল ইসলাম, সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি যথাক্রমে মো: ফসিউল্লাহ, জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (বাণিজ্যনীতি) শাহ মো: আবু রায়হান আল বেরুনী, মো: আজাহারুল ইসলাম খান, রতন চন্দ্র পন্ডিত, আবু বকর সিদ্দিক, প্রকৌশলী মো: শামছুদ্দোহা, সংগঠনের পরিচালক যথাক্রমে খন্দকার আতাউর রহমান, ড. দৌলতুন্নাহার খানম, মো: রেজাউল করিম, কামরুন্নেসা আশরাফ দীনা, অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন, মো: গোলাম মোস্তফা, অধ্যাপক ড. মো: মোফাজ্জল হোসেন, মু. হাফিজুর রহমান ময়না, মো: আনোয়ার হোসেন, মো: সুরুজ আলী, সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব যথাক্রমে পংকজ কুমার পাল, প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান, অ্যাড. শাহিদা খান, অধ্যাপিকা রায়হানা তসলিম, মো: রেহান মিয়া, শীর্ষ খবর পত্রিকার সম্পাদক অ্যাড. মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির), মোঃ আবদুর রহিম, মোঃ জালাল উদ্দিন তালুকদারসহ সংগঠনের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির কাছ থেকে ৭ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। তারা হলেন: হাবিলদার আলিমুল ইসলাম (বীর প্রতীক), নেত্রকোনার ল্যান্সনায়েক আব্দুস সাত্তার (বীর প্রতীক), কিশোরগঞ্জের সিপাহী হারুনুর রশিদ (বীর প্রতীক), নেত্রকোনার হেলালুজ্জামান (বীর প্রতীক), জামালপুরের নুরুল ইসলাম (বীর প্রতীক), টাঙ্গাইলের আবদুল গফুর (বীর প্রতীক) ও শেরপুরের কমান্ডার জহিরুল হক (বীর প্রতীক)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *