বয়স কমাতে চলছে লাখ কোটি টাকার খরচ

লাইফস্টাইল

নভেম্বর ১৭, ২০২৩ ৭:০০ অপরাহ্ণ

 

আপনার কাছে যদি আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ থাকত, তবে কী চাইতেন? কেউ চাইবেন চিরকাল বেঁচে থাকতে, কেউ আবার চাইবেন সুস্বাস্থ্য। অনেকেই আবার কোটিপতি হতে চাইবেন। এই সমস্ত চাহিদা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে এর মধ্যেই একটা চাহিদা এখন বিশেষভাবে উঠে আসছে। তা হল- যৌবন ধরে রাখার চাহিদা। বিশ্বের একটা বড় অংশের মানুষ চাইছেন, আরও বেশিদিন বাঁচতে। সেই সঙ্গে ধরে রাখতে চাইছেন তারুণ্য। আর এই চাহিদার জেরেই বিলিয়ন ডলারের আলাদাই অর্থনীতি তৈরি হয়েছে। মারণ রোগ ক্যানসারের চিকিৎসার পিছনে যে পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে, তার থেকেও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে বিউটি ও অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্টের উপরে। প্রতি বছর লাখ কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে রূপচর্চা ও প্রসাধনীকে ঘিরে।
দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় সৌন্দর্য্যকে। পিছিয়ে নেই চীন, জাপানের মতো দেশগুলিও। এই দেশগুলিতে চাকরি পেতে গেলে, শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি সুন্দর দেখতে হওয়াও অন্যতম শর্ত। আমেরিকাতেও এই চল শুরু হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, বিশ্বের একাংশ দেশের নাগরিকরা কেউ বুড়ো হতে চাইছেন না। বুড়ো হওয়ার ভয়ে দেদার খরচপাতি করছে এই দেশগুলির নাগরিকরা।
কীভাবে কমছে বয়স?

বাজারে নিত্যদিন আসছে নতুন নতুন অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্ট। গোটা বিশ্বে জটিল ও দুরারোগ্য অসুখের চিকিৎসায় প্রতি বছর যে টাকা খরচ হয়, অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্টও তার থেকে খুব পিছিয়ে নেই। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, বিশ্বে এক বছরে যদি ক্যানসারের চিকিৎসায় ১০০ টাকা খরচ হয়, তবে অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্টে খরচ হচ্ছে ৭৫ টাকা। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২- ২৩ সালে গোটা বিশ্বে অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্টে ব্যবসার পরিমাণ ৮ লাখ কোটি টাকা। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে যে অ্যান্টি এজিং ট্রিটমেন্ট কতদিন যৌবন ধরে রাখতে পারে?

 

নিজেকে তরুণ রাখতে রূপচর্চার চল আজ থেকে নয়, কয়েক হাজার বছর আগেও ছিল। সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে দ্রোপদী নাকি মধু, গোলাপের পাপড়ি আর লেবুর ছালের লেই মাখতেন। গাধার দুধ, গোলাপজল আর দারুচিনি বাটা মেশানো হতো মিশরের রানি ক্লিওপেট্রার গোসলের পানিতে। ১৬১০ সালে ফরাসি পর্যটক জুয়ান পন ডি লোন ফ্লোডিরায় একটি উষ্ণ প্রস্রবণ দেখিয়ে দাবি করেন যে, ওই প্রস্রবণের পানিতে নাকি যৌবন ধরে রাখা যাবে। যদিও বহু লোকজনের কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়েও যৌবন ফেরাতে পারেননি জুয়ান।

রূপচর্চায় মালামাল-

কয়েকশো বছর পর চিকিৎসকদের হাতে আসে বোটক্স। বোটক্স অর্থাৎ বোটালিনাম টক্সিন। এটা আসলে ইঞ্জেকশন দিয়ে আরও কিছুটা বয়স কম দেখানোর ফর্মুলা। গত ১২ মাসে বিশ্বজুড়ে বোটক্সের ব্যবসা ৭০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বোটক্স ছাড়া অন্য অ্যান্টি এজ ট্রিটমেন্টের ব্যবসা ছাড়িয়েছে পাঁচ হাজার কোটি ডলার। এদের থেকে টাকার অঙ্কে বহুগুণ এগিয়ে কসমেটিক সার্জারি। এক বছরে ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ব্যবসা হয়। আর কসমেটিক থেরাপি তো ক্যানসারের ওষুধের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে।

 

এই ট্রিটমেন্টগুলো নিচ্ছেন কারা? এককথায় বলতে গেলে সবাই। যার ইচ্ছা এবং হাতে টাকা আছে, তিনিই নিচ্ছেন। এদের কারও ইচ্ছে, আরও সুন্দর হওয়ার। কেউ আবার চেয়েছেন ৫০ বছরে এসে ৩০ বছরের লুকস ধরে রাখতে। গ্রাহকদের এই চাহিদাই পূরণ করছেন চিকিৎসকরা। তাতে ফল কতটা হয়েছে, তা যারা করিয়েছেন বা করান, তারাই বলতে পারবেন।

 

বয়সের চাকা কখনও আটকে রাখা যায় না। সময় এলে সকলের বয়স বাড়ে। চামড়া কুঁচকে যায়। শরীরে নানা অসুখ দানা বাঁধে। সেটা জেনেই সকলে অ্যান্টি এজ অপারেশন বা থেরাপিতে গা ভাসাচ্ছেন। বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন সংস্থা এই বাজার ধরতে নেমে পড়েছে। তাদের প্রতিশ্রুতি বয়স আটকাতে না পারলেও তারা বয়সের ছাপ শরীরে পড়তে দেবে না। চামড়া থেকে মুখ – সবটাই থাকবে পঁচিশ – তিরিশ বছর বয়সীদের মতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *