বন্দুক দেখিয়ে ব্যাংক থেকে নিজের টাকা লুট নারীর

আন্তর্জাতিক স্পেশাল

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত বোন। তাকে বাঁচাতে দরকার প্রচুর টাকা। কিন্তু ব্যাংকে ডিপোজিট করে রাখা টাকা আটকে আছে তিন বছর ধরে। আর তাই বাধ্য হয়েই ব্যাংক ডাকাতি করলেন আরেক বোন।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্দুক দেখিয়ে ব্যাংক লুট করা ওই নারীর নাম সালি হাফিজ। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ব্লম ব্যাংকের একটি শাখায় এই ঘটনা ঘটে এবং টাকা লুটের ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

ব্যাংকে টাকা আমানতকারীদের অ্যাডভোকেসি গ্রুপের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার দিন অভিযুক্ত ওই নারী ও তার কয়েকজন সহযোগী বৈরুতে ব্লম ব্যাংকের একটি শাখায় বন্দুক দেখিয়ে কর্মীদের জিম্মি করে এবং পালিয়ে যাওয়ার আগে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি নগদ অর্থ নিয়ে যায়।

ব্লম ব্যাংক বলছে, একজন গ্রাহক এবং তার কয়েকজন সহযোগী একটি বন্দুক নিয়ে আসে এবং মানুষকে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে শাখা ব্যবস্থাপক ও কোষাধ্যক্ষকে টাকা আনতে বাধ্য করে তারা।

ডাকাতির পুরো ঘটনার ভিডিও সরাসরি সম্প্রচার করেন সালি। সেখানে তাকে বন্ধ দরজার বাইরে থেকে টাকা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ব্যাংক কর্মচারীদের বকা-ঝকা করতে দেখা গেছে।

ভিডিওতে তিনি বলেন, আমি সালি হাফিজ। আমি আমার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যুপথযাত্রী বোনের ডিপোজিটের টাকা নিতে এসেছি। আমি কাউকে মারতে বা আগুন জ্বালাতে আসিনি। আমি আমার অধিকারের জন্য এসেছি।

ডাকাতির পর স্থানীয় এক সাংবাদিককে সালি হাফিজ জানান, তার পরিবার ব্যাংকে ২০ হাজার ডলার ডিপোজিট করলেও তিনি ১৩ হাজার ডলার মুক্ত করতে পেরেছেন। তার বোনের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার ডলার প্রয়োজন।

সালি হাফিজ আরো বলেন, ভাগ্নের কাছ থেকে নেয়া খেলনা বন্দুক দেখিয়ে তিনি এই ডাকাতি করেছেন। এএফপি’র প্রতিনিধি জানায়, ওই নারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আসার আগেই ব্যাংকের জানালা ভেঙে পালিয়ে যান।

তিনি বলেন, ‘আমার হারানোর আর কিছুই নেই, আমি রাস্তার শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।’

সালি জানান, দু’দিন আগে ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে দেখা করেছিলেন তিনি, কিন্তু তাতে পর্যাপ্ত সমাধান মেলেনি।

তার ভাষায়, ‘আমি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে আমি আমার কিডনি বিক্রি করতে যাচ্ছি যাতে আমার বোনের চিকিৎসা করা যায়।’

ব্লম ব্যাংক নিশ্চিত করেছে, ওই গ্রাহক তার বোনের চিকিৎসার জন্য তার অর্থ চেয়েছিল। ব্যাংকটি দাবি করেছে, সেসময় তাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং নথিপত্র সরবরাহ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।

সালি হাফিজের মা হিয়াম হাফিজ স্থানীয় টিভিকে বলেন, ‘ব্যাংকে আমাদের শুধু এই টাকাই ছিল। আমার মেয়েকে এই টাকা নিতে বাধ্য করা হয়েছে – এটা তার অধিকার, এটা তার অ্যাকাউন্টে আছে – তার বোনের চিকিৎসা করার জন্য।’

লেবাননের কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

প্রসঙ্গত,  ২০১৯ সাল থেকে লেবানন তার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটে মুখে রয়েছে। এ অবস্থায় দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রার দামও তলানিতে পড়ে গেছে দেশটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *