গ্রাম্য বালক মিখাইল যেভাবে হয়েছিলেন সোভিয়েতের প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক

আগস্ট ৩১, ২০২২ ৯:১০ পূর্বাহ্ণ

সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ মারা গেছেন। ৯১ বছর বয়সী মিখাইল রাশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মিখাইল ছিলেন রাশিয়া ও বর্তমান ইউক্রেনের একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামের সন্তান। তার হাত ধরেই বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস ভিন্নভাবে রচিত হয়।

মিখাইল ছিলেন পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। তিনি পারমাণবিক যুদ্ধের বিপদ সম্পর্কে গভীরভা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। যার ফলে পশ্চিমাদের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পর্ক নির্ধারণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই ভাগে বিচ্ছিন্ন ইউরোপকে উপড়ে ফেলে হাজার হাজার মিলিয়ন মানুষকে এক করেছেন গণতান্ত্রিক বিশ্বাসে নেতৃত্বদানকারী মিখাইল।

মিখাইল গর্বাচেভ ১৯৮৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন। তখন ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকসকে (ইউএসএসআর) বিপজ্জনক সম্রাজ্য হিসেবে দেখা হতো। ছয় বছরের ক্ষমতাকালেয় তিনি বিশ্বের স্নায়ু যুদ্ধের সমাপ্তি টানেন। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন রুখতে ব্যর্থ হন তিনি। তখনই তার আর্থ-সামাজিক সংস্কার নীতি প্রকাশ পায়।

মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যু এমন সময় হয়েছে যখন রাশিয়ার জীবন থেকে মুক্ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হারিয়েছে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বাতিল হয়ে গেছে।

১৯৮৫ সালে কনস্ট্যান্টিন চেরনেঙ্কোর মৃত্যুর পর গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের নতুন ধাঁচের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।

গর্বাচেভ তার পূর্বসূরীদের তুলনায় ছিলেন তরুণ এবং সক্রিয়। তিনি সহজে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারতেন। মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারতেন। হাসি ও মনোযোগ দ্বারা মানুষের সংঘবদ্ধ করতেন। তখন সমাজতন্ত্রের পরাশক্তির নতুন নেতাকে এভাবেই টেলিভিশনে উপস্থাপন করা হতো। তবে গর্বাচেভ যে অর্থনীতি পেয়েছিলেন তার ধরে রাখতে ব্যর্থ হন।

গর্বাচেভ বুঝতে পারেন যে, প্রতিরক্ষায় ব্যয়বহুল বাজেট দিয়ে স্নায়ু যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বিশ্বনেতাদের কাছে সম্পর্ক বাড়াতে লাগলেন মিখাইল। তিনি বিশ্বনেতাদের বোঝালেন সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের জন্য হুমকি নয়।

তৎকালীন আরেক পরাশক্তি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক অস্ত্র কমানোর ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তার প্রথম দুই বছরের নেতৃত্বের মধ্যে রোনাল্ড রিগানের সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েট নিউক্লিয়ার ফোর্স ট্রিটিতে সাক্ষর করেন গর্বাচেভ। তারা ঐ চুক্তিতে পারমাণবিক অস্ত্র কমানো ও পারমাণবি অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা কমানোর শর্ত যুক্ত করেন।

চার বছর পর তিনি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে দ্য স্ট্র্যারেটেজিক আর্মস রিডাকশন ট্রেটি নামের আরেকটি চুক্তি করেন। এতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার কমে যায়।

চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয়ের কারণে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতি তার ঘৃণার উদ্ভূত হয়েছিল। এ ঘটনার পর ১৬ দিন জনসমক্ষে আসেননি গর্বাচেভ। তবে পারমাণবিক শক্তির ভয়াবহ পরিণতি প্রকাশের বিষয়ে এটি তার জন্য একটি মোক্ষম ধাপ ছিল। চেরনোবিল ব্যর্থতাগুলো উন্মোচিত হওয়ায় তার সংস্কারের গতিকে ত্বরান্বিত করবে বলে মনস্থির করেন গর্বাচেভ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *