মর্যাদা ও অধিকার

ইসলামে প্রবীণদের মর্যাদা ও অধিকার

ধর্ম

অক্টোবর ৬, ২০২৩ ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

মানুষের জীবনে বহুবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো বার্ধক্য। মানুষের জীবন শৈশবকাল, যৌবনকাল ও বৃদ্ধকাল এ তিনটি স্তরে বিভক্ত এবং মানুষ শৈশব ও যৌবনের গণ্ডি পেরিয়ে বার্ধক্যের কোলে ঢলে পড়ে। একবিংশ শতকের প্রারম্ভে বৃদ্ধদের প্রতি মানবাধিকারমূলক ব্যবস্থা হিসাবে জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে তার দেড় হাজার বছর আগে পৃথিবীর বুকে আভির্ভূত শান্তির ধর্ম ইসলাম বিশ্ববাসীর কাছে প্রবীণদের প্রতি বহু কল্যাণকর দায়িত্ব ও কর্তব্যের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।

হজরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রা.) একদিন হজরত রাসূলে করিম (সা.)-এর কিছু দাড়ি মোবারক পাকা দেখে বিচলিত হয়ে যখন জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। তখন রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, হ্যাঁ, সূরা হুদ আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে’-(আল হাকেম, তিরমিজি)। সূরা হুদকে বৃদ্ধ হওয়ার কারণ বলার পেছনে যুক্তি এই যে, ওই সূরায় কিয়ামতের ভয়াবহতার কথা ব্যাপকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিয়ামত সংক্রান্ত চিন্তায় চিন্তিত হওয়ার কারণে রাসূল (সা.)-এর চেহারায় বার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। কেয়ামতের এ ভয়াবহতা কুরআনের অপর সূরা আল মুজাম্মিলে ‘ইয়াউমা ইয়াজআলুল উইলদানা শী-ইবান’ অর্থাৎ ওই দিন যা শিশুদের বৃদ্ধ করে ফেলবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রবীণরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান, মর্যাদাদান ও মূল্যায়ন করার মধ্যেই সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ নিহিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তির সম্মান দেব না? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে দীর্ঘায়ু লাভ করে এবং সুন্দর আমল করে-(মুসনাদে আহমদ)। অন্য রেওয়ায়েতে নিকৃষ্ট মানুষ কে? এর উত্তরে রাসূল (সা.) বলেছেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে-(তিরমিজি)।

অতিবৃদ্ধরা পৃথিবীর জমিনে আল্লাহর কয়েদি। ইয়াতিম, মিসকিন ও কয়েদিদের সম্মান করা যেমনি সওয়াবের কাজ ঠিক তেমনি বৃদ্ধদের সম্মান করাও আতিশয় সওয়াবের কাজ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই শুভ্র চুলবিশিষ্ট মুসলিমকে সম্মান করা মহান আল্লাহকে সম্মান করার শামিল-(আবু দাউদ)। রাসূল (সা.) আরও বলেন, যদি কেউ বৃদ্ধ মানুষদের সম্মান করে আল্লাহ তার বৃদ্ধ বয়সে সহযোগিতার জন্য একজন ব্যক্তিকে নিয়োজিত করে দেবেন-(তিরমিজি)।

মনে রাখতে হবে, আজ যারা নবীন তারাই আগামীতে প্রবীণ হবে। কেননা, আমাদের বয়স যত বাড়ে আমরা তত বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হই। কেউ বৃদ্ধ হতে চায় না কিন্তু বৃদ্ধ হতে হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের শরীরে ‘কোলাজেন’ নামক তন্তুজাতীয় পদার্থ তৈরির সক্ষমতা কমে যায় বলে মানুষ বৃদ্ধ হয়, কর্মক্ষমতা কমে যায়, স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, চিন্তাশক্তি কমে যায়। প্রবীণরাই সভ্যতা ও সমাজ গঠনের কারিগর। প্রবীণদের চিন্তা, মেধা, শ্রম ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে আজকের নবীন জনগোষ্ঠী দাঁড়াতে পেরেছেন। কাজেই প্রবীণদের অবহেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের আশপাশে আমরা অনেক সময়ই দেখতে পাই প্রবীণরা অত্যন্ত অবহেলিত, নির্যাতিত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও চরম গর্হিত দৃশ্যপট। এ দৃশ্যপট বদলিয়ে প্রবীণদের পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদাদানে নবীনদের নৈতিক দায়িত্ব নিতে হবে এবং সঙ্গে প্রবীণদের মর্যাদাও টিকে থাকার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *