অভিবাসীদের ২২ লাখ ইউরো লুট করেছে গ্রিক সীমান্তরক্ষীরা

অভিবাসীদের ২২ লাখ ইউরো লুট করেছে গ্রিক সীমান্তরক্ষীরা

আন্তর্জাতিক

মার্চ ১৪, ২০২৩ ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

ঠাঁই মেলেনি কাঙ্ক্ষিত দেশে। উল্টো দিতে হয়েছে স্বপ্ন দেখার খেসারত। খোঁয়ায় হয়েছে সর্বস্ব। পাশবিক নির্যাতন তো আছেই, শেষ সম্বলটুকুও লুটে নিয়েছে গ্রিসের সীমান্তরক্ষীরা। একদিন-দুদিন নয়।

গ্রিক সীমান্তের নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এই লুটতরাজ। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অভিবাসীরা এখানে মুখোমুখি হন ভয়াবহ বাস্তবতার। আটকে ধরে সীমান্তরক্ষীরা রেখে দিচ্ছেন টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন সঙ্গে সম্ভ্রমও। বিবস্ত্র অবস্থায়ই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে তুরস্কে। কেউ পৌঁছাচ্ছেন জীবিত কারও মরদেহ।

এখন পর্যন্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে ২২ লাখ ইউরো সমপরিমাণের অর্থ। সম্প্রতি (৭ মার্চ) এমন তথ্যই উঠে এসেছে স্প্যানিশ দৈনিক এল পাইসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি অভিবাসী নিরুৎসাহকরণ ও প্রতিরোধে অভিনব পন্থা।

এল পাইসের তদন্ত অনুসারে, গ্রিস কর্তৃপক্ষ অভিবাসী এবং উদ্বাস্তুদের কাছ থেকে কমপক্ষে ২২ লাখ (২.২ মিলিয়ন) ইউরো (২৩ লাখ ডলার) সমপরিমাণ অর্থ চুরি করেছে। সীমান্তসংলগ্ন ইভ্রোস প্রদেশের অভিবাসন সম্পর্কিত বেসরকারি সংস্থা, আইনজীবী এবং অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে এল পাইস জানায়, চুরি হওয়া নগদ অর্থের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশিও হতে পারে। কারণ নির্বাসন কিংবা ডাকাতি কোনোটিই স্থানীয় সংস্থা দ্বারা নিবন্ধিত নয়। নগদ পরিমাণের পাশাপাশি লুট করা হতো অভিবাসীদের একমাত্র সম্পদও। যেমন-মোবাইল ফোন, গয়না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ ধরনের ডাকাতি ২০১৭ সালেও ছিল। তবে কালেভদ্রে। ২০২২ সাল নাগাদ নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলনে পরিণত হয়। গ্রিক ন্যাশনাল কমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্যানুসারে, ৯৩ শতাংশ ফিরিয়ে দেওয়া অভিবাসীদের সবার জিনিসপত্র-অর্থ-সম্পদ লুট করা হয়। একই সময়ে ৮৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বর্ডার ভায়োলেন্স মনিটরিং নেটওয়ার্কের সিনিয়র নীতি বিশ্লেষক হোপ বার্কার জানায়, কখনো কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোন রাখে, কখনো কখনো তা নষ্ট করে দেয়। কিন্তু টাকা নিজেদের কাছেই রাখে। কাউকে টাকা-পয়সা লুকাতে দেখলে কপালে জোটে আরও মারধর।

এল পাইস তদন্ত বলছে, আশ্রয়ের অনুরোধ পাত্তা না দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পলিশ স্টেশন, গুদাম বা সামরিক ব্যারাকের মতো জায়গায়। অতঃপর তদের ভেলায় করে পাঠানো হয় তুরস্কে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি কর্তৃক গৃহীত একটি অভিযোগেও ঠিক এমনটাই উঠে আসে। যেখানে দুজন কিউবার নাগরিক আশ্রয় চাইতে একটি গ্রিক অফিসে গিয়েছিলেন। দুজনের একজন ইউডিথ পেরেজ আলভারেজ জানান, সেখানকার এজেন্টরা আমার কাছে টাকাই খুঁজছিল, আমি নিশ্চিত। তারা আমার অন্তর্বাস পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক ইভা কসে জানান, অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসীদের ঠেকাতে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল, সম্পদ, অর্থ ছিনিয়ে নিচ্ছে সীমান্তরক্ষীরা। তারা তাদের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়ে তাদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলছে।

তিনি বলেন, তাদের নগ্ন অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অপমানিত ও হতাশ করা হচ্ছে। সীমান্তরক্ষীরা মনে করে এমন আচরণ করলে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা গ্রিসে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। তাই তারা এই কৌশল ব্যাবহার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *