নভেম্বর ২৫, ২০২২ ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ
এক রিচার্লিসনের ২ গোলের কাছেই হার মানতে হলো সার্বিয়াকে। শক্তির দিক দিয়ে ব্রাজিলের চাইতে যোজন যোজন ফারাক দুরত্বে অবস্থান সার্বিয়ার। সেই সার্বিয়া নেইমারদের আটকে রাখে ৬২ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু এর পর আর সাম্বা ছন্দের কাছে পেরে উঠতে পারেনি সার্বিয়া। অবশেষে ২-০ ব্যবধানের হার মেনে নিতে হয় তাদের।
ম্যাচে অসাধারন দুটি গোল করে একাই ব্রাজিলকে জয় উপহার দেন ব্রাজিলের নতুন সেনসেশন রিচার্লিসন। তার পায়ের ছন্দে বিশ্ব দেখলো ব্রাজিলের সেই নান্দকি ফুটবলের আরেক ঝলক বাইসাইকেল শট।

এই জয় দিয়ে সমর্থকদের উল্লাসের উপলক্ষ্য এনে দেন রিচার্লিসন। গোল পোস্ট ফাঁকা পেয়ে নিখুঁত শটে তিনি ১ম বলটি জালে জড়ান। তারপরে সেই ২ গোলের শটটি এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলের একটি হতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। অসাধারণ দক্ষতার সেই সটের বল জড়ায় সার্বিয়ার গোলে। যেন স্বপ্নিল এক ছন্দময় ফুটবল দেখলো বিশ্ব।
কিভাবে এই শট আসলো বা কি করে এর আবিষ্কারই হলো চলুন জেনে নেই।
বাইসাইকেল কিক কি?
এই কিকের সময় পা দুটি বাইসাইকেল চালানোর মতো হয়ে থাকে বলেই এর নাম বাইসাইকেল কিক বা সট। একে ওভারহেড কিকও বলা হয়ে থাকে।
বাইসাইকেল কিক দেখলে এমনিতেই চোখ জুড়িয়ে যায়। টিভি বা পত্রিকায় এমন গোলের সৌন্দর্য্য বর্ণনা চলে বহুদিন। যেমন আজ আবার করে দেখালে রিচার্লিসন।
বাইসাইকেল কিকের জন্ম কথা?
ফুটবলের জন্মলগ্ন থেকেই বাইসাইকেল কিক চালু ছিল। ব্রাজিলেই যার জন্ম। ৩০ এর দশকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড লিওনিদাস ডি সিলভা যখন অহরহ এটি করে দেখাতে শুরু করলেন তখন থেকে তাকেই বাইসাইকেল কিকের জনক হিসেবে আখ্যা দেয় বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম।

লিওনিদাস ডি সিলভা
১৯৩৮ বিশ্বকাপে ৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন লিওনিদাস। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রয়াত এই ব্রাজিলের ১০০তম জন্মদিনে তাকে সম্মান জানাতে বাইসাইকেল কিক নিয়ে ডুডল করেছিল গুগল।
বাইসাইকেল কিকে যারা বিখ্যাত?
কিন্তু লিওনিদাসের পর আবারো যেন ফুটবল থেকে হারিয়ে যায় এই অ্যাকরোবেটিক কিক। অবশেষে এটিকে মানুষের মনেই গেঁথে দেয়ার কাজটি করেন কালো মানিক খ্যাত ফুটবল রাজা পেলে।
তার এই কিকের ভিডিও ফুটেজ খুব কম পাওয়া যায়। তবে স্থির চিত্রে সেসব ধরে রাখা হয়েছে।
১৯৬৮ সালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে করা পেলের বাইসাইকেল কিকের ছবিটি ইতিহাস হয়েই আছে। শূন্যে ভাসছে বল শূন্যে ভাসছেন পেলে। যেন থমকে আছে সময় থমকে আছে সব প্রতিরোধ।

পেলে
কিশোর বয়সেই এই কিকের পূর্ণতা দেন কালো মানিক। ফুটবল গবেষকরা বলে থাকেন এখন পর্যন্ত পেলের বাইসাইকেল কিকগুলোই সবচেয়ে নিখুঁত। ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে এরপর রোনালদিনহো ও রিভালদোকে দেখা গেছে মাঝে মাঝে এই কিকে দুর্দান্ত গোল করতে।
এদিক দিয়ে সিআরসেভেনের গোলের মাহাত্ম্য অন্যরকম। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো বড় আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি করেছিলেন এমন গোল।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
সম্প্রতি ফুটবল ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো লিওনেল মেসিও করেছিলেন এমন গোল। তার এই গোলটি নিয়ে এখন আলোচনা সব জায়গায়। ফ্রেঞ্চ লিগে ক্লেমন্ত ক্লাবের বিপক্ষে পিএসজির হয়ে গোলটি করেন মেসি।

লিওনেল মেসি
নতুন ফরম্যাটে চালু হওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২৫ বছর পূর্তিতে দর্শক জরিপে সেরা গোলের পুরস্কার পেয়েছিল ওয়েন রুনির ম্যানসিটির বিপক্ষে করা বাইসাইকেল কিকে করা গোলটি।

রিচার্লিসন
আর কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এ এসে এই কিকের পুনরাবৃত্তি ঘটালেন সেই ব্রাজিলেরই রিচার্লিসন। যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষের মনে ঠাই করে নিলেন তিনি। নিজের পাশাপাশি সাফল্য এনে দিলেন দলকে।