বহুল প্রতিক্ষিত উড়ালসড়ক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় স্পেশাল স্লাইড

সেপ্টেম্বর ২, ২০২৩ ৪:৪২ অপরাহ্ণ

বহুল প্রতীক্ষিত দ্রুতগতির উড়ালসড়ক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটায় বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।

দ্রুতগতির এই উড়ালসড়ক দিয়ে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১০ মিনিটেই পৌঁছানো যাবে ফার্মগেটে। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে পথচারী, মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশাসহ তিন চাকার যানবাহন উড়াল সড়কে উঠতে পারবে না। দ্রুতগতিতে ও নিরাপদে গাড়ি চলাচলের জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।

বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাওলা প্রান্ত থেকে গাড়িতে করে উড়ালসড়কে আগারওগাঁ আসেন। উড়ালসড়কে টোল পরিশোধ করে বিজয় সরণি প্রান্ত দিয়ে ফার্মগেট নামেন তিনি।

এরপর তিনি আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে যান। সেখানেও উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও  সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

উড়ালসড়ক ব্যবহার করতে টোল দিতে হবে। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও হালকা ট্রাককে ৮০ টাকা, বাস ও মিনিবাস ১৬০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩২০ টাকা এবং ভারী ট্রাক বা ট্রেইলরে ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। এটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কারণে টোলের টাকা  থেকে নির্মাণ ব্যয় তোলা হবে।

উড়ালসড়কটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল উড়ালসড়ক ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি সংযোগ সড়ক  রয়েছে। সংযোগ সড়কসহ উড়ালসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। বিমানবন্দর এলাকায় দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি ও ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে রয়েছে সংযোগ স্টেশন। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীর সংযোগের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এজন্য আপাতত এ দুটি সংযোগ বন্ধ থাকবে।

বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট এই সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে যানজটের কারণে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগত। কোনো কোনো সময় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টাও লেগে যায়। তবে উড়ালসড়কে সময় লাগবে ১০  থেকে ১২ মিনিট।

বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যেতে কাওলা, কুড়িল আর গলফ ক্লাবে ওঠার ব্যবস্থা থাকবে। একদিকে নামা যাবে বনানী ও মহাখালী আর ফার্মগেটে। অন্যদিকে, তেজগাঁও থেকে বিমানবন্দর যেতে বিজয় সরণি ওভারপাসের দুই প্রান্ত আর বনানী থেকে থাকবে ওঠার ব্যবস্থা। নামা যাবে মহাখালী, বনানী, কুড়িল ও বিমানবন্দর এলাকায়।

উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর

নির্মাণ শেষে সম্পূর্ণ উড়ালসড়কটি চালু হলে কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যানবাহন চলবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ঐ বছরের জুন মাসে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটি  ২০১৬ সালে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু উড়ালসড়কের নকশা বদল, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা পাঁচ বার পিছিয়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

প্রকল্পটিতে থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানির ৫১ শতাংশ, চীন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যা কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশনের ১৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। নির্মাণ পরবর্তী সাড়ে ২১ বছর উড়ালসড়কের টোল আদায় করে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগের টাকা তুলে নেবে।

/এসএস/শীখ/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *