মহারাজা শশাঙ্ক ৫৯৩ খৃষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেন

মহারাজা শশাঙ্ক ৫৯৩ খৃষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করেন

মতামত স্পেশাল

এপ্রিল ১৫, ২০২৪ ৭:৫৩ অপরাহ্ণ

আমি লেখক নই, লেখকের আত্মীয়দের লিস্টেও আমার নাম নাই। তবে ফেসবুকের লেখকদের মাত্রাতিরিক্ত জ্ঞান চর্চার কপি পেস্ট আমাকেও কিছু লিখতে বাধ্য করে। ৮ আর ২০ রাকাত তারাবীর নামাজের জ্ঞান রমজান মাসের আগে আগে কদিন গুঁতিয়ে গেলো হাঁফিয়ে! এরপর পুরো রমজান গেলো অসংখ্য ধর্মের জ্ঞান দেয়া ধার্মিকের জ্ঞানের স্রোতে ভেসে ভেসে! ঐ রেশ না কাটতেই বাঙালীর নববর্ষের আগের দিন থেকে শুরু হলো আকবর বন্দনা।

এক ওলী তো বলেই দিলেন, “আজানের মধ্যে আকবর তো এমনিতেই বলা হয় না, আল্লাহর পরেই আকবর, তারপর মুহাম্মদ!”

যাহোক, আকবর তত্ত্বের দর্পচূর্ণ করার জন্য খোলা মন নিয়ে আমি এই ছোট্ট একটি প্যারা লিখেছি। ভালো না লাগলে নিজ গুনে দয়া করে ক্ষমা করবেন।

প্রসঙ্গ: বঙ্গাব্দ কখন থেকে চালু হয়?

মহামতী সম্রাট আকবরের রাজধানী ছিলো দিল্লিতে, তিনি সেখানে কোনো সন চালু করেননি। দিল্লির পাশে পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান সেখানেও তিনি কোনো সন চালু করেননি। মধ্যপ্রদেশ বা বিহারেও তিনি কোনো সন চালু করেননি। উত্তর ভারত, মধ্য ভারত, দক্ষিন ভারত বাদ দিয়ে তিনি বঙ্গাব্দ চালু করলেন বাংলায়, যেখানে তাঁর কোনো শাসন কর্তৃত্ব ছিলো না! সেটা কি যুক্তিযুক্ত?

অথচ, ১৬০৮ খৃষ্টাব্দের আগে বাংলা পুরোপুরি মোগল শাসনের অধীনেও আসেনি। আর সম্রাট আকবর তো মারা গিয়েছেন ১৬০৫ খৃষ্টাব্দে!

পহেলা বৈশাখ যে শুধু দুই বাংলায় পালিত হয় তা-ই নয়, আসামে, নেপালে, পাহাড়ের বিভিন্ন উপজাতিরাও একই দিনে বাঙলা নববর্ষ পালন করে থাকেন। নেপাল, আসাম কখনোই আকবরের শাসনাধীন ছিলো না। বাংলার বারো ভূইয়ারা কখনই মোগল শাসন মেনে নেননি। আকবরের জীবনী ‘আইন ই আকবরী’তে বঙ্গাব্দ চালু করার কথা লেখা নাই, আকবরের কোনো জীবনীতেও বলা হয় নাই তিনি বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন। আর সবচেয়ে বড়ো কথা তিনি তো বাঙ্গালিই ছিলেন না, তাঁর শাসনকাল ছিলো ১৬৫৬-১৬০৫ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত। তাঁর সিংহাসনে বসার দিন থেকে বাঙলা তারিখ গণনা করলেও আজ ২০২৪ খৃষ্টাব্দে এসে তা ৪৭৯ বঙ্গাব্দ হওয়ার কথা!

হযরত মুহাম্মদ এর হিজরত কালে ৬২২ খৃষ্টাব্দের সময় থেকে বঙ্গাব্দ চালুর দিন ধরলেও বর্তমানে তা ১৪০২ বঙ্গাব্দ হওয়ার কথা। অথচ বাংলা সন চলছে ১৪৩১। কোনোভাবেই তা মেলে না। কেউ কেউ বাংলা আর হিজরী সনের মিশ্রনে এতোটা গোঁজামিল তত্ব দাঁড় করান, যার সাথে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নাই।

আকবরের বহু আগে থেকে বঙ্গাব্দ চালু ছিলো, তার প্রমাণ কালিদাসের মহাভারতে ১০০২ বঙ্গাব্দ লেখা আছে। বাকুড়ার একটি শিব মন্দিরে প্রতিষ্ঠার তারিখ লেখা আছে ১০২ বঙ্গাব্দ। বৃন্দাবন চন্দ্র পুততুন্ড রচিত ‘চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস’ বইতে ৬০৬ বঙ্গাব্দ লেখা আছে। বিজয় গুপ্তের পদ্মপুরান, ভারত চন্দ্র রায়গুনাকরের অন্নদা মঙ্গল সহ বিভিন্ন গ্রন্থে বৈশাখ মাসে বছর আরম্ভের কথা পরিষ্কার করে লেখা আছে।

ইতিহাসের বিকৃত করা লোকজন বলে থাকে: “সম্রাট আকবর খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা সন চালু করেছিলেন, হিজরি ও ফসলী সনের সংমিশ্রণে।”

কিন্তু দিন তারিখ দেখে কেউ ফসল তোলে না, ফসল তোলার সময় হলেই তোলে। খাজনা আদায়ের সাথে সন গণনার কোনোভাবেই সম্পর্ক নাই। যখন ফসল উঠবে তখনই খাজনা হবে। হিজরি চলে চন্দ্রমাসে, বাংলা চলে সৌর মাসে, দুটি মিলিয়ে একটি করা অবাস্তব। আকবর যদি হযরত মুহাম্মদ এর হিজরতকে স্মরণে রাখার চিন্তা করতেন, তবে তিনি বাংলা মাসগুলোর নামও আরবী ভাষায় রাখতেন, তা কিন্তু হয়নি। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত একটাই, সম্রাট আকবরের বাংলা সন চালু করার কোনো প্রশ্নই আসে না।

তিনি চালু করেছিলেন তারিখ ই ইলাহী। কিন্তু তাঁর প্রতিষ্ঠিত দ্বীন ই ইলাহীর মতো সেটাও তাঁর মৃত্যুর সাথেই মারা যায়।

তাহলে কে বাংলা সন চালু করেছিলেন? তার একটাই উত্তর: তিনি হলেন বাংলার সার্বভৌম শাসক মহারাজা নরেন্দ্রাদিত্য শশাঙ্ক। যিনি ৫৯৩ খৃষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন। ২০২৪ খৃষ্টাব্দ থেকে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের সময় বাদ দিলে ৫৯৩ বছর হয় – হিসাব নির্ভুলভাবে মিলে যায়।

ড. নাজমুল করিম
সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য
কেন্দ্রীয় কমিটি, গণতন্ত্রী পার্টি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *