মুরাদ শাহ জাবাল, ঝিনাইগাতী (শেরপুর)
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ নড়বড়ে জোড়াতালির বাঁশের খুটিতে চলছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফলে আকাশে মেঘ জমলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ঝিনাইগাতী উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করেন।
এসময় বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে জোড়াতালির বাঁশের খুটি দিয়েও শতশত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় পিডিপির প্রায় ১৩ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এ ছাড়া কৃষি কাজে ব্যবহৃত সেচ পাম্পের সংযোগ রয়েছে প্রায় ৬শ। এসব সংযোগের সিংহভাগ দেওয়া হয়েছে জোড়াতালির বাঁশের খুটি কিংবা গাছের উপর দিয়ে।
এতে সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এসময় ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আবার মাঝে মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। কোন কোন সময় বিদ্যুতের ছেড়া তারে জড়িয়ে মারাও পড়ছেন মানুষ। এমন অভিযোগও রয়েছে অহরহ।
এদিকে এসব দুর্ঘটনা এড়াতে ২০২১ সালে নড়বড়ে বাঁশের খুটি ও পুরনো সিমেন্টের খুটিগুলো সম্প্রসারণ করে নতুন সিমেন্টের খুঁটি স্থাপনের কাজ হাতে নেয় সরকার। এ উদ্দেশ্যে ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রজেক্টের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত ঠিকাদার ২০২১ সালে কাজও শুরু করেন।
কিন্তু কাজ চলছে ধীরগতিতে। অভিযোগ রয়েছে কাজের কোন অগ্রগতি নেই। খুড়িয় খুড়িয়ে চলছে খুটি সম্প্রসারণের কাজ। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে নড়বড়ে বাঁশের খুটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ দৃশ্য দেখা গেছে। আর এতে জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে এসেছে। প্রজেক্টের ময়মনসিংহ বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী এসব খুটি সম্প্রসারণের কাজের দেখভাল ও দিক নির্দেশনায় ঠিকাদারের লোকজন কাজ করে থাকেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রজেক্টের কাজ হওয়ায় ঠিকাদারের লোকজন তাদের ইচ্ছা মাফিক কাজ করেন। এতে অনেকটাই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।
ঝিনাইগাতী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন বলেন, উপজেলার গ্রামাঞ্চলগুলোতে দুর্বল ব্যবস্থার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। বিদ্যুতের ছেড়া তারে জড়িয়ে মানুষও মারা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খুটি সম্প্রসারণের কাজেও লক্ষ করা গেছে ধীরগতি। জনস্বার্থে খুটি সম্প্রসারণের কাজ দ্রুত করার দাবি জানান তিনি।
ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ মোখলেছুর রহমান খান বলেন, দুর্বল ব্যবস্থার কারণে আকাশে মেঘ জমলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হয় দুর্ঘটনা এড়াতে। ফলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না ব্যবসায়ীসহ উপজেলাবাসীদের।
তিনি বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নত প্রযুক্তিতে করার পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে পুরাতন খুটি সম্প্রসারণের কাজ করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ঠিকাদার জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েলের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঠিকাদারের সাইট ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ২০২১ সালে কাজ শুরু হয়। কাজ শেষের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুতের খুটি সরঞ্জামাদি সরবরাহ না পাওয়ায় দ্রুত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঝিনাইগাতী আবাসিক প্রকৌশলী রুকুনুজ্জামান বলেন, এসব প্রজেক্টের কাজ দেখভালের দায়িত্ব ময়মনসিংহ বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলীর। তার দিক নির্দেশনায় কাজ করা হচ্ছে। আমাদের উপর দেখভালের কোন দায়িত্ব নেই। থাকলে এলাকার গুরুত্ব অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হতো।
এছাড়া গত একবছরে ঠিকাদার কি পরিমাণ কাজ করেছেন তাও তাদের জানা নেই। কারণ এখনও কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এবিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ প্রজেক্ট এরিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হান নবী খানের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।