সারাবিশ্বে প্রতিনিয়তই উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। এর ফলে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে।
বৈশ্বিক গণস্বাস্থ্য ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের (আইএইচএমই) সবশেষ গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রথম সারির আন্তর্জাতিক পিআর রিভিউ সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিতও হয়েছে সেই গবেষণা প্রতিবেদনটি।
আইএইচএমই’র গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫৩ কোটি; কিন্তু ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে পৌঁছাবে ১৩০ কোটিতে।
জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যত ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন, তাদের ৯০ ভাগই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের মতে, শারীরিক স্থুলতা বা অতিরিক্ত শারীরক ওজন যাদের—ওজন না কমালে জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের শীর্ষ গবেষক এবং এই গবেষণা প্রবন্ধের প্রধান লেখক লিয়েন অং ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে এ সম্পর্কে জানান, নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের দ্রুত পরিবর্তন এবং শাকসবজি, ফলমূল ও সাধারণভাবে উৎপাদিত আমিষজাত খাদ্যের পরিবর্তে ক্রমশ প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর বাড়তে থাকা নির্ভরশীলতাই আসন্ন এই সংকটের জন্য প্রধানত দায়ী।
দ্য গার্ডিয়ানকে লিয়েন ওয়েং বলেন, ‘গত ৩০ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকজন তাদের দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত দৈনন্দিন খাবার থেকে সরে আসছে। একসময় তাদের খাদ্যতালিকায় মাংসের পাশাপাশি মাছ, ফলমূল, শাকসবজিরও প্রাধান্য থাকত; কিন্তু নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রভাবে এখন তারা ক্রমশ ফাস্টফুড ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি ঝুঁকছে। মূলত এই ব্যাপারটিই আগামী তিন দশকে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ করার ক্ষেত্রে সরাসরি দায়ী থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডায়াবেটিস এখন আর কোনো রহস্য নয়। গত শতকেই ডায়াবেটিসের সংজ্ঞা, কী কারণে এটি হয় এবং এর প্রতিকার বা প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু সামাজিক পরিস্থিতির কারণেও যে ডায়াবেটিসের বিস্তার ঘটতে পারে— তা আমরা ধরতে ব্যর্থ হয়েছি।’