সিঙ্গাপুরে বিদেশিদের শতকোটি ডলারের সম্পদ জব্দ

সিঙ্গাপুরে বিদেশিদের শতকোটি ডলারের সম্পদ জব্দ

আন্তর্জাতিক স্লাইড

আগস্ট ১৮, ২০২৩ ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ

ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো অ্যান্টি মানি লন্ডারিং অপারেশনের সাক্ষী হলো সিঙ্গাপুর। মঙ্গলবার দেশটির অভিজাত এলাকায় একযোগে অভিযান চালায় সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ)। ট্যাংলিন, বুকিত টিমাহ, অর্চার্ড রোড, সেন্টোসা এবং রিভার ভ্যালির বিলাসবহুল অ্যাপার্টম্যান্টগুলোয় চলে জোরেশোরে তল্লাশি।

নিরাপত্তা বাহিনীর আচমকা হানায় জব্দ হয় ১০০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ। ৯৪টি ভূসম্পত্তি, ৫০টি গাড়ি, ২৫০টি নামিদামি ব্র্যান্ডের ব্যাগ, ঘড়ি, ২৭০টি মূল্যবান অলংকার, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, মদের বোতল, নগদ অর্থসহ ১১টি গুরত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করা হয়। ঘটনায় এখন পর্যন্ত এক নারীসহ ১০ পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়। অপরাধে যুক্ত সংশ্লিষ্ট দোষীদের বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছর।

আটক ব্যক্তিরা চীন, তুরস্ক, কম্বোডিয়া, সাইপ্রাস ও ভানুয়াতুর নাগরিক। তাদের মধ্যে আটজন এখনো পলাতক এবং পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে’ রয়েছেন। ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রায় ৪০০ জনের বিশাল দল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। এতে বাণিজ্য বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, স্পেশাল অপারেশন্স কমান্ড এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এএফপি, রয়টার্স, দ্য স্ট্রেট টাইমস।

অন্যদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার হয়ে আসা এসব অর্থের উৎস দেখানোর জন্য জাল কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এমন সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশ ফোর্সের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বুধবার পুলিশের দেওয়া আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানা যায়, ঘটনায় জড়িত চক্রটি ‘জালিয়াতি, প্রতারণা এবং অনলাইন জুয়াসহ’ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। বেশ অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অপরাধচক্রের অস্বাভাবিক লেনদেনে সন্দেহ হয় গোয়েন্দাদের।

শুরু হয় পুলিশের চুলচেরা অনুসন্ধান। অপরাধীদের অর্থ স্থানান্তর ঠেকাতে ৩৫টির বেশি অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই অ্যাকাউন্টগুলোয় ১১০ মিলিয়নের বেশি অর্থ রয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায়, সিঙ্গাপুরের মনিটারি অথরিটি (এমএএস) বলেছেন, এ মামলায় তদন্ত করতে দেশের বাণিজ্যবিষয়ক বিভাগ অনেক সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি সন্দেহজনকদের সম্পদ বা তহবিলের উৎসের ডকুমেন্টেশন এবং প্রদত্ত তথ্যে অসংগতি বা ফাঁকি দেওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও সহায়তা করেছে।

সিঙ্গাপুরের মনিটারি অথরিটি বলেছে, সন্দেহজনক তহবিলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে এবং আইনের লঙ্ঘন পাওয়া গেলে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হলে সিঙ্গাপুরের আইন অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সিএডি ডিরেক্টর ডেভিড চিউ বলেন, সিঙ্গাপুরকে এই ধরনের অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে কাজ করবে।

তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরকে অপরাধীদের বা তাদের পরিবারের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এই অপরাধীদের প্রতি আমাদের বার্তা সহজ-আমরা যদি আপনাকে ধরতে পারি, আমরা গ্রেফতার করব। আমরা যদি আপনার অবৈধ সম্পত্তি খুঁজে পাই, আমরা সেগুলো বাজেয়াপ্ত করব। আমরা আমাদের আইন মেনে আপনার সঙ্গে মোকাবিলা করব।’

কে কোথায় গ্রেফতার : সু হেইজিন (৪০)। সাইপ্রাসের নাগরিক। হল্যান্ড এলাকায় নিজের বিলাসবহুল বাংলো থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হয়েছেন তুরস্কের নাগরিক ভ্যাং শুইমিং (৪২)। ট্যাংলিন এলাকার একটি বিলাসবহুল বাংলো থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অভিযানের সময় তিনি গ্রেফতার এড়াতে বাংলোর দ্বিতীয় তলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়েন। আহত অবস্থায় পাশের একটি ড্রেনে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। ওই ব্যক্তির কাছে চীন ও কম্বোডিয়া থেকে ইস্যু করা পাসপোর্ট ছিল।

সাইপ্রাসের আরেক নাগরিক ওয়াং দেহাইকে (৩৪) গ্রেফতার করা হয়েছে অরচার্ড এলাকায় বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট থেকে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আরও রয়েছেন চীনের ঝাং রুইজিন (৪৪), লিন বাওয়েয়িং (৪৩) ও ওয়াং বাওসেন (৩১)।

সান্তোস কোভের পার্ল দ্বীপের একটি বাংলো থেকে গ্রেফতার হন ঝাং ও লিন। ট্যাংলিন এলাকার আরেকটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার হয়েছেন ওয়াং। কম্বোডিয়ার নাগরিক সু বাওলিনকে (৪১) নাসিম রোডের একটি বাংলো থেকে গ্রেফতার করা হয়।

একই দেশের চেন কুইনজিগুয়ানকে (৩৩) রিভার ভ্যালি এলাকার একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কম্বোডিয়ার নাগরিক সু ওয়েনকিয়াং (৩১) গ্রেফতার হয়েছেন বুকিত টিমাহ এলাকার একটি বাংলো থেকে। ভানুয়াতুর ৩৫ বছর বয়সি সু জিয়ানফেং গ্রেফতার হয়েছেন বুকিত টিমাহর বাংলো থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *