শেরপুরে ঝিনাইগাতী নিহত আওয়ামী লীগ নেতা পরিবারের দিনকাটে অর্ধাহারে

দেশজুড়ে

ডিসেম্বর ৩০, ২০২২ ৫:৩৩ অপরাহ্ণ

মোরাদ শাহ জাবাল (শেরপুর):

ঝিনাইগাতী নিহত আওয়ামী লীগ নেতা সেকান্দর আলীর পরিবারের সদস্যদের দিনকাটে অনাহারে অর্ধাহারে। অভাব অনটন দুঃখ আর দুর্দশাই পরিবারের সদস্যদের নিত্য সঙ্গী। নিহত সেকান্দর আলী শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্দভাটপাড়া গ্রামের মৃত মহিজ উদ্দিন ফকিরের ছেলে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ছাত্রজীবন থেকেই সেকান্দর আলী ছাত্রলীগ করতেন। ৭০ দশকে উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপুর্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন সেকান্দর আলী। ভারতে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধে ও অংশ গ্রহন করেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর দেশে ফিরে নিজ দলকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি দেশ গড়ার কাজে আত্ননিয়োগ করেন সেকান্দর আলী।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মিরা আত্নগোপনে থাকলেও সেকান্দর আলী স্বদর্পে এলাকায় বিচরন করতেন।

১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান শেরপুরে এক মিটিং এ অংশ গ্রহন করেন । এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা সেকান্দর আলী ও শেরপুরের হাফেজ মহরিকে সেনা সদস্যরা ধরে নিয়ে জিয়াউর রহমানের সামনে হাজির করে। জিয়াউর রহমান তাদের টাকা পয়শার লোভ দেখিয়ে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে জিয়ার দলে যোগদানের আহবান জানান। কিন্তু সেকান্দর আলী ও হাফেজ মহরি ওই প্রস্তাবে তারা রাজি না হওয়ায় জিয়াউর রহমানের নির্দেশে সেনা সদস্যরা তাদের তুলে নিয়ে যায়।

৩ মাস তাদেন অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় তাদের উপর। ৩ মাস পর ময়মনসিংহের কোতুয়ালী থানায় মামলা দিয়ে তাদেরকে হাজতে পাঠানো হয়। কয়েকমাস হাজত খাটার পর ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেকান্দর আলীর মৃত্যু হয়। পরিবার প্রধানের মৃত্যুতে অর্থ সংকটে পরে পরিবারটি।

সেকান্দর আলীর স্ত্রী আয়শা খাতুন জানান, ৩ ছেলে, ২মেয়ের ভরন পোষন যোগাতে গিয়ে সহায় সম্বল যতটুকু ছিল তা বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। অভাবের তাড়নায় ছেলে মেয়েদের পড়ালেখাও করাতে পারেননি আয়শা খাতুন। আয়শা খাতুন জানান ২মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তিন ছেলে ফরহাদ, ফয়েজুর ও মতিউর শ্রমিকের কাজ করে।

এতে যা আয় হয় তাই দিয়ে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কাটে তাদের দিন। স্বামীর রেখে যাওয়া ঘরটি সংস্কারের অভাবে প্রায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। আয়শা খাতুন নিজেও নানা রোগে আক্রান্ত। টাকা পয়শার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

সরকারী কোন সাহায্য সহযোগীতা পেয়েছেন কি না তা জানতে চাওয়া হলে আয়শা খাতুন কান্না জরিত কন্ঠে বলেন ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বাড়িতে এসেছিলেন। সে সময় তিনি নিজ হাতে তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ছিলেন।

তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন দল ক্ষমতায় এলে তাদের সহযোগীতা করবেন। কিন্তু এর পর আর কেউ তাদের খুজ -খবর নেননি। আয়শা খাতুন ও তার পরিবারের অভিযোগ শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় দলীয় নেতা-কর্মিদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের জন্য সাহায্য সহযোগীতা পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু যাদের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে তারাই তা আত্নসাৎ করেছে। তাদের হাত পর্যন্ত পৌছেনি। বর্তমানে আয়শা খাতুনের দিনকাটে অনাহারে অর্ধাহারে। এ ব্যাপারে আয়শা খাতুন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *