শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সরগরম এফডিসি

শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সরগরম এফডিসি

বিনোদন স্পেশাল

এপ্রিল ১৮, ২০২৪ ৯:০২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন ঘিরে রেখে জমে উঠেছে ভোটের প্রচারণা। আগামী শুক্রবার শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের এ নির্বাচন হবে। ভোটের প্রচার, প্রার্থী ও সমর্থকদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ চলছে এফডিসির আঙ্গিনায়।

প্রচারণার লক্ষ্যে বিএফডিসির প্রধান ফটকে নজর কাড়ছে দুই প্যানেলের বড় ব্যানার। এছাড়া পুরো এফডিসিতেই পোস্টার আর তারকা প্রার্থীদের পদচারণা।

বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পী সমিতির সম্মুখভাগের বাগানে দেখা যায় বেশ বড় একটি স্লোগান। সমর্থকদের স্লোগানে বোঝা গেল মাহমুদ কলি-নিপুণ আক্তার পরিষদের প্রচারণা বেশ জোরেশোরেই চলছে। সামনে এগোতেই সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নিপুণ, অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান, পীরজাদা হারুনসহ সিনেমার বেশকিছু পরিচিত মুখ।

গত নির্বাচনে পীরজাদা হারুন বিরুদ্ধে চুমু দিতে চাওয়ার অভিযোগ আনেন নিপুণ। এ প্রসঙ্গে নিপুণকে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বলেন, সেটা আমাদের মধ্যে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে এমন হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের কথা ধরে এমন অভিযোগ আনা আমার ঠিক হয়নি। আমাদের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে, যার ফলেই তিনি এখন আমার সঙ্গেই আছেন।

ভুল বুঝতে প্রায় দুই বছর কেটে গেল এমন প্রশ্নে অভিনেত্রী আরো বলেন, পীরজাদা হারুন হলেন একজন বিসিএস ক্যাডার। আমার বাবা একজন বিসিএস ক্যাডার, আর বিসিএস ক্যাডার বিসিএস ক্যাডার মিলে পরিবার হয়ে যায়। আর নির্বাচন তো হয় দুই বছর পর পর। এ জন্য বুঝতে এত সময় লেগে গেল।

এরমধ্যেই সেখানে উপস্থিত হলেন আরেক প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মিশা সওদাগর। হাসির সুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে অঞ্জনাকে বললেন, তোমরা শুধু এই প্যানেলেই বসে থেকো না। ঐদিকেও যেও।

একটু সামনে এসে মিশা সওদাগরকে বলতে শোনা গেল, আরে কচি ( নাসিমা আক্তার কচি), তুই শুধু ভোট চাইছিস খোকন (খোকন রাজ) ভাইয়ের কাছে! শুধু খোকন ভাইয়ের ভোট চাইবি? আমার কাছে চাইবি না? আমার ভোটও তো চাইতে পারিস, আমি কি ভোট দেব না? সেই নওগাঁ থেকে এসে আমাকে ভুলে গেছিস কচি? কতো সিনেমায় আমরা গান গেয়েছি, নেচেছি, ভুলে গেছিস?

কচি উত্তর দিলেন, না ভাই ভুলিনি। মিশার উত্তর, তাহলে ভোটটা দিস বোন আমাকেও।

এভাবেই মজার ছলে ভোট চাইছিলেন রুপালি পর্দার দাপুটে এই খল অভিনেতা। এই প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার সঙ্গে আছেন আরেক দাপুটে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল।

জয়ের আশাবাদ জানিয়ে মিশা সওদাগর বললেন, আমাদের এবারের নির্বাচন সরকার পক্ষের নজরে আছে। তারা বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠ, সুন্দর, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। নির্বাচনটা একটা প্রতিযোগিতা। যেকোনো একদল আসবে। স্বতন্ত্র মিলিয়ে আমরা ৪৭ জনের মতো দাঁড়িয়েছি। ২১ জন নির্বাচিত হবেন। আমি আমার প্যানেল নিয়ে শতভাগ আশাবাদী।

জয়ী হলে কি কি কাজ করবেন জানতে চাইলে মিশা সওদাগর বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আছে শিল্পীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণ করবো। কমার্শিয়াল চলচ্চিত্রকে ৭৫% অনুদান দেওয়ার অনুরোধ করবো, যে দেশের কমার্শিয়াল সিনেমা যত চলবে, সে দেশের ইন্ড্রাস্ট্রি তত ঘুরে দাঁড়াবে।

তিনি আরো বলেন, এফডিসিভিত্তিক সিনেমা যেন বেশি হয়, সেটা করার জন্য যতদূর যাওয়া প্রয়োজন আমরা যাব। নির্মাতা, প্রযোজকদের এমন শর্ত থাকবে তারা ৫০ ভাগ টাকা যেন সরকারকে ফেরত দেয়। আর একটা জিনিস নিয়ে কাজ করবো, শিল্পী সমিতির সদস্যরা যেন আজীবন সদস্য থাকতে পারে। এবার নির্বাচনে সদস্য যাচাই-বাছাই করে ১০৩ জন সদস্য পাওয়া গেছে।

শিল্পীদের সবাইকে এক করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিশা সওদাগর-ডিপজল প্যানেলের এই নেতা বলেন, আমাদের এবার স্লোগান হচ্ছে- ‘আমরা সবাই এক, জাগ্রত হউক বিবেক’। এই ‘এক’ বলতে সবাই, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিটা ব্যক্তি। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে আমরা চলতে চাই।

অপরদিকে, ‘দেখাবো আলোর পথ, রাখিব নিরাপদ’ স্লোগান নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে মাহমুদ কলি ও নিপুণ আক্তার পরিষদ। এই পরিষদের নির্বাচনী ইশতেহারে চলচ্চিত্র শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা, অসহায় শিল্পী ও তার পরিবারের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা, চলচ্চিত্র শিল্পের সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে শ্রদ্ধা, সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার ব্যবস্থা করা, দেশের ও সমাজের কাছে চলচ্চিত্র শিল্পীদের ও শিল্পের সুনাম উন্নতি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

এসব প্রতিশ্রুতি বড় ব্যানারে লিখে দেয়ালে দেয়ালে ঝুলিয়েও দিয়েছেন মাহমুদ কলি ও নিপুণ পরিষদের প্রার্থীরা। নিজের প্যানেলকে বিজয়ী করার ব্যাপারে কতোটুকু আশাবাদী মাহমুদ কলি? গত শতকের সত্তর-আশির দশকের এই জনপ্রিয় অভিনেতা বলেন, আমি যেদিন নিশ্চিত করলাম আমি নির্বাচন করছি, সেদিন থেকেই সবাইকে বলছি, আমি চাই এফডিসিতে যেন সব শিল্পীর মিলনমেলা হয়, উৎসবমুখর পরিবেশে সবার উপস্থিতিতে নির্বাচন হয়। কারো মধ্যে যেন ভুল বোঝাবুঝি, রাগারাগি না থাকে এটিই আমার পরম চাওয়া। আর নির্বাচনের ব্যাপারে আমি শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, কারো কারো সঙ্গে দেখা হচ্ছে, সবার কাছেই আমি আবেদন করেছি মাহমুদ কলি ও নিপুণ পরিষদ থেকে যেহেতু আমি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি, এই প্যানেলের সবাইকে ভোট দিয়ে যেন বিজয়ী করে। আমরা যেন একসঙ্গে ভালো ভালো কাজ করতে পারি।

শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে দুটি প্যানেল থেকে ২১টি পদে মোট ৪২ জন প্রার্থী হয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খোরশেদ আলম খসরু। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে আছেন এ জে রানা ও বিএইচ নিশান।

খসরু বলেন, এবার ভোটার আছেন ৫৭০ জন। নির্বাচনে যেন কোনো ঝামেলা না হয়, সুষ্ঠু পরিবেশে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করবো। গতবারের কোনো প্রভাব যেন এই নির্বাচনে না পড়ে সেটাও খেয়াল রাখছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *