লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে খালেদা জিয়ার, পরিবারের আবেদন

লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে খালেদা জিয়ার, পরিবারের আবেদন

রাজনীতি স্লাইড

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩ ১:২৫ অপরাহ্ণ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘গুরুতর’ বলছেন বিএনপি নেতারা। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তারা খালেদা জিয়াকে বাঁচাকে বিদেশ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলছেন। সরকারকে এজন্য ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে।

দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘অত্যন্ত জটিল’ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। মাঝেমধ্যেই প্রয়োজন পড়ছে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সাপোর্টের।

গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার তাকে সিসিইউতে নিতে হয়েছে।

মেডিকেল বোর্ড তার পরিবারকে জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে বিদেশে নিয়ে লিভার প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্লান্ট) করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিএনপি ও তার পরিবার। নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে দলটি। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে আইনের বিদ্যমান অবস্থান থেকে আর কিছু করার নেই। তবে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আইন পরিবর্তনে কোনো বাধা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক গণমাধ্যমকে বলেন, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার অনুমতি চেয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার আবেদন করেছেন। সরকারের মনোভাব যদি ইতিবাচক হয়, তাহলে বিদেশে চিকিৎসার জন্য দরকার হলে আবারও আবেদন করা হবে। মানবিক বিবেচনায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিলে যুক্তরাজ্য অথবা জার্মান নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী তার পরিবার।

ওই নীতিনির্ধারক আরও জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর পাঠানো আবেদনের শেষাংশে বলা হয়, ‘খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার্থে ও তার শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে উন্নতমানের ফিজিওথেরাপিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দেশের বাইরে ‘অ্যাডভান্স মেডিকেল সেন্টারে’ চিকিৎসা নেওয়া অত্যাবশ্যক। এমতাবস্থায়, সব শর্ত শিথিলপূর্বক তাকে স্থায়ীভাবে মুক্তি এবং বিদেশ গমনের অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন করোনা মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিবারের আবেদনে ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। যে দুটি শর্তে নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে, তার প্রথমটি হলো তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।

গত ৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, গত কয়েক দিনে খালেদা জিয়ার লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, কিডনির কর্মক্ষমতা কিছু কমতে থাকায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। যে কারণে কয়েকবার তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, লাঞ্চসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতিদ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কামুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড তার রিকমেন্ডেশনে বলেছে।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১০ জুন রাত পৌনে তিনটার দিকে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটি ব্লক এখনো রয়ে গেছে।

৭৮ বছর বয়সি খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভারসিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *