রোজা সামনে রেখে সক্রিয় সিন্ডিকেট

রোজা সামনে রেখে সক্রিয় সিন্ডিকেট

অর্থনীতি স্লাইড

ডিসেম্বর ৬, ২০২৩ ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

রমজান মাস সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও সেই পুরোনো সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠছে। চক্রের সদস্যরা ভোক্তার পকেট কাটতে পুরোনো মোড়কে নতুন ফাঁদ পেতেছে। পরিস্থিতি এমন- রোজায় দাম বাড়ানো হয়েছে, এ ধরনের অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে তিন মাস আগেই নীরবে বাড়ানো হচ্ছে পণ্যের দাম। ফলে ভোক্তার এখন থেকেই বাজারে পণ্য কিনতে বাড়তি চিন্তা শুরু হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিন্ডিকেট সদস্যরা এবার রমজাননির্ভর পণ্যের পাশাপাশি অন্যকিছু পণ্যের দামও বাড়িয়েছে। ছোলা থেকে শুরু করে ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, খেজুর, চিনির পাশাপাশি চালসহ একাধিক পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আর এই বাড়তি দরে এসব পণ্য কিনতে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠেছে। তাই বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন থেকেই সংশ্লিষ্টদের বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে। কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে প্রতি কেজি ছোলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ১৫ এবং প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ২-৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এসব পণ্য বাদে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত ময়দা ৫, খোলা ময়দা ১০, প্যাকেটজাত আটা ১০, খোলা আটা ৫ এবং মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ায়। রমজান আসার আগেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে মনিটরিংও আগেভাগেই করতে হবে। কঠোর তদারকির মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি জানান, অযৌক্তিক মুনাফা করতে ব্যবসায়ীরা সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ায়। এ প্রবণতা কারও জন্যই শুভ নয়।

ভোক্তাদের উদ্দেশে গোলাম রহমান বলেন, রমজান ঘিরে ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। ১৫ দিনের পণ্য যাতে একদিনে না কেনেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। আর ব্যবসায়ীরাও এ সুযোগে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।

রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, নয়াবাজার ও জিনজিরা বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার রমজাননির্ভর পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০, যা এক মাস আগে ১৩৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০, যা আগে ছিল ১৩৫ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩৫, যা আগে ১৩০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি ভালো মানের ছোলা ৯৫, যা এক মাস আগে খুচরা বাজারে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫, যা আগে ১৫০ টাকা ছিল। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭০, যা এক মাস আগে ছিল ১৬৮ টাকা। প্রতি লিটার খোলা পাম অয়েল ১৩০, যা আগে ১২৫ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৪০, যা আগে ছিল ১৩৫ টাকা। প্রতি কেজি মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০, যা এক মাস আগে ৪০০-৪৫০ টাকা ছিল।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এমনিতেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এরপর নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে নিম্ন-আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। তিনি আরও বলেন, বাজার নজরদারির জন্য আমরা সব সময় বলে আসছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। কী কারণে দাম বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এক্ষেত্রে কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রমজান সামনে রেখে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে আগে থেকেই কাজ করা হচ্ছে। রমজানে যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, সেজন্য সাশ্রয়ী দামে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের একাধিক সংস্থা বাজার তদারকি করবে। পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। রমজানকে টার্গেট করে এখন থেকেই মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *