৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত দিবস

৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত দিবস

দেশজুড়ে

ডিসেম্বর ৫, ২০২৩ ৮:৩৪ অপরাহ্ণ

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট।।

৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লালমনিরহাট সম্পূর্ণভাবে পাক হানাদার মুক্ত হয়।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় শহর হওয়ায় সেই সময় এখানে অনেক অবাঙালিদের বাস ছিল। আর এই সব উর্দুভাষী অবাঙালিদের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী লালমনিরহাটে চালিয়েছিল নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।

জীবন বাজি রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দূর্বার প্রতিরোধে এই দিনে লালমনিরহাটে পাক হানাদার বাহিনীর পতন ঘটানো হয়। এক পর্যায়ে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাট ঘিরে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে হানাদার বাহিনী এই দিনে ভোরের দিকে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাক সেনা, রাজাকার আলবদর ও তাদের দোসররা দুটি স্পেশাল ট্রেনে করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পালিয়ে যায়।

তিস্তা নদী পার হওয়ার পরে পাক সেনারা তিস্তা রেল সেতুতে বোমা বর্ষণ করে সেতুর মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। লালমনিরহাটে ৭১এর এই দিনে এখানে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। লালমনিরহাট শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে লোকজন ছুটে আসতে থাকে শহরের দিকে।

পরে মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় এক মাসের মধ্যেই তিস্তা রেল সেতুটি মেরামত করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা হয়।

ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় এলাকায় লোকে পূর্ণ হয়ে যায়। স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহর ও আশ-পাশের এলাকাসহ জোটা লালমনিরহাট। আনন্দে উদ্বেলিত কণ্ঠে স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে তরুণ, যুবক, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলই।

এদিন সকাল থেকে দারুণ উত্তেজনা নিয়ে লালমনিরহাট শহর, জনপদ ও লোকালয়ের মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। পরদিন ৭ ডিসেম্বর বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো মানুষ জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে ও বিজয়ের পতাকা নিয়ে ঢুকে পড়ে শহরে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কালো রাত্রিতে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লালমনিরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে গড়ে তুলেছিল প্রতিরোধ। ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় লালমনিরহাট।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬নং সেক্টর শুধু বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর সেটি অবস্থিত লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে।

এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন, বিমান বাহিনীর এম খাদেমুল বাশার। ৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর সাথে সর্বস্তরের মানুষ শহরে প্রবেশ করে ও স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ায়।

‘মুক্তিযুদ্ধের ৬ নং সেক্টরের অধীনে লালমনিরহাটের বিভিন্নস্থানে মুক্তিযোদ্ধারা খেয়ে না খেয়ে পাক-হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে বিজয় নিশ্চিত করেন।

লামনিরহাটের একমাত্র বীর প্রতীক প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব:) আজিজুল হক মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘রেলওয়ে বিভাগীয় শহর খ্যাত লালমনিরহাট ছিল বিহারি অধ্যুষিত এলাকা। তাদের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল এখানে। পৈশাচিক নির্যাতন করে হত্যা করেছিল বাঙালি নারীদের।

‘রেলওয়ে রিকশাস্ট্যান্ড ও বর্তমানে বিডিআর ক্যাম্পে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়েছিল যত্রতত্র, যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সঠিকভাবে প্রণয়ন করে তাদের পুনর্বাসনে আরও বেশি ভূমিকা নেওয়াসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতি বিজড়িত স্থান ও গণকবরগুলো চিহ্নিত ও সংস্কারের দাবি জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, ৬ডিসেম্বর অবিস্মরণীয় এই দিনটি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য লালমনিরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দ ও জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের তথ্য অনুযায়ী শহরে র‍্যালী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ডিসপ্লে প্রচার করবে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *