যেমন হতে হবে কুরবানির পশু

যেমন হতে হবে কুরবানির পশু

ধর্ম স্পেশাল

জুন ২৩, ২০২৩ ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

ইসলামে যত গুরুত্বপূর্ণ বিধান আছে, তার অন্যতম হলো কুরবানি। কুরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত।

আর কুরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো কুরবানির পশু সঠিক হওয়া। আল্লাহতায়ালা কুরআন শরিফে বলেছেন ‘আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের কুরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। তাদের গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিযিক দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ওপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। কারণ, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য, কাজেই তার কাছেই আত্মসমর্পণ কর আর সুসংবাদ দাও সেই বিনীতদের (সূরা হজ : ৩৪)।

যেসব পশু দিয়ে কুরবানি দেবেন

কুরআনের আয়াত দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায়, কেবল গৃহপালিত পশু দ্বারাই কুরবানি করা যাবে। গৃহপালিত পশু হলো উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু ও মহিষ। এ ছয় রকম পশু দ্বারা কুরবানি করা যায়, এছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা কুরবানি করা যায় না। এমনকি হালাল বন্য পশু দ্বারাও কুরবানি জায়েজ হবে না। যদিও তা কেউ লালন-পালন করে থাকুক না কেন। যেমন, হরিণ! কেউ যদি কোনো হরিণের বাচ্চা ছোটবেলা থেকে গৃহপালিত পশুর মতো পালতে থাকে, তবু তা দ্বারা কুরবানি হবে না। কারণ স্বভাবত এরা গৃহপালিত নয়।

কুরবানির পশুর বয়স

কুরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্যতম একটি শর্ত হলো কুরবানির পশুর বয়স শরিয়ত নির্ধারিত বয়সে পৌঁছা। উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে। তবে ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনোভাবেই তা দ্বারা কুরবানি জায়েজ হবে না। (কাযীখান ৩/৩৪৮)।

পশু ত্রুটিমুক্ত হওয়া

কুরবানির পশু মোটাতাজা ও দোষ-ত্রুটিমুক্ত হওয়া উত্তম। রাসূল (সা.) স্বাস্থ্যবান পশু দিয়ে কুরবানি করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) যখন কুরবানি করতে চাইতেন তখন তিনি দুটি বড় মোটাতাজা, শিংওয়ালা, সুন্দর রঙের খাসিকৃত ভেড়া ক্রয় করতেন। (ইবনে মাজাহ : ৩১১৩)।

যেসব পশু দিয়ে কুরবানি হবে না

কুরবানির পশুর মধ্যে যেসব দোষ-ত্রুটি থাকলে কুরবানি দেওয়া যাবে না, তা হলো-

১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা। যে পশুর দুই চোখ বা এক চোখ পুরোপুরি অন্ধ, অথবা এক তৃতীয়াংশের বেশি নষ্ট হয়েছে এমন পশু দিয়ে কুরবানি করা যাবে না। ২. শ্রবণশক্তি না থাকা। ৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া। কুরবানির পশুর হাড়ের মগজ শুকিয়ে গেলে তা দিয়ে কুরবানি করা যাবে না আর হাড়ের মগজ না শুকালে কুরবানি করা যাবে। ৪. এমন পরিমাণ লেংড়া যে, জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না। যে পশু এমন খোঁড়া যে তিন পায়ের ওপর ভর করে চলাচল করে, চতুর্থ পা মাটি স্পর্শ করে না কিংবা স্পর্শ করলেও তাতে ভর দিতে পারে না এমন পশু দিয়ে কুরবানি করা যাবে না। ৫. লেজের বেশিরভাগ অংশ কাটা। ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা। ৭. কানের বেশিরভাগ কাটা। পশুর কানের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কাটা থাকলে তা দিয়ে কুরবানি করা যাবে না। ৮. গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া। ৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া। ১০. বেশিরভাগ দাঁত না থাকা। ১১. রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া। ১২. ছাগলের দুটি দুধের যে কোনো একটি কাটা। ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যে কোনো দুটি কাটা। মোট কথা, কুরবানির পশু বড় ধরনের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হবে।

হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.)-কে কুরবানির ক্ষেত্রে যেসব পশু পরিহার করা হয় এসব পশু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেছেন, চার ধরনের পশু, যা দিয়ে কুরবানি জায়েজ হবে না। অন্ধ যার দৃষ্টিহীনতা সুস্পষ্ট, রোগাক্রান্ত, যার রোগের বিষয়টি সুস্পষ্ট, পঙ্গুত্ব, যার পঙ্গুত্ব সুস্পষ্ট ও আহত যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৭)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *