মিয়ামিতে যেভাবে ‘ম্যাজিক’ দেখাচ্ছেন মেসি

মিয়ামিতে যেভাবে ‘ম্যাজিক’ দেখাচ্ছেন মেসি

খেলা স্পেশাল

আগস্ট ৪, ২০২৩ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ

সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন তিনি। পেশাদার ক্যারিয়ারে যা কিছু অর্জন করা সম্ভব, সবই জিতেছেন। ব্যক্তিগত বা দলীয়, কোনোক্ষেত্রেই সাফল্যের কমতি নেই। তাই নির্ভার হয়ে খেলতে চলতি মৌসুমে ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দিয়েছেন লিওনেল মেসি।

নতুন দলে  দেওয়ার পর থেকেই যেন উড়ছেন লিওনেল মেসি। প্রতি ম্যাচেই গোল করছেন, সতীর্থদের করে দিচ্ছেন সুযোগ। বয়স হয়ে গেছে ৩৬। অথচ এই বয়সেও যেভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাতে কে বলবে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে তিনি?

কীভাবে মেসি সাফল্য পাচ্ছেন? কোন ট্যাকটিক্সে খেলছে ইন্টার মিয়ামি? সেসব নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। যেখানে নমুনা হিসেবে ধরা যাক অরল্যান্ডো সিটির বিপক্ষে আজকের (৩ আগস্ট) ম্যাচটি।

এ মৌসুমে ইন্টার মিয়ামির কোচ হয়ে এসেছেন জেরার্দো টাটা মার্টিনো। বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার সাবেক এ কোচের অধীনে সবশেষ কাতার বিশ্বকাপে খেলেছিল মেক্সিকো। অভিজ্ঞ এ বর্ষীয়ান কোচ মিয়ামিকে খেলাচ্ছেন ‘অন দ্য বল’-এ।

আক্রমণের শুরুতে মধ্যমাঠে মেসি

আক্রমণের শুরুতে মধ্যমাঠে মেসি

মার্টিনো মূলত  ৪-২-৩-১ ফরমেশনে দলকে খেলাচ্ছেন। গত সপ্তাহে আটলান্টার বিপক্ষেও একইভাবে খেলার চাল সাজিয়েছিলেন তিনি। যেখানে মূল পরিবর্তন, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার ডিক্সন আরোয়োকে স্প্যানিশ কিংবদন্তি সার্জিও বুস্কেটসের ডানে খেলাচ্ছেন তিনি।

এদিকে চিরায়ত ভঙ্গিতে মূলত আক্রমণভাগের ডান পার্শ্বে খেলছেন মেসি। মাঠে তার পজিশন স্ট্রাইকার জোসেফ মার্টিনেজের পেছনে। এছাড়া তার সঙ্গে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে আছে বেন ক্রেমাসচি। আক্রমণের স্বার্থে মেসি বাম দিকে চলে গেলে তিনি ডান দিকটা কভার করেন।

সবার চেয়ে এগিয়ে টেইলর, বেশ পিছিয়ে মেসি। এগিয়ে যাচ্ছেন হালকা গতিতে

সবার চেয়ে এগিয়ে টেইলর, বেশ পিছিয়ে মেসি। এগিয়ে যাচ্ছেন হালকা গতিতে

মার্টিনোর পরিকল্পনা ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, মিয়ামির বেশিরভাগ অ্যাটাক শুরু হয় লেফট উইং থেকে। মেসি সাধারণত ওয়াইড লেফট উইংয়ে থাকা রবার্ট টেইলরকে পাস দেন। অথবা লেফট ব্যাক নোয়াহ অ্যালেনকে বল দেন, যিনি সাইডলাইন দিয়ে আক্রমণে উঠে আসেন।

সেখান থেকে ফাইনাল থার্ডে বল দেওয়া হয়। বল পেয়ে কখনো মার্টিনেজ, কখনো মেসি বা অন্য কেউ লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করেন। এভাবেই মূল গেমপ্ল্যান সাজাচ্ছেন মার্টিনেজ। মিয়ামিও পাচ্ছে সাফল্য।

টেইলর চিপ করার আগেও ডি বক্সে পুরোপুরি ঢোকেননি মেসি

টেইলর চিপ করার আগেও ডি বক্সে পুরোপুরি ঢোকেননি মেসি

আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হওয়ায় মেসির ওয়ার্করেট কম হলেও সমস্যা নেই। তবে এখনো দলের জন্য তিনি কতটা অন্তঃপ্রাণ, সেটা যেন প্রমাণ করে যাচ্ছেন এই আর্জেন্টাইন মহাতারকা। যার সবশেষ প্রমাণ অরল্যান্ডোর বিপক্ষে ম্যাচটি।

মেসির গোল ও প্লে মেকিং অ্যাবিলিটি নিয়ে কথা হলেও তার অন্যতম আন্ডাররেটেড স্কিল হেঁটে বেড়ানো নিয়ে খুবই কম কথা হয়। মাঠে খেলা চলার সময় খেয়াল করলেই দেখা যায় বল থেকে দূরে নিজের মতো করে হেঁটে বেড়াচ্ছেন মেসি।

সেকেন্ডের মধ্যে সবাইকে বোকা বানিয়ে বল নিলেন মেসি, করলেন প্রথম গোল

সেকেন্ডের মধ্যে সবাইকে বোকা বানিয়ে বল নিলেন মেসি, করলেন প্রথম গোল

হাঁটার মাঝে চারদিকে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ দৌড় শুরু করেন মেসি। আর লণ্ডভণ্ড করে ফেলেন প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ। এ ম্যাচেও প্রথম গোলের ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন চিত্র। যেখানে একইভাবে হেঁটে হেঁটে ছয়জন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ডি বক্সে ঢুকে যান মেসি।

ম্যাচের সপ্তম মিনিট শুরুর সময় দেখা যায় একদম ঠিক মাঝমাঠে আছেন মেসি। যেখানে বাঁ দিকে বল বাড়িয়ে দেন তার এক সতীর্থ। সেখান থেকে টেইলর যখন বল পান, তখনও ডি বক্স থেকে অনেক দূরে মেসি।

মেসির দ্বিতীয় গোলে আক্রমণের সূচনা শুরু এখানেই, তার পা থেকে

মেসির দ্বিতীয় গোলে আক্রমণের সূচনা শুরু এখানেই, তার পা থেকে

তবে এরই মধ্যে আক্রমণের পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেছেন মেসি। আর তাই যেন দৌড়ের গতিতে আনে পরিবর্তন। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে টেইলর যখন ডি বক্সের মাঝে চিপ করেন, তখনও বক্সে প্রবেশ করেননি লিও।

তবে অরল্যান্ডোর ছয় খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে সেকেন্ডের মাঝে এগিয়ে যান মেসি, জায়গা করে নেন ছয় গজের বক্সে। এরপর টেইলরের বাড়ানো চিপ অনন্য দক্ষতায় বুক দিয়ে নামিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে ভলিতে বল জড়ান জালে।

টেইলরকে পাস দিচ্ছেন মেসি, কাউন্টার অ্যাটাক শুরু

টেইলরকে পাস দিচ্ছেন মেসি, কাউন্টার অ্যাটাক শুরু

প্রথম গোলের ক্ষেত্রে যদি ধরা হয় বুদ্ধিমত্তা, তাহলে দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রে মেসি দেখিয়েছেন নিজের ক্ষিপ্রতা। যেখানে ম্যাচের ৭২ মিনিটে নিজেদের অর্ধেরও বেশ নিচ থেকে সতীর্থের বাড়ানো পাস নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি।

বল পায়ে নিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে মধ্যমাঠেরও কিছুটা পেছন থেকে লেফট উইংয়ে থাকা টেইলরকে পাস দেন মেসি। যেখান থেকে মূলত আক্রমণের শুরু। কাউন্টার অ্যাটাকে দ্রুত বল নিয়ে প্রতিপক্ষের ডি বক্সের কাছে চলে যান টেইলর।

মার্টিনেজের দিকে টেইলর লফটেড শট খেলার আগে। তখনও বেশ পিছিয়ে মেসি।

মার্টিনেজের দিকে টেইলর লফটেড শট খেলার আগে। তখনও বেশ পিছিয়ে মেসি।

বক্সের কাছে গিয়ে মার্টিনেজের কাছে লফটেড শটে বল পাঠান টেইলর। এ সময় টেইলর ছয় গজ বক্সের কাছে থাকলেও ডি বক্সের বাইরে ছিলেন মেসি। তবে পরিস্থিতি বুঝে ক্ষীপ্রতার সঙ্গে জায়গা বদল করেন তিনি। যা বুঝতেই পারেনি অরল্যান্ডোর ডিফেন্ডাররা।

অতঃপর মার্টিনেজ বল এগিয়ে দেন। আর শান্ত মাথায় এক শটে বল জালে জড়ান মেসি। যেখানে তার শটটা সহজ মনে হলেও আক্রমণের ভীত গড়ে দেওয়া থেকে শুরু করে দ্রুততার সঙ্গে ডি বক্সে আসা, প্রতিপক্ষকে বোকা বানিয়ে পজিশন নেয়া এসব করেছেন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।

সবাইকে বোকা বানিয়ে ক্ষীপ্রতার সঙ্গে এমনভাবে ফাঁকায় চলে এসেছেন যে কেউ বুঝতেই পারেনি তার পরিকল্পনা। অতঃপর আরেকটি গোল।

সবাইকে বোকা বানিয়ে ক্ষীপ্রতার সঙ্গে এমনভাবে ফাঁকায় চলে এসেছেন যে কেউ বুঝতেই পারেনি তার পরিকল্পনা। অতঃপর আরেকটি গোল।

মেসির যে বয়স, তার অনেক আগেই বেশিরভাগ ফুটবলার পেশাদার ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটান। এমএলএস-এর মান নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন থাকলেও যেভাবে বুদ্ধিমত্তা ও ক্ষীপ্রতা নিয়ে প্রতি ম্যাচে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছেন, বলা যায় সেটা শুধুমাত্র মেসির মতো সেরাদের সেরার পক্ষেই সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *