মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুনঃ ভবন থেকে পড়ে নারীসহ ২ জনের মৃত্যু

জাতীয় স্পেশাল স্লাইড

অক্টোবর ২৭, ২০২৩ ২:৪৫ অপরাহ্ণ

মোহাম্মদ আল এমরান।

রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় হাসনা হেনা (২৭) নামে এক নারীসহ দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসনা হেনা নামের মৃত্যুবরণকারী নারী খাজা ভবনের ৯ম তলায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় বনানীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আগুনের আতঙ্কে একটি তার ধরে গ্রিল টপকে নিচে নামার সময় ছিঁড়ে পড়ে মারা যায়।

বিকেল ৫ টার দিকে মহাখালী আমতলী এলাকার খাজা টাওয়ারে আগুন লাগে। ১৪ তলা ভবনের ১৩ তলায় আগুন লেগেছে বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেল দিকে খাজা টাওয়ারে আগুন লাগে। আগুনের প্রকোপ দেখা গেছে ভবনের পিছনের দিকে। পিছনের দিকে অফিসে কর্মরত লোকজন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ছাদে চলে যায়। ছাদে অনেক লোক আটকা পড়ে। পাশে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অফিস এবং অন্য আরেকটি ভবন তার ছাদ হতে কিছু সাহসী উদ্ধারকর্মী কাঁচ ভেঙ্গে বেশ কিছু লোকদের সরিয়ে নিয়ে আসে। ছাদে আটকে পড়া লোকজন দড়ি দিয়ে পাশের ভবনের ছাদে নামতে থাকে। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজে খাজা টাওয়ারের ছাদে গিয়ে দড়ির মই দিয়ে অন্য ভবনের ছাদে আটক পড়া লোকজন সরিয়ে নিয়ে আসে। এরপর কিছুক্ষণ আগুনের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন টার্ণ টেবিল লেডার দিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়।

এদিকে ভবন থেকে নেমে আসা সাইফ পাওয়ারের একজন অফিস কর্মকর্তা জানা যায় হঠাৎ শুনতে পেয়েছিলাম আগুন আগুন। আমরা নিজে দৌড়ে সচেতন যারা ছিলাম নেমে গেছি। আর কিছু কিছু কলিগ ১২ তলায় আটকে গিয়েছিল। তারপর নিচে এসে দেখলাম যে, চার তলায় আগুন চোখে পড়েছে। আমাদের ১২ তলায় সবাই সেইফ লি নামতে পেরেছে। একজন কলিগ নামার সময় পা ভেঙ্গে গেছে। আয়শা মেমোরিয়ালে চিকিৎসারত আছে।

পাশের ভবন রহিম আফরোজ টাওয়ার হতে এক প্রত্যক্ষদর্শী এআইবিএল পিএলসির এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন আগুন লাগার সাথে সাথে আমরা চিৎকার শুনতে পাই এবং খাজা টাওয়ারে আগুনের জ্বলন্ত শিখা দেখতে পাই। মানুষগুলো কাঁচ ভেঙ্গে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু সাহসী উদ্ধারকর্মী আটকে পড়া লোকজন ছাদ থেকে অন্য ভবনের ছাদে সরিয়ে নিচ্ছে। শুনেছি ছাদ থেকে দড়ি বেয়ে নামার সময় আতঙ্কে একজন নারী ও একজন পুরুষ নিচে পড়ে মারা গেছে।

দেখা গেছে উদ্ধার কাজে সাহায্য করতে ফায়ার সার্ভিসের সাথে সম্মিলিত বাহিনী ও বিজিবি,পুলিশ, র‌্যাব,আনসার, অন্যান্য ভলান্টিয়ার এগিয়ে এসেছে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছে। ফায়ার সার্ভিসের দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য বোর্ড (মিডিয়া সেল) এ দেখা যায় দুর্ঘটনায় নিয়োজিত ১২ টি ইউনিট কাজ করেছে, দুর্ঘটনাস্থলে কর্মরত জনবল ১১০ জন, দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৯ জন যার মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলা।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি উদ্ধার কাজ সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হতে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আমাদের বাহিনী উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করলে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা জানা যাবে।

আগুনের সূত্রপাত শুরুর পর থেকেই ঢাকা উত্তর সিটি করর্পোরেশন মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম আগুন লাগার ঘটনার খোজখবর নিয়েছেন। এরপর উদ্ধারকাজ দেখতে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

মেয়র বলেন, আমরা এই ভবনে যতগুলো অফিস আছে সেগুলোর এইচআর ডিপার্টমেন্টকে বলেছি তাদের কতজন লোক বের হয়ে এসেছে এই তথ্যটা নির্ধারণ করতে। কারণ এটি কোন কারখানা না যেখানে অনেক লোক আছে। টার্ণ টেবিল লেডার(অটোমেটেড আধুনিক লেডার) আনা হয়েছে। আমাদের পাঁচটি আছে। আরও ছয়টি মেশিন ডিসেম্বরে ফায়ার সার্ভিসে সংযুক্ত হতে হচ্ছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ভবনে যে অফিসগুলো ছিল সবই করর্পোরেট অফিস। অনেকগুলো ব্রডব্যান্ড কানেকশনের অফিস ছিল। আমরা জানি সবগুলো অফিস রিস্ক এ ছিল। তারগুলো যদি ঝুলে থাকে তাহলে তো রিস্ক। তারগুলোকে আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড এ নিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে আমাদের উত্তর সিটি করর্পোরেশনের যে নতুন প্রোজেক্টগুলো আছে সেগুলোতে আমরা কোন তার ঝুলে রাখছিনা। আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডে ক্যাবল নিয়ে যাচ্ছি। আমরা মনেকরি এ ধরণের দুর্ঘটনা হতে শিক্ষা নেয়া দরকার। আমরা যত তাড়াতাড়ি ক্যাবলগুলোকে মাটির তলায় দিতে পারব, ততই আমরা সেইভ। তাহলে সিটি দেখতে যেমন সুন্দর লাগবে এবং আমরাও সেইভ থাকব।

শীর্ষ খবর হতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করর্পোরেট অফিস তো এখানে থাকবে। এই রোডটা তো কমার্শিয়াল, কমার্শিয়াল রোডে কমার্শিয়াল অফিস থাকবে। কমার্শিয়াল অফিসে যারা থাকবেন, তাদের প্রত্যেকে নিজেদের বিষয়গুলো দেখবেন। প্রতিটা ভবনের উচিত তাদের নিজস্ব কমপ্লায়েন্সগুলো মেনে চলা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সব ধরণের সেফটি ইনস্টুমেন্ট কিন্তু নেই। সব ক্ষমতাও কিন্তু আমাদের সিটি করর্পোরেশনের নেই। সবাইকে কিন্তু এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া ফায়ার হাইড্রেন্ড বসানো হচ্ছে। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা বনানী থেকেই পানি সরবরাহের জন্য ফায়ার হাইড্রেন্ড এর প্রকল্প চালু করছি। আর তিন মাসের মধ্যেই সুফলতা পাওয়া যাবে।

উদ্ধার কার্য শেষের দিকে এসে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে রফিকুল ইসলাম নামে ও আরও একজন লোক মৃত্যবরণ করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *