‘ভোটের কালি’ কেন সহজে ওঠে না?

‘ভোটের কালি’ কেন সহজে ওঠে না?

ফিচার স্পেশাল

এপ্রিল ২১, ২০২৪ ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

ভোট দিতে গিয়ে আঙুলে যে কালি লাগে তা কলঙ্কের নয়, গর্বের। ভোট দিয়ে বেরিয়েই অনেকে আবার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের অহংকার হিসেবে কিছুক্ষণ এই কালির বেশ যত্ন নেন। কমবয়সীদের মধ্যে সেই প্রবণতা বেশি। এই ‘কালি-কথা’ অনেক রহস্যে মোড়া। ইতিহাসও দীর্ঘ দিনের।

ভারত উপমহাদেশে ভোটের কালির ব্যবহার শুরু হয় ১৯৬২ সালে। ঠিক হয়, ভোটে কারচুপি বন্ধ করতে ভোটারদের বাঁ হাতের তর্জনীতে কালি লাগিয়ে দেওয়া হবে। সেই শুরু। কালের নিয়মে কালি লাগানোর নিয়মও বদলেছে। তবে কালি বদলায়নি।

কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, কী থাকে এই কালিতে? কেন তা সহজে মুছে ফেলা যায় না? এর নেপথ্যে রয়েছে কঠোর গোপনীয়তা।

১৯৬২ সালে কালির ফর্মুলা তৈরি করেছিল ‘ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি’। গোপন সেই ফর্মুলা তুলে দেওয়া হয়েছিল এমপিভিএল নামক একটি কোম্পানির হাতে। এখনো পর্যন্ত সংস্থা গোপনই রেখেছে সেই ফর্মুলা।

শোনা যায়, সংস্থার দু’জন কর্মী অর্ধেক অর্ধেক ফর্মুলা জানেন। এটাই নিয়ম। তারা অবসর নেওয়ার আগে বিশ্বস্ত উত্তরসূরি বেছে নেন। বলে দিয়ে যান ফর্মুলার কথা। এভাবেই চলতে থাকে। উৎপাদনে অনেকে যুক্ত থাকলেও উপাদানের কথা কেউই পুরোটা জানতে পারেন না।

তবে মনে করা হয়, ‘সিলভার নাইট্রেট’ এই কালির অন্যতম উপাদান। এ ছাড়াও কিছু রাসায়নিক এবং রং থাকে। আর চট করে শুকিয়ে যাওয়ার জন্য থাকে অ্যালকোহল।

মূলত ‘সিলভার নাইট্রেট’ থাকার কারণেই নাকি আঙুলে লাগার পরে চামড়ার প্রোটিনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় আটকে যায়। আর সূর্যের আলো পেলে অতিবেগুনি রশ্মির গুণে কালচে রং হয়ে আঙুলে চেপে বসে।

শুধু তা-ই নয়, ‘সিলভার নাইট্রেট’-এর পরিমাণের উপরে নির্ভর করে কত দিন সেই দাগ স্থায়ী হবে। তবে সেটা এমন পরিমাণেই দেওয়া হয়, যাতে চামড়ার কোনো ক্ষতি না হয়। ভারতে যে কালি ব্যবহার করা হয়, তা ২ থেকে ৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয়।

‘পিরিতি কাঁঠালের আঠা’-র মতো লাগলে পরে না ছাড়ার গুণ থাকলেও ভোটের কালিকে নাকি হারানো যায়। নানা নামে বারবার ভোট দিয়ে যারা গর্ব করতেন এবং করেন, তাদের কাছে অনেক কারসাজির কথাও শোনা যায়। কালি লাগানোর আগে ও পরে নানা কৌশলে সাফল্য সত্যিই কতোটা মেলে, তা জানা না গেলেও তারও অনেক ‘গোপন’ ফর্মুলা শোনা যায়। ওসব ‘কু’জনদের কাজ। সুজনরা মনে করেন, ভোট দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলার কী দরকার! বরং, আঙুলে আঙুলে লেগেই থাকুক গণতন্ত্রের গর্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *