বিমানের ‘বিজনেস ক্লাস’, কেন এই নাম?

বিমানের ‘বিজনেস ক্লাস’, কেন এই নাম?

ফিচার

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩ ১০:০১ পূর্বাহ্ণ

বিমানের ‘বিজনেস ক্লাস’ভ্রমণের জন্য সব থেকে সুবিধাজনক। শুয়ে বা আধশোওয়া হয়ে নির্বিঘ্নে সফর করতে পারবেন। অর্ডার করতে পারবেন পছন্দের পানীয় বা খাবার। সত্তরের দশকের শুরুতেও কিন্তু এই ব্যবস্থা ছিল না।

প্রথম দিকে বিমানে বিজনেস ক্লাস কিন্তু আজকের বিজনেস ক্লাসের থেকে অনেকটাই আলাদা ছিল। সত্তরের দশকে বিমানে এই বিশেষ ব্যবস্থার সূচনা। ১৯৫৫ সাল থেকে বিমানে প্রথম শ্রেণির কেবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যে যাত্রীরা বেশি খরচ করে আরামে যাতায়াত করতে চান, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা চালু হয়।

কিন্তু বিমানে বিজনেস ক্লাসের সংযোজন অনেক পরে। ১৯৭০ সাল নাগাদ। বোয়িং ৭৪৭ বিমানে প্রথম এই পরিষেবা চালু হয়। এই সময়েই বাজার ধরার জন্য টিকিটে ছাড় দিতে শুরু করে বিভিন্ন বিমান সংস্থা। ফলে ভাড়া ক্রমে কমতে থাকে, বাড়তে থাকে যাত্রীর সংখ্যা। যে যাত্রীরা ছাড়ের সুবিধা পাননি, তারা পুরো ভাড়া মেটানোর বিনিময়ে অতিরিক্ত সুবিধা দাবি করতে থাকেন। বিমান সংস্থাগুলোও এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে। কর্তৃপক্ষ মনে করেন, যারা পুরো ভাড়া দিয়ে টিকিট কাটছেন, তাদের অতিরিক্ত সুবিধা প্রাপ্য।

বিমানের বিজনেস ক্লাস

বিমানের বিজনেস ক্লাস

একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ১৯৭৫ সালে জাপান এয়ারলাইনস প্রথম যাত্রীদের বিশেষ পরিষেবা দিতে উদ্যোগী হয়। প্রথম শ্রেণির পাশেই একটি নতুন কেবিন চালু করে বিমান সংস্থা। নাম তাচিবানা কেবিন (অরেঞ্জ ব্লসম)। জাপান এয়ারলাইনসের যে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে এই কেবিনে যাতায়াত করতেন, তাদের টোকিয়োর ইমপেরিয়াল হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করত সংস্থা। সফরের আগে ঐ হোটেলে থেকে বিশ্রাম নিতে পারতেন যাত্রীরা।

কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইনস আরো এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল। ঐ বছরই তারা এক বিশেষ পরিষেবা চালু করে। যে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিশেষ পরিষেবা চাইতেন, তাদের বিমানে চেক-ইনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে দিয়েছিল এই বিমান সংস্থা। নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি এবং আমস্টারডামের স্কিপোল বিমানবন্দরে শুধু এই ব্যবস্থা ছিল।

এই সংস্থা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত যাত্রীদের মালও সবার আগে সংগ্রহের ব্যবস্থা করে। সকলের আগে তাদের মাল ফেরানোর ব্যবস্থাও করা হয়। যাতে তাদের অপেক্ষা করতে না হয়। যদিও তখনো ‘বিজ়নেস ক্লাস’ নামটির ব্যবহার শুরু হয়নি। বিমান সংস্থাগুলো সত্তরের দশকের শুরুতে এই বিশেষ পরিষেবা চালু করলেও উড়ানের আসনে বদল আনেনি। উড়ানের আসন সকলের জন্য ছিল একই রকম। বাড়তি টাকা দিলেও তার মান উন্নত করা হয়নি। এই কাজটা প্রথম করে ব্রিটিশ এয়ারলাইনস।

মনে করা হয়, ১৯৭৭ সাল নাগাদ ‘এগজ়িকিউটিভ কেবিন’ চালু করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েস। ইকোনমি ক্লাসে আসনের বিন্যাস থাকত ৩-৪-৩ হিসেবে। অর্থাৎ মাঝে বসবেন চার জন, দুইপাশে তিন জন করে। ব্রিটিশ এয়ারলাইনস তা বদলে ২-৩-৪-এর বিন্যাস করে। যাতে যাত্রীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসতে পারেন।

সেই সঙ্গে আরও কিছু সুবিধা যোগ করে ব্রিটিশ এয়ারলাইনস। ‘এগজ়িকিউটিভ কেবিন’-এর যাত্রীদের সকলের আগে খাবার, পানীয় পরিবেশন করা হত। বিমানে উঠলে মুখ মোছার জন্য তাদের গরম তোয়ালে দেওয়া হত। আলাদা বালিশও দেওয়া হত। ওই যাত্রীদের ধূমপানের জন্য আলাদা জায়গাও ছিল।

দুই বছর পর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ় ‘এগজ়িকিউটিভ কেবিন’-এর নতুন নাম দেয়। তখন একে বলা হত ‘ক্লাব ক্লাস’। ওই যাত্রীদের জন্য বিশেষ খাবারেরও ব্যবস্থা করা হত। রানি এলিজাবেথ যা পছন্দ করতেন, তা-ই পরিবেশন করা হত।

১৯৭৭ সালে তাই এয়ারওয়েজও বেশি দাম দিয়ে টিকিট কাটা যাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা শুরু করে। তারাই প্রথম এই বিশেষ পরিষেবার নাম দেয় ‘বিজনেস ক্লাস’। বিজ়নেস ক্লাসের যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছিল না তাই এয়ারওয়েজ়। শুধু সফরের আগে বিমানবন্দরে তারা বিজনেস লাউঞ্জে যেতে পারতেন।

কেন এই নাম? যারা বেড়ানোর জন্য বিমান ধরতেন, তারা হুল্লোড় করতেন। আর যারা কাজের জন্য বিমান সফর করতেন, তারা একটু নিরিবিলি চাইতেন। একটু বিশ্রাম করতে চাইতেন। মনে করা হয়, এই ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবীদের কথা ভেবেই নাকি আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করেছিল বিভিন্ন বিমান সংস্থা। তাই নাম রাখা হয়েছিল ‘বিজ়নেস ক্লাস’।

১৯৭৮ সালে প্যান আমেরিকান বিমান সংস্থা ‘ক্লিপার ক্লাস’ নামে বিশেষ পরিষেবা চালু করে। এই যাত্রীদের বিনামূল্যে ওয়াইন দেওয়া হত। সঙ্গে পছন্দের স্ন্যাকস। সঙ্গে হেডফোনও দেওয়া হত যাত্রীদের। ঐ বছর এয়ার ফ্রান্সও বেশি দাম দিয়ে টিকিট কেনা যাত্রীদের বিশেষ পরিষেবা দেওয়া শুরু করে। যাত্রীদের সফরকালে বিশেষ ওয়াইন আর চিজ় দিত তারা।

যদিও অস্ট্রেলিয়ার কোয়ান্টাস এয়ারলাইনস দাবি করে, তারাই প্রথম ‘বিজনেস ক্লাস’ চালু করেছে। সাধারণ যাত্রী আসনের থেকে তাদের বিজনেস ক্লাসের আসন ছিল বড়। পা রাখার জন্য ছিল বেশি জায়গা। ইকোনমি ক্লাসের থেকে তাদের বিজনেস ক্লাসের ভাড়া ছিল ১৫ শতাংশ বেশি।

আশির দশকে সারা দুনিয়ার বেশির ভাগ এয়ারলাইনস বিজনেস ক্লাস চালু করে। এতে সংস্থাগুলোর লাভের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

সূত্র: আনন্দবাজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *