বাংলাদেশে হোয়াইটওয়াশ ইংল্যান্ড

বাংলাদেশে হোয়াইটওয়াশ ইংল্যান্ড

খেলা

মার্চ ১৫, ২০২৩ ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

মোস্তাফিজের আউটসুইং ও বাড়তি বাউন্সে পরাভূত দাভিদ মালান বাধ্য হলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে। টি ২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে মোস্তাফিজ পেয়ে গেলেন শততম উইকেট।

সেখান থেকেই ইংল্যান্ডের শেষের শুরু। মালানের প্রস্থানের পরের বলে বাটলার রানআউট। ১৪তম ওভারের প্রথম দুই বলে টি ২০ হয়ে গেল হিচককীয় ঘরানার সাসপেন্স ও থ্রিলারে ভরপুর রুদ্ধশ্বাস সিনেমা। টুইস্টও বলতে পারেন। বাঁকবদলের নাটকীয়তায় ১৫৯ তাড়া করতে নামা ইংল্যান্ড ১৩ ওভার শেষে ১০০/১-এ যখন, তখন কেউ কি ভেবেছিল ১৪২/৬-এ ভেঙে পড়বে তাদের স্বপ্নের সৌধ!

বাটলারদের কল্পনায় কি ছিল যে, আলোর সঙ্গে ধোঁয়াও ওঠে দীপ থেকে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ঘুণাক্ষরে কি টের পেয়েছিল যে, পাঁচ ওভারে ২৮ রানের ব্যবধানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে তাদের পৃথিবী ধূসর হয়ে উঠবে। আর তাতে প্রয়োজনীয় রানরেট আট থেকে বেড়ে প্রতি ওভারে ১২তে গিয়ে দাঁড়াবে!

মালান ও বাটলার যতক্ষণ বাইশ গজে ছিলেন, ততক্ষণ ম্লান হয়নি ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের দ্রুততম ৯৫ রানের পার্টনারশিপ সফরকারীদের ধবলধোলাই এড়ানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। কিন্তু মোস্তাফিজ তাদের জুটি ভাঙতেই ইংল্যান্ডের ইনিংস ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো।

হোয়াইটওয়াশ বললে কি বাংলাদেশের গরিমার সবটুকু বোঝানো যাবে? সাকিব আল হাসানের নতুন ব্র্যান্ডের টি ২০র কারিশমা কি এতে ঠিকঠাক মতো সংজ্ঞায়িত হবে? কাল মিরপুরে ১৬ রানের জয়ে, ৩-০তে সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার আনন্দে কই তেমন উদ্বেল হতে দেখা গেল না তো নাজমুল, মিরাজদের। যেন তারা জানতেন, এই ফলাফল নিয়তি নির্ধারিত!

আর ইংল্যান্ড? কী লজ্জা তাদের! বঙ্গদেশে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ধবলধোলাই হওয়া ক্রিকেটের জনকদের জন্য লজ্জার নয়তো কী! তিন ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক টি ২০ সিরিজে ইংল্যান্ডের হোয়াইটওয়াশ হওয়ার এটি দ্বিতীয় নজির। ২০১৪ সালে প্রথম এমন লজ্জা তাদের দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

ম্যাচ শেষ হতেই স্কাই স্পোর্টসকে সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইন বলতে কুণ্ঠাবোধ করেননি যে, ‘প্রত্যেক খেলোয়াড় যেমন, তেমনি দল হিসাবেও বাংলাদেশ এই জয়ে গর্ব বোধ করবে। বাংলাদেশ সত্যিই ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছে।’

এর আগে লিটন দাসের নবম টি ২০ ফিফটির হাত ধরে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৫৮ রান স্কোর বোর্ডে জমা করে দুই উইকেটের বিনিয়োগে। এই সংগ্রহের দুই প্রধান জোগানদাতা লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন ৮৪ রানের জুটি গড়েন দ্বিতীয় উইকেটে।

কোনো সন্দেহ নেই যে, এই জুটিই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংসের খুঁটিতে পরিণত হয়। ৫৭ বলে ৭৩ রান (সিরিজে তার প্রথম ফিফটি) করা লিটন নিজেকে হারিয়ে খুঁজে পেলেন ঠিক সময়ে। তারই পুরস্কার পেলেন তিনি ম্যাচসেরা হয়ে। ৩৬ বলে অপরাজিত ৪৭ রান করা নাজমুল হোসেন সিরিজসেরা (তিন ম্যাচে ১৪৪ রান)। আট বছর পর বাংলাদেশ দলে ফেরা রনি তালুকদার ২২ বলে ২৪ করে আদিল রশিদকে ফিরতি ক্যাচ দেন।

শেষ পাঁচ ওভারে ইংলিশ বোলারদের চাপ কাটিয়ে উঠতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। যার ফলশ্রুতিতে এ সময় মাত্র ২৭ রান জমা হয় স্কোর বোর্ডে। ইংল্যান্ডের বোলাররা লড়াই করে ম্যাচে নিজেদের ফিরিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটাররা যোগ-বিয়োগের অঙ্কে বিয়োগটাকেই বেছে নিলেন।

সিরিজে প্রথম টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড প্রথম ওভারেই ফিল সল্টকে হারায়। টি ২০ ডেব্যুতে বাংলাদেশের চতুর্থ স্পিনার হিসাবে বোলিং উদ্বোধন করে শুরুতেই সফলতা পান তানভির ইসলাম। মালান বাংলাদেশ সফর শেষ করেন ৪৭ বলে ৫৩ রান করে।

গত ১ মার্চ প্রথম ওডিআইতে অপরাজিত ১১৪ রান করা ইংলিশ ওপেনার মালান কাল হাফ সেঞ্চুরির পথে ছয়টি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান। বাটলার রান তোলেন দ্রুততার সঙ্গে (৩১ বলে ৪০)। ১৩তম ওভার পর্যন্ত এ দুজনের জুটি পথ দেখাচ্ছিল ইংল্যান্ডকে।

কিন্তু মোস্তাফিজ তার শততম শিকার হিসাবে মালানকে তুলে নেওয়ার পরের বলে বাটলার রানআউট হতেই নিঃস্ব হয়ে যায় ইংল্যান্ড। পয়েন্ট থেকে মেহেদী হাসান মিরাজের সরাসরি থ্রো স্টাম্পে আঘাত করতেই নিজেদের সবচেয়ে নড়বড়ে সংস্করণে বাংলাদেশ পেয়ে যায় সবচেয়ে বড় সাফল্য।

প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : ম্যাচ চলাকালীন কয়েকবার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খেলাপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী দারুণ এক সিরিজ জয়ের পর যে অভিনন্দন জানাবেন এটাই স্বাভাবিক।

ক্রিকেটারদের জন্য মোটা অঙ্কের বোনাস ঘোষণা করবে বিসিবি। অঙ্কটা হতে পারে তিন কোটির মতো। যদিও বিসিবি সভাপতি সরাসরি অঙ্কটা বলতে রাজি হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *