ফিল্টার আছে, নেই ‘নিরাপদ’ পানি

দেশজুড়ে

জুন ১১, ২০২৩ ১:০৬ অপরাহ্ণ

কুবি প্রতিনিধি,

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পাঁচটি আবাসিক হল কিংবা একাডেমিক ভবনে ফিল্টার থাকলেও নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা। আবার কোথাও কোথাও নেই ফিল্টারের ব্যবস্থাও। এমনটাই অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে দুটি ফিল্টার থাকলেও দুটিই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া কাজী নজরুল ইসলাম হল, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হল, শেখ হাসিনা হলে ফিল্টারের ব্যবস্থা নেই। তবে এসব হলগুলোতে খাবারের পানির জন্য আলাদা ট্যাংক করা আছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসব ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে অনেক সময় ময়লা পাওয়া যায় পানি থেকে।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ডাইনিংয়ে ফিল্টারের ব্যবস্থা আগে থেকেই আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় এই হলটিতে শিক্ষার্থীর তুলনায় ফিল্টারের সংখ্যা কম। শুধুমাত্র ডাইনিংয়ে ফিল্টার লাগানো থাকায় উপরের তলায় থাকা শিক্ষার্থীরা ফিল্টার ব্যবহারে তুলনামূলক কম আগ্রহী নীচ তলায় থাকা শিক্ষার্থীদের থেকে।

এ বিষয়ে কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মজুমদার মোহাম্মদ কাইয়ুম বলেন, ‘আমাদের পুরো হলের সব শিক্ষার্থী ৩ তলার ট্যাংক থেকে পানি খাই। কিন্তু এই ট্যাংক পরিষ্কার করে কিনা জানা নেই। কারণ এটা পরিষ্কার করতে কখনো দেখিনি। ফলে আমরা নিরাপদ পানি পান করছি কিনা এটা নিয়ে সন্দিহান!

এই পরিস্থিতিতে আমাদের হলে পানির ফিল্টার প্রয়োজন। এটা আমাদের নিরাপদ পানি পান করার ব্যাপারটি নিশ্চিত করবে। আমাদের প্রতি ফ্লোরে একটি করে ফিল্টার দিলে আমাদের জন্য নিরাপদ পানি পান করা সহজ হবে।’

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মুন্নি ইসলাম বলেন, ‘প্রথমত আমাদের হলে আমরা যে পানি পান করি সেটা ফিল্টারের নয়। ট্যাংক থেকে যে পানি আমরা খাই সেই ট্যাংক আদৌও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় কিনা সেটাও আমরা জানি না। একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে পানির সাথে প্রায় সময় গুঁড়িগুঁড়ি ময়লা দেখা যায়। আবার পানির বেসিনগুলোতেও মাঝে মাঝে কেঁচো চোখে পড়ে।”

এ নিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রভোস্ট জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মেয়েদের জন্য আলাদা একটা ট্যাংকে খাবার পানি রাখা হয়। তারা সেখান থেকে নিয়ে পানি পান করে। সেই জায়গা থেকে ফিল্টার ব্যবহারের প্রয়োজন দেখছি না। কিছুদিন পরপর সেই ট্যাংক পরিষ্কার করানো হয়।’

পানিতে ময়লার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যপারটি আমিও শুনেছি। ট্যাংক ও পাইপ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা হবে। আর সামনে হল কতৃপক্ষের মিটিং এ নিরাপদ পানির ফিল্টারের বিষয়টি আমি বলবো।’

শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা শান্তা বলেন, ‘রমজানের ঈদের পর থেকে খাবার পানি থেকে গন্ধ পাচ্ছি। বোতল পরিবর্তন করার পরও গন্ধ আছে, বালিও জমে বোতলের তলানিতে। নতুন হল অথচ পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হয় নি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ব।’

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট মো. সাহেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হলে ডেডিকেটেড একটা মোটর ও একটা ট্যাংক আছে শিক্ষার্থীদের সুপেয় পানির জন্য। টিউবওয়েলের মতো নিচের পানি উঠাচ্ছে, সেই পানিটা খাচ্ছে তবে সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলে হয়ত ময়লা জমতে পারে।’

হলে ফিল্টারের ব্যবস্থা করা হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটা হলে এতগুলো ফিল্টার দেয়ার তো সুযোগ নাই। আমরা মেয়েদের সাথে কথা বলে এটার একটা পারমানেন্ট সল্যুশনের দিকে গিয়েছি।’

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাবমারসিবল পাম্প থেকে আলাদা দুইটি খাবার পানির লাইন রাখা হয়েছে। ৫০০ লিটারের একটি টাংকি বসানো হয়েছে। সোম, মঙ্গলবারের মধ্যে ছাত্ররা সেখান থেকে পানি পাবে।’

বঙ্গবন্ধু হলে পর্যাপ্ত ফিল্টারের ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে হলটির প্রাধ্যক্ষ ড. মোঃ মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, ‘হলে ফিল্টার দেওয়ার ব্যাপারটি হল কতৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছে । তবে সে বিষয়ে তারা(প্রসাশন) এখনও কিছু জানায়নি।’

একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোতে। অনুষদের প্রতিটি তলায় দুটো করে ফিল্টারের ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ ফিল্টারে জমে আছে শ‍্যাওলা।

এ ব্যাপারে প্রত্নতত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো.সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের এখানে যে ফিল্টারটি আছে সেটা অনেক আগের। আমরা ঈদের পর ফিল্টারগুলো চেইঞ্জ করেছি। কিন্তু ছাদের ট্যাংকিটাই অপরিষ্কার। ফলে কয়েকদিনের মধ্যে আবার ময়লা হয়ে যায়।’

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি চীফ মেডিক্যাল অফিসার মাহমুদুল হাসান খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে হল, হল ও অনুষদগুলোতে ফিল্টারের ব্যবস্থা করা উচিত। তাছাড়া ট্যাংক থেকে পানি পান করার ক্ষেত্রে পানিতে ফিটকারী ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে কয়েকদিন পরপর ট্যাংকগুলো পরিষ্কার করা উচিত।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোহা: হাবিবুর রহমান বলেন, এটা বিভাগগুলো দেখবে। কারন বিভাগের ফিল্টারের পানি তো বিভাগের সকলেই খাচ্ছে। এক্ষেত্রে সমস্যা সকলের। আমি ১৯ টি বিভাগের ছাত্র পরামর্শককে অবহিত করবো এ ব্যাপারে। তারা বিভাগের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *