কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেয়েছেন এক সময়ের বিদ্রোহী নেতা ও বর্তমান আইনপ্রণেতা গুস্তাভো পেত্রো। এর মধ্যদিয়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির প্রথম বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি। খবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের।
রোববার (১৯ জুন) কলম্বিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল নেতা ও ধনকুবের রোডলফো হার্নান্দেজের কয়েক দশকের দুর্নীতি ও বৈষম্যের রাজনীতিকে ছুড়ে ফেলেছে জনগণ।
কলম্বিয়ার নির্বাচন নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রাথমিক তথ্য মতে, নির্বাচনে ৫০.৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন পেত্রো। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হার্নান্দেজ পেয়েছেন ৪৭.২৬ শতাংশ ভোট। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন কলম্বিয়ার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চিত্রই বদলে দিতে যাচ্ছে।
নির্বাচনে পেত্রোর রানিংমেট ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ নারী রাজনীতিক ফ্রান্সিয়া মার্কেজ। জয়ের মধ্যদিয়ে কলম্বিয়ার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হয় গত মাসে। এতে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় ধাপের লড়াইয়ে নামেন পেত্রো ও হার্নান্দেজ। তাদের এ সফলতা কলম্বিয়ার রাজনৈতিক এলিটদের বিরুদ্ধে বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়ী পেত্রো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইভান ডিউকের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
কলম্বিয়া লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশটি বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও বৈষম্য মোকাবিলা করছে। অন্যদিকে বর্তমানে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ফার্ক গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে প্রায় অর্ধ শতাব্দীকালের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
রাজধানী বোগোটার সাবেক মেয়র পেত্রো বর্তমানে নিষ্ক্রিয় এম-১৯ বিদ্রোহী দলের যোদ্ধা ছিলেন। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইস্তেহারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ, পেনশন সংস্কার ও অনুৎপাদনশীল জমির ওপর উচ্চ কর আরোপসহ নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে অসাম্যর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নতুন তেল ও গ্যাসের খনি অনুসন্ধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে অসমতা দূর করতে মিনিস্ট্রি অব ইকুয়ালিটি তথা সমতা মন্ত্রণালয় গঠনের প্রতিশ্রুতিও দেন পেত্রো ও তার রানিংমেট মার্কেজ। যার নেতৃত্বে থাকবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মার্কেজ। কলম্বিয়ার জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত তথা কৃষ্ণাঙ্গ। কিন্তু তারা ঐতিহাসিকভাবে নিপীড়িত ও বঞ্চিত। এবার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে জনগণের উদ্দেশে বিজয়ী ভাষণ দিয়েছেন পেত্রো। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেছেন, আজ কলম্বিয়ার জনগণের আনন্দের দিন। আসুন, জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের প্রথম জয়টা উদ্যাপন করি।